prothomalo bangla 2024 12 30 thuk22or Sarjis Press

নিজস্ব প্রতিবেদক : সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে।

‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ নয়, মঙ্গলবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচি পালন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছে তারা।

মঙ্গলবারের কর্মসূচি তুলে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেছেন, ‘আজ ৩১শে ডিসেম্বর, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে “মার্চ ফর ইউনিটি” কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান, আপনারা যে উদ্দীপনায় সংগঠিত হয়েছেন, তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা গত রোববার সংবাদ সম্মেলন করে জানান, তাঁরা মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেবেন। সংগঠনের নেতারা ঘোষণাপত্রে দুটি মৌলিক বিষয়ের উল্লেখ করেন। তাতে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর ‘কবর’ রচনা করা এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করার কথা থাকবে।

এই ঘোষণাপত্র নিয়ে বিএনপিসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো স্পষ্ট কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এ বিষয়ে দলগুলোর কারও কারও মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তারা মনে করছে, ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। তা না করে হঠাৎ কোনো ঘোষণা বিভাজন তৈরি করবে। তবে কোনো কোনো দল ছাত্রদের ওই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন জানায়।

এ নিয়ে দিনভর রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার মধ্যে রাত পৌনে নয়টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে জরুরি প্রেস ব্রিফ করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমতে৵র ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।

সরকারের এ ঘোষণার পর মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে রাজধানীর বাংলামোটরে বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।

বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। প্রথমে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় শহীদ মিনারে ঘোষণাপত্রটি আসার কথা ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তার জায়গা থেকে পুরো বাংলাদেশকে একটি ঐক্যবদ্ধ জায়গায় এনে অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সকলকে সম্পৃক্ত করে ঘোষণাপত্রটি দেওয়া উচিত বলে অনুভব করেছে।

সারজিস বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে আমাদের যে জিনিসটি মনে হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের চেয়ে রাষ্ট্র যখন, অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্বটি নিয়ে নেয়, আমরা আমাদের জায়গা থেকে এ বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই।’

পরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল মঙ্গলবারের কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত জন-আকাঙ্ক্ষা তথা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েমের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ এক ঐতিহাসিক পটভূমিতে আবির্ভূত হয়েছে। হাজারো শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি ও জন-আকাঙ্ক্ষার দলিলস্বরূপ জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র অত্যাবশ্যক ছিল। এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের ঐতিহাসিক দায় জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর বর্তায়।’

আরিফ সোহেল বলেন, ‘নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার পক্ষে এই ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রের প্রণয়ন ও ঘোষণার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলাম। আমাদের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ও ইতিবাচক সাড়া সঞ্চারিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ছাত্র-জনতার আহ্বানে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতা এই সময়পোযোগী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে।’

এর আগে রাত পৌনে একটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক দলিল যাতে আমরা উপস্থাপন না করতে পারি, সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এটির ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। এটা আমাদের প্রাথমিক বিজয়।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ঘোষণাপত্র নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্রে পেরেক মেরে দিয়েছে আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার। তারা বলেছে, সরকারের জায়গা থেকে ঘোষণাপত্র দেওয়া হবে।’

জনগণকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আমরা পূর্ববর্তী যে কর্মসূচি দিয়েছি, আমরা বিপ্লবীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একত্রিত হব। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র আসবে, কিন্তু তাই বলে আমাদের একত্রিত হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে না। আগামীকাল শহীদ মিনারে আহত থেকে শুরু করে শহীদ পরিবার এবং ঢাকা শহরের মা ও বোনেরা যেভাবে ৫ আগস্ট রাজপথে নেমে এসেছিল, সেভাবে প্রোক্লেমেশনের পক্ষে রাজপথে নেমে আসবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *