নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটের লালাখাল নদী থেকে অবৈধভাবে যেমন বালু উত্তোলনের আনন্দমেলা চলছে তেমনি তার উপর ভিত্তি করে চাঁদাবাজি থামছে না কিছুতেই! এদিকে প্রশাসনের ভূমিকা দেখে সাধারণ মানুষ কটাক্ষের সুরে বলেন, “তাদের কি!? তারা তো ঘুমে চা খায়!” এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান যে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করলেও বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য কমছে না। এদিকে এই বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে নিউজ প্রকাশের জের ধরে স্থানীয় এক সাংবাদিকের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন জনৈক শ্রমিক নেতা।
খবরে প্রকাশ, বালু উত্তোলনের ছবি তোলা ও ভিডিও করার কারণে উপজেলার সারীঘাট বারকি শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি আমির আলী সাংবাদিককে কঠিন ভাষায় হুমকি দেন। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে গত শনিবার রাতে জৈন্তাপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক একাত্তরের কথার জৈন্তাপুর প্রতিনিধি নাজমুল ইসলাম।
জানা যায়, সাংবাদিক নাজমুলকে মোবাইল ফোনে হুমকির ৪ মিনিট ৬ সেকেন্ডের একটি অডিও ফাঁস হয়। ওই অডিওতে নেতা আমির আলীকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি কয়েক হাজার শ্রমিকের পেটে লাথি মারতেছো…। তুমি বালু উত্তোলনের খবর ইউএনও অফিসে দেও…। বেশি বাড়াবাড়ি করবায় না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তুমার হাত কাটি ফালাই দিমু।’
এছাড়াও জানা গেছে, জৈন্তাপুরের লালাখাল নদী এলাকা একটি পর্যটন কেন্দ্র। সারী নদীর উৎসমুখ থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সারী-১ এলাকার বালুমহাল ইজারাভুক্ত। অপরদিকে সারীঘাট থেকে লালাখাল জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত সারী-২ ও ৩ বালুমহাল এলাকা ইজারার বাইরে রয়েছে। এর মধ্যে সারী-৩ বালুমহাল নিয়ে মামলা চলমান থাকার কারণে ইজারা বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বালুখেকোরা সারী-২ ও ৩ এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্থানীয় কয়েকটি বালুখেকো চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা বালু ট্রাকযোগে পরিবহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও এলজিইডির রাস্তা কেটে নদী পর্যন্ত নিজস্ব রাস্তা করেছে। প্রতিদিন শত শত নৌকা দিয়ে বালু তোলার পর নদীতীরে স্তূপ করা হয়। পে-লোডার দিয়ে ট্রাকে তুলে তা নানা জায়গায় পরিবহন করা হচ্ছে। এতে নৌকাপ্রতি ৯০০ টাকা ও ট্রাকপ্রতি ২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন শ্রমিক নেতাসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু লোকের মদদে বালুখেকোরা বালু উত্তোলনের সুযোগ পাচ্ছে। সম্প্রতি সেখানে একাধিক অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর সারী-৩ লালাখাল এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়।
হুমকির অভিযোগের বিষয়ে আমির আলীর ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টিকে দুঃখজনক উল্লেখ করে তারা ঘটনাটি মীমাংসার চেষ্টা করছেন বলে জানান সারীঘাট বালু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমেদ।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর থানার ওসি আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, সাংবাদিককে হুমকির ফোনালাপের অডিওটি তিনিও শুনেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একটি ভিডিও সংযোজিত হোলোঃ