ফেসবুক ভয়েস : প্রশ্নটি করার অনেক কারণ ও উদাহরণ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে একের পর এক দেশের চিহ্নিত শক্রদের জেল মুক্ত করে বাইরে নিয়ে আসা হয়েছে, অগণিত মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে, ফলে অপরাধীরা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়ে আবার শুরু করেছে অপরাধ সংঘটিত করতে সবকিছু গুছিয়ে নেয়ার কর্মসূচি কিম্বা দশট্রাক অস্ত্র বা ২১শে আগষ্টের গ্ৰেনেট হামলার মতো জলজ্যান্ত মারাত্মক অপরাধগুলো মুছে ফেলার চলছে অপচেষ্টা। তাই এই প্রশ্ন, আর যদি তাই না হয় তবে বাবররা কি করে মুক্তি পায়?
স্বাধীনতার পরে প্রথমবার শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ১৯৭২ সালে এক সরকারি অধ্যাদেশ জারি করে মুক্তিযুদ্ধকালের সব কর্মকাণ্ড, ঘটনাবলি এবং যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিশেষদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়। এবিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সংসদে স্বীকার করেন যে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি নাগাদ কৃত কার্যকলাপের দায়মুক্তি দিয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৩১শে জানুয়ারি পর্যন্ত ‘মুক্তিযোদ্ধাদের’ ‘ইমিউনিটি’ বা দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ তাঁদের দ্বারা সংঘটিত কোনো কিছু ‘অপরাধ’ হিসেবে দেখা হবে না। ফলে সেবার এদেশে থাকা ‘বিহারিদের বাড়ি-দোকান দখল জায়েজ হয়ে যায়। তথ্য মতে, সেবছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মতিঝিলে শেখ ফজলুল হক মনি উর্দু দৈনিক পাসবান-এর অফিস ও প্রেস দখল করে দায়মুক্তি পেয়ে যান। সেখান থেকে তিনি বাংলার বাণী পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকেন।
দ্বিতীয়বার ৬ই মে ১৯৭৪ জাতীয় রক্ষীবাহিনীকে দায়মুক্তি দিয়ে অনুরূপ অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। তখন যেহেতু বাংলাদেশে সংসদ অধিবেশনের প্রচলন ছিল না, সেক্ষেত্রে শেখ মুজিবের একজন ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী খন্দকার মোশতাক আহমেদ রাষ্ট্রপতি বনে যান এবং তার কর্তৃক একটি অধ্যাদেশের আকারে ২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ সালে এ আইনটি প্রণীত হয়। এবং শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পর তিনিই দেশটির রাষ্ট্রপতি হন। এটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০ নামে অভিহিত ছিল। উল্লেখ্য যে এটা ছিল তৃতীয়বার বাংলাদেশে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। পরে ১৯৭৯ সালে সংসদ কর্তৃক এটির অফিসিয়ালি অনুমোদন করা হয়, যার ফলে এটি একটি আনুষ্ঠানিক আইন হিসেবে অনুমোদন পায়। ১৯৭৯ সালের ৯ই জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর সংশোধিত আইনে এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০০১-২০০৪ সালে চারদলীয় জোট সরকার ‘অপারেশন ক্লিন হার্টকে দায়মুক্তি দিয়ে আরেকটি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। এটি ছিলো চতুর্থ বারের মতো বাংলাদেশে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ কার্যকর করা।
এরপর ২০০৯ সালে চৌদ্দ দলীয় জোট সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাতাদের একধরনের দায়মুক্তি দেন। ‘দ্রুত বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ আইন’-এর আওতায় টেন্ডার ছাড়াই প্রকল্প অনুমোদন দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে অনেকগুলো কুইক রেন্টাল ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প।
এবার আবার প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক ২০২৪ সালে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তরুণদের কর্মকাণ্ডকে একধরনের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারী পক্ষ বলছে, এ সময়ে ঘটে যাওয়া ধ্বংসাত্মক কাজগুলোর দায় তারা নেবে না। যেমন মেট্রোস্টেশন পোড়ানো, থানায় আগুন দিয়ে পুলিশ মারা ইত্যাদি। বলা হচ্ছে, এসব হলো ‘মব ভায়োলেন্স’, যার জন্য আন্দোলনকারীরা দায়ী নন। অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত পক্ষ বলছে, আন্দোলনের ফলেই ‘মব ভায়োলেন্স’ সংঘটিত হয়েছে। তারা বারবার পুলিশ হত্যার উদাহরণ টানছে। আন্দোলনকারীদের দায়মুক্তি দেওয়ার সমালোচনা করছে তারা। এটা কি করে সম্ভব হয়? তবে কি তলে তলে দেশে পঞ্চম বারের মতো ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে? তথা আবারও কি এদেশে দায়মুক্তি পেলো জঘন্যতম অপরাধ কর্মকাণ্ড?
উল্লেখ্য যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ১৯৯৬ সালের ১২ই নভেম্বর প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবার পরে সপ্তম জাতীয় সংসদে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করেন। যা শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের বিচারের পথ প্রশস্ত করে, এমনকি এছাড়া ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা সম্ভব ছিলো না। পরে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ হাইকোর্ট। এবারের এই নাশকতা মূলক কর্মকান্ড ও হত্যাযজ্ঞকেও জায়েজ করতে কি এদেশে ৫ম বারের মতো ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হোলো? আর এই অধ্যাদেশের বদৌলতেই কি ২১শে আগষ্টের গ্ৰেনেট হামলার মতো মারাত্মক মারাত্মক আরও অনেক অপরাধকে ‘অপরাধ নয়’ বলে গণ্য করার সুযোগ হয়েছে? তারপর…
(কিছু সুত্রঃ)
সাদ্দাম হোসেনের লিংকঃ
https://www.facebook.com/share/1B44825VMU/
যমুনা টিভির নিউজ লিংকঃ
https://www.facebook.com/share/v/1BdKLDSzcq/
বিবিসি নিউজ লিংকঃ
https://getsnap.link/FPAVg18EzyM?share_arg3=copy%20link