FB IMG 1735852950984

ফেসবুক ভয়েস : সেনাপ্রধানের এই কথার সাথে আমরাও সম্পুর্ন একমত পোষন করে বলতে চাই, ঢাকা-দিল্লীকে জড়িয়ে ইদানিং যেসব চাটুকারিতা চলছে ওসব আসলে শুধুই রাজনৈতিক কথার কথা, সাধারণ মানুষের সাথে নেতাদের একধরনের প্রতারণামূলক খেলা। আর সাধারণ মানুষের সাথে এসব আজেবাজে খেলা অনুন্নত মানসিকতা সম্পন্ন নেতারা ছাড়া কেউ খেলে না। পৃথিবীর কোন উন্নত জাতির উন্নত মানসিকতা সম্পন্ন নেতা তার রাজনৈতিক যুদ্ধে ভুলেও কখনও এমন কোনো কথা বলতে নারাজ যা পরবর্তীতে বিতর্কিত হয় সাধারণ মানুষের মধ্যেই কিন্তু দুঃখজনক বিষয় আমাদের দেশের নেতৃত্বদানকারীদের চরিত্রগুলো ঠিক এর উল্টো!

উল্লেখ্য যে আমাদের দেশে একসময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, ‘আমরা এদেশের মানুষ বাঙালী না বাংলাদেশী’ -এহেনো অর্থহীন ছেলেমানুষী কথা নিয়ে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, তখন এই দুই দলের নেতারা এই কথাটিকে নিয়ে এমন এমন বিবৃতি দেয়া চালু করেছিলেন যে তাদের সেইসব কথা শুনে সারা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেই একটা দ্বিধাবিভক্ত জন্ম হয় যা নিয়ে এখন যদিও আর কথা কাটাকাটি হয়না বটে কিন্তু এখনও এদেশের একাংশের মানুষ মনে করেন যে তারা বাঙালী নয় বাংলাদেশী আর অপরাংশের মানুষ মনে করেন যে তারা বাংলাদেশী নয় বাঙ্গালী! এরচেয়েও হতাশাজনক কথা হচ্ছে, যদিও এদেশের শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেতে পেতে অনেক আগেই এমন অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে ঘরে ঘরে শিক্ষিত আর শিক্ষার্থী মিলে কিন্তু তাতে ফয়দা কি হয়েছে!? দেখা গেছে মান হারা শিক্ষা ও শিক্ষিতদের দায়িত্বহীনতার কারণে দেশের সর্বসাধারণের উদ্দেশ্য আজ‌ও কেউ কর্তব্য মনে করে বলেন নি যে আমরা আসলে শুধু বাংলাদেশী বা শুধু বাঙালী নয়, আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দেশের প্রতিটি নাগরিক (জন্মসূত্রে) একেকজন “বাংলাদেশী বাঙালী”। আমরা জাতিগতভাবে বাঙালী এবং আমাদের জাতীয়তাবাদ বাংলাদেশী। আর আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বাঙালীরা হচ্ছেন ভারতীয় বাঙালী, তাদের জাতীয়তাবাদ ভারতীয় এবং জাতিগত ভাবে তারাও বাঙালী।

বস্তুত, পৃথিবীর অদ্বিতীয় বাঙালী জাতির মানুষেগুলো ১৯৪৭ সালের আগে বৃটিশ আমলেও বাংলাদেশী ও ভারতীয় এই দুটি আলাদা আলাদা জাতীয়তাবাদে বিভক্ত ছিলো না। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ বেনিয়ারা যখন সাব কন্টিনেন্ট অফ ইন্ডিয়া শোষণ করা ছেড়ে দিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে যায় তখন তারা বৃটিশদের ইতিহাসের সবচেয়ে নোংরা যে কুকর্মটি করে যায় তার ফলে বাঙালী জাতির মাতৃভূমি বঙ্গদেশটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে একভাগ ভারতের ও অপরভাগ পাকিস্তানের হাতে সোপর্দ করে রেখে যায়। তারপর থেকেই আমরা বাঙালীরা আমাদের মাতৃভূমি সহ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছি। আর এসব কিছুকে যদিও রাজনীতি বলে গণ্য করা হয় কিন্তু আসলে এগুলো অবশ্যই প্রতারণার সামিল।

ঠিক তেমনি ঢাকার উপর দিল্লির কর্তৃত্ব বা ঢাকা দিল্লির তাঁবেদারি করে এহেনো কথাবার্তাগুলোও সৃষ্টি হয়েছে কিছু অনুন্নত মানসিকতা সম্পন্ন রাজনীতিকদের তথাকথিত রাজনৈতিক কথাবার্তার কারণে যা এখন সংক্রামক ব্যাধির মতো সারা দেশের মানুষের মনের মধ্যে ছড়িয়ে পরেছে। ভুল মানুষেরা নেতা হবার উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব মিথ্যা তথ্য ও কথাবার্তাগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করে ছড়িয়ে দিয়ে সকলের মধ্যে একটা ভুল বোঝার অবকাশ তৈরি করে দিয়ে সেই ফাঁকে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে। অথচ বাস্তবে এমন কিছুর কোনো অস্তিত্ব‌ই নেই।

দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশের একালের রাজনীতিকরা তাদের কথাবার্তা, বক্তৃতা, মিছিল, শ্লোগানের মধ্যে বিশেষ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে যাবার পর থেকে ‘ঢাকা আর দিল্লি’ নিয়ে খুব বেশী টানাহেঁচড়া চলছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে যেমন প্রশ্নবিদ্ধ করছে, পাশাপাশি তারা নিজেরাও যে নিজেদের সাধারণ মানুষের কাছে ছোট করে ফেলছেন তা কেউ টেরই পাচ্ছেন না। ফলে এসব বোঝার মতো বোধশক্তি তাদের আদৌও আছে কিনা এনিয়ে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন।

এমতাবস্থায় আমরা সেনাপ্রধানকে এই গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলার জন্য ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা জানাই, কারণ চলমান ঘোলাটে পরিস্থিতিতে তিনি এই জরুরী মতটি প্রকাশ করার মাধ্যমে সারাদেশের মানুষকে জানান দিয়ে দিয়েছেন যে ওসব আসলে দুষ্টু লোকের ছলাকলা, ওসবের মধ্যে কান দিয়ে নিজে নিজেকে হয়রানিতে ফেলার কোনো মানে হয়না। ঢাকা ঢাকাই, দিল্লি দিল্লিই। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সম্পর্কের জোরে আজ শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন বটে কিন্তু তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ভারতের কোন প্রভাব পরছে।

বাংলাদেশ তার নিজ দেশের মানুষের মর্জিতে নিজস্ব ধারাবাহিকতায় চলে, ওদিকে ভারত‌ও তাদের দেশের মানুষের মর্জিতে তাদের নিজস্ব ধারাবাহিকতায় চলে। বাংলাদেশ, ভারত পাশাপাশি অবস্থিত এদুটি রাষ্ট্রের মধ্যে বানিজ্যিক সম্পর্ক আছে, সেই সাথে দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের‌ও কোনো প্রকার কমতি নেই এবং এই দুই দেশের মানুষ ও নেতারা কখনো কোনো কালেই এমন কিছু করেন নি যে তার ফলে এই দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক ও বিশ্বস্ততার কোনো প্রকারের ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে।

ইদানিং দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন রাজনীতিবিদ আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাকবিতন্ডার মধ্যে ঢাকা এবং দিল্লিকে জড়িয়ে আনাপসানাপ ভিত্তিহীন কথা বলে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে অনৈতিক ফয়দা হাসিলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু বাস্তবে এসব কোনোকিছুর কোন অস্তিত্ব‌ই নেই।

বাংলাদেশ বাংলাদেশ‌ই, ভারত ভার‌ত‌ই, এখানে কারো বিষয়ে কারো কোন প্রকারের‌ই আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অস্তিত্ব নেই।

তাছাড়া দেখা যায়, যারা ঢাকা ও দিল্লিকে জড়িয়ে জনগণের প্রতি হয়রানি মূলক কথাবার্তা ছুঁড়ে দেন বক্তৃতা, মিছিল ও শ্লোগানে, সেই তারাও আবার সময় মতো ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলতেও এক মুহুর্ত সময় নেয় না, শুধু দেশের মানুষের মধ্যে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই তারা ঢাকার সাথে দিল্লিকে জড়িয়ে থাকে, অন্যকিছু নয়, অত‌এব সেনাপ্রধান‌ই ঠিক…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *