ফেসবুক ভয়েস : এই পোস্টের ছবিটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত, এটা কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকে বেশ ভাইরাল আর এটাই এখানে আলোচনার জন্য প্রতিপাদ্য বিষয়।
লক্ষ্য করুন, এই পোস্টের ছবি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যে কথাটির তার মূল দর্শন হচ্ছে, লেখক এতোদিন পরে আবিষ্কার করেছেন, ভারতের কাছ থেকে খাদ্যদ্রব্য কিনে আমরা ভারতকে অপরিসীম উপকার করছি যা করাটা ১৬ বছরের অপর একটি আওয়ামী কারসাজি এবং তিনি আরোও ধরে ফেলেছেন যে আওয়ামী সরকার অনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই এতোকাল ধরে জাতির সাথে চরম বেঈমানি করেছে অযথাই কেবলমাত্র ভারত থেকে এসব খাদ্যদ্রব্য আমদানি করে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এই লেখার জনক শিক্ষিত মানুষটি কি আসলেই ঠিক বললেন? তিনি নিজেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত নয়তো?
কথা হচ্ছে, বিদেশ থেকে না কিনলেও চলতো কেননা নিজেরাই উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ -এমনটা যদি হোতো তবে না হয় এক কথা ছিলো কিন্তু তা নয় এবং লেখকও একথা বলেন নি। অপরদিকে আলোচ্য কথাটি খাদ্যদ্রব্য সংক্রান্ত এবং যেহেতু খাদ্য তাই তা পর্যাপ্ত পরিমাণ না হলেও তো কোনো উপায় নাই, যা না হলেই নয়, লাগবেই, তা সে আপনি যেখান থেকেই এনে সরবরাহ করুন না কেনো, যেভাবেই হোক, করতেই হবে তাই না?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ ওইসব খাদ্যদ্রব্য ভারত থেকে না কিনে এনে বিকল্প দেশ হিসেবে অন্য কোন দেশটাকে বেছে নিতে পারতো? আর ভারত ছাড়া অন্যকোথাও থেকে কিনলে কি এদেশের মানুষের জন্য অপেক্ষাকৃত অধিক লাভজনক হোতো?
এখানে আরোও একটি কথা বলার মতো আছে এবং তা হচ্ছে, বাংলাদেশ শুধুমাত্র গত ১৬ বছর ধরেই নয় বরং স্বাধীন হবার পর থেকে গত প্রায় ৫৪ বছর ধরেই ভারত থেকে প্রায় শ’দুয়েক পণ্য কিনে এনে চলে যা প্রায় সবাই জানেন কিন্তু ছবির ওই লেখার কারিগর এই কথাটা চেপে গিয়ে কেবলমাত্র সেই ১৬টি বছরের কথা উল্লেখ করেছেন, যে ১৬ বছর এদেশে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় ছিলো। তাহলে লেখক কেনো ৫৪ বছরের কথা না বলে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের কথাটাই বললেন? আশা করি এই প্রশ্নটা করাটা নিতান্তই ভোদাইয়ের কাজ হবে বিধায় কেউ করবেন না, সবাই জানেন যে এরা শুধু আওয়ামী লীগ নয় এরা জন্ম থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের জাত শক্র, এরা বাপদাদার আমল থেকেই চাইতো যে এটা পুর্ব পাকিস্তান থাকবে, ওই পাকিস্তান থেকে এসে পাকিস্তানিরা দেশের আনাচে-কানাচে রাহাজানি চালাবে, বাঙালীরা কষ্ট করে গবাদি পশু লালনপালন করে স্বযত্নে দুধ পানিয়ে আনবে আর তারা থাবা দিয়ে সেই দুধের ক্রিমটুকু কেড়ে নিয়ে যাবে, যারা প্রকৃত মালিক সেই বাঙালীর জন্য রেখে যাবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর অবস্থা…
যেকথা বলছিলাম, যে দেশের সীমান্তের তিনদিক জুড়েই প্রায় ভারত বাকি একদিকে রয়েছে সমুদ্র সেই বাংলাদেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে যদি কিছু বাধ্যতামূলক ভাবে আমদানি করতেই হয়, তবে তা কোন দেশ থেকে করলে সবচেয়ে বেশী লাভজনক হবে? ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, আফ্রিকা কিম্বা মধ্যপ্রাচ্যের কথা বলা মানে সরাসরি মূর্খতার সামিল, তাছাড়াও তাদের প্রিয় পাকিস্তানের কথাও এমনিতেই বাদ কারণ তাদের নিজেদেরই হাল জঘন্য, নিজেরাই ক্ষুধার্ত, তারা নাশকতা আর অবৈধ অস্ত্র ও মাদকে সমৃদ্ধ ফলে তারা আবার কোন ঘোড়ার ডিম রপ্তানি করবে? তাছাড়া কে? চীন!? কিন্তু ট্রান্সপোর্ট কষ্ট!? কি? নাকি আপনাআপনি হাওয়ায় ভেসে ভেসে ফ্রিতে চীন টু বাংলাদেশে চলে আসতো? তাই বুঝি!?
আর অস্বীকার করতে পারবেন না যে ভারত ছাড়া পৃথিবীর যেখান থেকেই আমদানি করুক না কেন পণ্য পরিবহন বাবদ বেশ ভালো পরিমাণের একটা এমাউন্ট গোনার কোনো বিকল্প নাই এবং সেই টাকাটাও অবশেষে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্যের বিক্রি মূল্যের সাথে যুক্ত করে অপেক্ষাকৃত বেশী দামে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে বিক্রি হোতোই, নাকি? তাছাড়াও ভারতই যেহেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছাকাছি দেশ এবং তারা সেলাই করার সুঁই থেকে মহাকাশে যাবার নভোযান পর্যন্ত তৈরি করে, ওদিকে পৃথিবীর এমন কোন দেশ নাই যেদেশে ভারতের কোন না কোন পণ্য আমদানি করা হয়না, তাই আমদানি যেহেতু করতেই হবে তাহলে বাংলাদেশ তার সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার ওপাড়ের ভারত থেকেই নামকাওয়াস্তে ট্রান্সপোর্ট কষ্ট দিয়ে কেনো আমদানি করবে না? এদেশের পরিচালক ও পরিকল্পনাকারীরা কি সাধারণ মানুষের শক্র? নয়তো তারা কেনো অযথাই পরিবহন খরচ বাবদ আধিক টাকা খরচ করে দূর থেকে পণ্য আমদানি করার পরে পণ্য মূল্যের সাথে খরচ হওয়া সেই মোটা অংকের পরিবহন ব্যায় যোগ করে বেশী দামে পণ্য সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করার আয়োজন করবে?
এমতাবস্থায় আপনাদের সকলের কাছে আহ্বান জানাই, প্লিজ আপনারাই সমাধান দেন, ভারত থেকে না কিনে কোথা থেকে কিনলে আমাদের অনেক বেশী লাভ হোতো? কিভাবে? একটু বলেন প্লিজ।
তাছাড়াও আমি মনে করি, আমরা না কিনলে ভারতের কি হোতো না হোতো সেটা আমাদের জন্য দ্রষ্টব্য বিষয় নয় এবং তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, আমরা একটা ধনী দেশ না তাই অধিক পরিমাণের অর্থ পরিবহন বাবদ খরচ করার পরে তা যোগ করার ফলে পণ্যের মূল্য যদি আরোও বেশী হোতো তবে কেমন হতো তো? হয়তো তা কিনতে গিয়ে অর্থনৈতিক সমর্থ যথেষ্ট কিন্তু না কিনেও উপায় নাই কারণ খাদ্যদ্রব্য বলে কথা। হয়তো তখন ক্ষুধা নিবারণের জন্য কারো কারো দেহটাও সপে দিতে হোতো দোকানী অথবা চরিহীনদের হাতে, কেননা না খেয়ে তো কোনো উপায় নাই, নাকি?
তাহলে আসলে কি হোলো? ফেসবুকের এই ভাইরাল হওয়া আজব-গজব কথাটা পোস্ট করার কি মানে ও উদ্দেশ্য!?
বিষয়টা হচ্ছে, ইদানিং কালে এদেশে বিকৃত মানসিকতার কিছু জাতির শক্র কুশিক্ষিত লোকজন পয়দা হয়েছে! তারা তাদের মতলবের প্রয়োজনে কতোটা মারাত্মক প্রতারণা আর ধুনপুন করতে পারে, এটা তার আরোও একটি উদাহরণ। আসল কথা হচ্ছে, আমরা এদেশের মানুষ যা কিছু খেয়ে বেঁচে থাকি, তন্মধ্যে যেসব কিছু বিদেশ থেকে কিনে এনে খেতে হয় তা কিভাবে কোথা থেকে কিনে এনে ভোক্তাদের হাতে কতো কম দামে পৌঁছে দেয়া যায়, -এনিয়ে তাদের ভাবার জন্য বিন্দুমাত্র সময় নাই।
ভাবুন তো কেমন মানুষ হলে কেউ এমন করে নিজেদের কথা বাদ দিয়ে অন্যের লাভক্ষতির পরিমাণ কতো কি শুধু তাই নিয়ে ভাবে!?
আমাদের প্রশ্ন, এমতাবস্থায় এই পোস্টের ছবি হিসেবে ব্যবহার করা লেখাটা লিখে ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন যিনি এবং যারা তা কপি পেস্ট করে শেয়ার করছেন তাদের চেয়ে ভয়ঙ্কর নরখাদক মানসিকতার কোনো লোক কি পৃথিবীর আরোও কোনো দেশে থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন!?