FB IMG 1735327497884

মঞ্জুর মোর্শেদ : “৫ আগষ্টের পর দিন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ডঃ আসিফ নজরুল তার মেধাবলের উপর আস্থা রেখে সারা বাংলাদেশের মানুষের সামনে শিক্ষার্থী-সমন্বয়কদের কাছ থেকে দেশের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে আওয়ামী সরকারের শাসনামলের অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন সরকার গঠনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মঞ্চটি ছেড়ে রাষ্ট্রীয় মন্ত্রণালয় ভিত্তিক যে অফিস মেইনটেইন করা শুরু করেন নিজ-পছন্দের *লোকবল নিয়ে, অতঃপর তিনি নিজেই তার ইতি টানলেন।

আসলে ৫ আগষ্টের পর থেকে গত ১২০ দিনের‌ও বেশী সময় ধরে আসিফ নজরুল ও তার নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গদের স্বাক্ষরিত যতো প্রকারের রাষ্ট্রীয় আদেশ, নিষেধ, অধ্যাদেশ, উপদেশ, অনুমোদন, নিষিদ্ধ ঘোষণা, সুপারিশ, নিয়োগ, বাতিল, স্থগিত, পুনর্বহাল, মুক্তি প্রদান, জামিন, মামলা দায়ের, প্রত্যাহার ইত্যাদি সংক্রান্ত কাগজপত্র ও অন্যান্য প্রমাণাদির জন্ম হয়েছে তার সবকিছুর হিসাব কষে নিজে‌ই বুঝতে পারলেন যে তার এতোদিনের কষা সরল অংকটি ভুল হয়ে গেছে, অত‌এব উত্তর মিলছেনা অর্থাৎ তিনি টের পের পেয়েছেন যে তার এতোদিনের এতোশত কৃতকর্মের মধ্যে কোনকিছুরই বৈধ রূপায়ণ সম্ভব নয় পৃথিবীর কোনো সভ্য সমাজে বরং ওগুলো ইতোমধ্যে এমন লেজেগোবরে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফেলেছে যা হয়তো অচিরেই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে!

অত‌এব কালবিলম্ব না করে মেধাবী আসিফ নজরুল সেবার যেমন প্লান মাফিক ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে শহীদ জননীর ফাইলপত্র চুরি করে গায়ের হয়ে গিয়েছিলেন, এবার‌ও তেমনি প্লান করেই নিজের নিরাপত্তার জন্য নিজেদের তৈরি ফাইলপত্র নিজেদের সদস্য দিয়েই ডেস্ট্রয় করিয়ে হাত ধুয়ে উঠে গেলেন!

কথা হচ্ছে, এখন যদি এই ডঃ আসিফ নজরুল তার মোঃ নজরুল ইসলাম নামের পাসপোর্ট নিয়ে স্বপরিবারে কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নেন, তবে তাকে তার শিক্ষার্থীরা তথা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা কি করে দেশে ফিরিয়ে আনবেন? তথ্য মতে তারা তো কেউ একটা ভিসা ফর্ম‌ও সঠিক ভাবে পুরণ করতে পারার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নয়। ওদিকে আবার কানাডার দরকার হলে খুনি বদমাইশ থেকে গরু চোরকেও আগলে রাখে বিশ্ব মানবাধিকারের তকমা লাগিয়ে!

এছাড়াও বাংলাদেশের জীবন হঠাৎ সৃষ্টি হ‌ওয়া চলমান অযাচিত পরিস্থিতিকে একটি উদাহরণ হিসেবেও সকল মানুষ চোখের সামনে তুলে ধরেছে প্রকৃতি তার নিজস্বতার জানান দিয়ে, প্রকৃতির নিয়মে, ‘যার কাজ তার‌ই সাজে, সবার দ্বারা সবকিছু হয় না’, -একজন আইন বিভাগের শিক্ষক আর একজন আইন বিশেষজ্ঞ জাতীয় নেতার যোগ্যতা এক না, বিস্তর তফাৎ রয়েছে বৈশিষ্ট্য ও চরিত্রে। আর সে কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ডঃ আসিফ নজরুল‌ও তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে, -এটাই স্বাভাবিক আর বিষয়টা এবার তিনি নিজেই টের পেয়েছেন বিধায় তার মতে তিনি সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছেন….

‘গোল্লায় যাক বাংলাদেশ! নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ -এই পদ্ধতির চোখপল্টি দিলেন সারাদেশের সকল মানুষের সাথে আবারো আসিফ নজরুল নামক সমালোচিত আইকন।

এদিকেও, সবকিছু ছাই হয়ে যাবার পরে তা নিয়ে জাতির উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন আসিফ নজরুলের নির্বাচিত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেজন্য অবসরপ্রাপ্ত ওই ফৌজি কর্মকর্তার কোন প্রকারের দোষ/গুণ ছিল না, কেননা তাকেসহ সবাইকে আসিফ নজরুলের অফিসের অনুমোদন ক্রমে রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন পোষ্টের চেয়ার দেয়া হয়েছেই এই মর্মে যে কারো কিচ্ছু করতে হবে না আগে বেড়ে, যা করার সবকিছু আসিফ নজরুল নিজে করবে, সে তার লোকজন নিয়ে সব সামলাবেন, চেয়ার প্রাপ্ত সকলের মূল দায়িত্ব তার কথামতো এদিক ওদিক যেতে হবে তার নির্ধারিত মিশন নিয়ে এবং জনসাধারণের উদ্দেশ্য যখন তখন সাংবাদিক ডেকে এনে তার মনমতো ব্রিফিং দিতে হবে।

সবচেয়ে অবাক কান্ড হচ্ছে, এতো কিছুর পরেও শিক্ষক আসিফ নজরুলের অবস্থা প্রাকৃতিক ভাবে যেমন সেই সাদ্দাতের মতোই হয়েছে। কবুল করার মালিক “হ‌ও” না বললে কোন ফায়দা নাই! সোবাহানাল্লাহ…

দেখা গেছে, আসিফ নজরুল বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা একা এক মুঠোয় নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ও সরকারি সচিবালয়ের সকল সেক্টরগুলোকে একত্রিত করে এক টেবিলে নিয়ে ৫ আগষ্টের পর থেকে যে অফিস চালু করেছিলেন সেখানে তিনি প্রথমে দুইজন পরবর্তীতে আরোও চারজন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক পদমর্যাদার শিক্ষার্থীদের ঢাল বানাতে *লোকবল হিসেবে নিয়ে সচিবালয়ের টেবিল চেয়ার দিয়ে বসিয়ে দেন সেই সাথে তাদের মাথায় কাঁঠালের মতো তুলে দেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সমুহের জটিলতম দায়িত্ব যার ‘অ’ ‘আ’ পর্যন্ত জানে না ওই শিক্ষার্থীরা!

এককথায়, আসলে আসিফ নজরুল আন্দোলনে এতো শত মানুষের জীবন দান ও এতো শতকোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুড়ে ছাই করে দেবার বিনিময়ে অর্জিত সফলতাটুকু নিয়ে ছেলেখেলাই করেছেন নয়তো মারাত্মক মতলব আছে তার মনে, এছাড়া আর কিই বা হতে পারে!?

মোটকথা, অনস্বীকার্য সত্য যে ৫ আগষ্ট ২০২৪ইং -এর পর থেকে “গভমেন্ট অফ অফিসিয়ালি বাংলাদেশ” বলতে যতো রকমের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তগুলোকে বৈধ বলে গণ্য করা হয়েছে এবং তার উপর ভিত্তি করে যতো প্রকারের দলিল দস্তখত প্রস্তুত হয়েছে, তার প্রতিটির সিদ্ধান্ত গ্ৰহন থেকে শুরু করে প্রধান এবং শেষ বৈধতা দানকারীও ছিলেন ডঃ আসিফ নজরুল যার প্রমাণ সচিবালয়ের পাতায় পাতায় অবস্থান করছিল, অতঃপর সেসব আগুনে পুড়ে ছাই করা হোলো!

সর্বোপরি, একথাটি একজন দিন-ভিখারী, কৃষক, শ্রমিক, এমনকি রিক্সাওয়ালা, গার্মেন্ট শ্রমিক‌ও বোঝেন যে শিক্ষার্থী-উপদেষ্টারা রাষ্ট্রীয় বিষয়ে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল কিছুই জানে না, এমনকি আইনত কোনটা বৈধ এবং কেন অবৈধ নয়? কোনটা অবৈধ এবং কেন বৈধ নয়? ইত্যাদি হাইপোথ্যাটিকাল বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ফলে বস্তুত সবকিছুই আসিফ নজরুল‌ই করেছেন এবং এক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ জানা সত্ত্বেও চেয়ার টেবিল দিয়ে রাষ্ট্রীয় পদে বসিয়ে সবার মাথায় কাঁঠাল রেখে কোষগুলো তিনি একাই খেয়েছেন, কেনো, তাকে ছাড়া অন্য কাউকে কি সমন্বয়করা কোনো রকম কোন ফ্লোর দিয়েছে? ক‌ই না তো! দ্বিমত থাকলে বলুন!!

এমতাবস্থায় রাষ্ট্রীয় বিষয়ে তার অজ্ঞ শিক্ষার্থী কোনোকিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি তার মতে বৈধ অবৈধ বলে জানিয়ে দিতেন এবং সেটাই ফাইনাল, -এই পদ্ধতিতে তিনি মন্ত্রনালয় চালিয়েছেন।

একথায় দ্বিমত পোষণ করার কোনো সুযোগ নাই যে একমাত্র আসিফ নজরুলকেই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে এবং তিনিও একাই দায়িত্ব নিয়েছিলেন‌ও বলেই ৫ আগষ্টের পরে রাষ্ট্র সংক্রান্ত যেখানে যাই হয়েছে, যতো রকমের কাগজপত্র যে যাই প্রণয়ন করেছেন, সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার প্রতিটির বৈধতা নিশ্চিত করেছেন একা একমাত্র আসিফ নজরুল আর তিনি সারা দেশবাসীর সামনে একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী বলে গণ্য হয়েছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ড খ্যাত সমন্বয়কবৃন্দের ঘোষণা সাপেক্ষে।

সারা বিশ্বের সামনে আসিফ নজরুল একাই শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য এবং যথেষ্ট বলে গণ্য হয়েছে মিডিয়ার বরাতে, ওদিকে আসিফ নজরুল‌ও বীরের মতো একাই সকল দায়িত্ব নিয়ে এতোদিন ধরে সর্বোচ্চ টেবিলে বসে রাষ্ট্র পরিচালনার অফিস করেছেন কিন্তু অতঃপর তিনি যখন দেখলেন যে তিনি যা করলেন আসলে তা কিছুই হয় নাই! যেকোনো মুহূর্তে নিশ্চিত ধরাও পরে যাচ্ছেন, এমনকি তার শিক্ষার্থীদের কাছেও ধরা পরে গেলেন বলে! কতোদিন ধরে তিনি বাকি দুই ডক্টরেট এবং তার অনুগত মেন্টালিস্টদের নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকেও যা বুঝিয়ে তাদেরকে দিয়ে যা কিছু করিয়েছেন সবক্ষেত্রেই ভুলভাল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাই অন্ধকার থাকতে থাকতেই শেয়ান আসিফ নজরুল নদী পাড়ি দিলেন, এখন আর সমস্যা নাই সব পুড়ে খাক….”, বলেন এককালের বিখ্যাত ব্যারিস্টার ফজলুল হক চৌধুরী সাহেবের ছোট ছেলে ফয়জুল হয় চৌধুরী, একজন ঢাকা নিবাসী ব্যবসায়ী।

[*লোকবল= প্রধানত কয়েকজন সমন্বয়ক, অন্ধকারে থাকা কিছু সহযোগী ও প্রবাসী কয়েকজন মেন্টালিস্টরা।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *