মঞ্জুর মোর্শেদ : বিশেষ করে গত ৩৫ বছরের বাংলাদেশের মানুষ যারা বড়ো হয়েছে, অর্থাৎ লেখাপড়া করে বিভিন্ন পেশায় ভালো অবস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে তাদের নিয়ে ইদানিং জাতি যেনো একটা ভীষণ বিপদে আছে! এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ‘এরা বেয়াদব’, আর এদের দেখাদেখি এদেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেয়াদব থেকে অধিকতর বেয়াদবে পরিনত হচ্ছে আশা করি একথায় কারো ভিন্নমত নাই।
দেখা গেছে গত ৩৫ বছরের নারী শাসনামলের বাংলাদেশে একশ্রেণীর শিক্ষিত লোকজন গড়ে উঠেছে যারা ক্রমান্বয়ে ঘরেবাইরে নারীর আঁচলের তলায় থেকেই এতোকাল জীবন কাটিয়েছেন। আর খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার গত ৩৫ বছরের লাগাতার শাসনামলের মধ্যে শেষের দিকের শেখ হাসিনার (লাগাতার) প্রায় ১৭ বছর শাসনামলে তো রীতিমতো নপুংশকের মতো বেঁচে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে ঘটনাক্রমে প্রতিবাদের নামে এরা কপালে টিপ পরেও নিজেদের পুরুষ জনমের মুখে নিজেরাই অদৃশ্য থুথু ছুঁড়ে মারতেও কুণ্ঠা বোধ করে নাই! এছাড়াও এই দুই নারীর শাসনামলের ফলে ন্যায্যকথা বলা, প্রতিবাদ করা যেনো ঠাকুরমার ঝুলির গল্পের মতো কোনো একটা কথা হয়ে গিয়েছে কিন্তু এবার ৫ আগষ্টের পর থেকে হঠাৎ যেনো কিছু লোকের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে যারা তথাকথিত শিক্ষিত লোক বলে গণ্য, এরা কেমন জানি একে একে যেনো আকাশ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা শুরু করে দিলো! যেনো এরা নিজেদের পুরুষ বলে জাহির করতে গিয়ে হুঙ্কার দিয়ে কথা বলতে শুরু করে দিলো, এমনকি এমন এমন ভাষা ও আচরণ শুরু করে দিলো যা দেখে তাদেরকে অসভ্য বলা ছাড়া কোন উপায় নেই!
সবাই দেখতে পেলেন যে একজন মানুষ নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে, রবিন্দ্রনাথের বাবাকে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করে প্রকাশ্যে যোগাযোগ মাধ্যমে! অথচ কেউ কিচ্ছুই বলে না! ওদিকে আরেকজন নিজেকে এডভোকেট পরিচয় দিয়ে ক্যাডার সার্ভিসের ভদ্রলোক বিচারকদের সমাজের নিকৃষ্টতম বলে আখ্যায়িত করে, সে ১৬ই ডিসেম্বর মানে না, আঙ্গুল উঁচিয়ে এমন ভাবে সে কথা বলে ক্যামেরার সামনেই যে যেনো এই মহাবীর ফুঁ দিলেই উড়ে যাবে আশেপাশের সবাই! এছাড়াও কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, এদেশের একদল সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা এখনও কেউই পরিপূর্ণ মানুষের সনদ লাভ করে নাই সেই তারাও দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের গালিগালাজ করতে করতে মহামান্য প্রেসিডেন্টকেও ছাড়ে না! রাস্তাঘাটে মুরুব্বিদের ধরে মারপিট করে, কান ধরিয়ে উঠবস করায়! তারাই যেনো এদেশের আইনশৃঙ্খলা আর এসব কিছু দেখে পৃথিবীর সকল সভ্যতা লজ্জায় মূর্ছনা যায়, মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে অপমানে!
আমরা হতবাক হয়ে দেখলাম যে একজন লোক সে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হয়ে প্রথমেই বলে উঠলেন যে ২৪ সালে এসে নারীদের হিজাবের আবার কি দরকার! বলতে পারেন এই লোকটাকে কি করা দরকার!?
দেশের সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের মধ্যে কিছু কিছু শিক্ষিত লোকজন শেখ হাসিনা বিদায় হবার সাথে সাথেই যেনো “হঠাৎ লায়েক” হয়ে গেলেন! এতোদিন কিন্তু এদের টিকিটির সন্ধানও মিলে নাই! আর এরা শিক্ষিত হবার পরেও হঠাৎ করেই এমন এমন আচরণ শুরু করে দিলো যে এরা যেনো সমাজের শিশু-কিশোর ও যুবসমাজের জন্য একটা মানসিক ব্যাধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে! কেননা এদের দেখাদেখি ছেলেমেয়েরা চরম বেয়াদব হওয়া শুরু করে দিয়েছে, এখন প্রায় সবাই বেয়াদবি ও আচরণ বিধি লঙ্ঘন বলে যা কিছু আছে তার সবকিছুকেই যেনো বৈধতা দিয়ে ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। এরা সদাসর্বদা দেশের আইনশৃঙ্খলা, জাতি ও সভ্যতার রীতিরেওয়াজ, ধর্মের বিধিবিধান এসব কিছুর পশ্চাৎদেশে লাথি মেরে চলে!
লক্ষ্য করেন, এই পোস্টের কথটা শুনেন! শোনেন একজন লোক নিজেকে আইন বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে, দেশের অভিভাবকের ভূমিকায় অভিনয় করতে গিয়ে কেমন করে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকেও অবমাননা করে কথা বলে! অথচ মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সন্মান প্রদর্শন করা সংবিধানের একটি অন্যতম আদেশ!
লক্ষ্য করেন হঠাৎ কোথা থেকে উড়ে এসে কিভাবে কথা বলে এরা! ভিডিওতে যে লোকটা সংবিধান নিয়ে কথা বলছেন সে কথা বলতে গিয়েই সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপতিকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন না করে কথা বলে! তাহলে কি বলতে হয় না যে এই লোক যে জাহাজ মার্কা আলকাতরাই হোক তার কথার কি দুই পয়সা দাম নাই, এসব কথার উদ্দেশ্য মহৎ বলে গণ্য করা উচিৎ নয়!
সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে, ‘চোর ভালো কিন্তু বেয়াদব ভালো না’। কারণ চুরির অভ্যাস বাদ দিতে পারলেই চোর রক্ষা পেতে পারে কিন্তু স্বভাব যায়না মরলেও এবং বেয়াদবি একটা মারাত্মক বাজে স্বভাব। এভাবে একজন মহামান্য প্রেসিডেন্টের নাম উচ্চারণ করে লোকটা যে রাষ্ট্রদ্রোহীতা করছেন তাই নয়, তাদের মতো শিক্ষিতদের ওসব অসভ্য আচরণের কারণে এদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মও কেনো বেয়াদব আর অসভ্য হবে না, বলতে পারেন?
তাছাড়া নতুন প্রজন্মের সন্তানরা হচ্ছেও তো বেয়াদব! চারিদিকে এখন হঠাৎ “বেডা” হয়ে যাওয়া তথাকথিত শিক্ষিত বেয়াদবেরই ছড়াছড়ি! এখন এদেশে কাউকে ইজ্জত করাটাই যেনো একটি অপরাধ বলে গণ্য!
একটি সংগৃহীত ভিডিওঃ