মঞ্জুর মোর্শেদ : একথা বলাই বাহুল্য যে সচিবালয় মানে দেশের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। এহেনো পরিস্থিতিতে মধ্য রাতে তিনটি পৃথক পৃথক স্থানে আগুন জ্বলে উঠে এবং জরুরী ও স্পর্শকাতর সেক্টর পুড়ে ছাই হয়ে যায় ছেলে খেলার মতো কিন্তু এটা দেখে এদেশের কেউই সহজ ভাবে নেয় নি। সকলের ধারণ এটা পুর্ব পরিকল্পিত তৎপরতা।
তাদেরকে প্রশ্ন করা হয়, “কারা করতে পারে?” উত্তরে বলেন, “যারা ধামাচাপা দিয়ে, প্রতারণা করার অবস্থা সৃষ্টি করে থাকে।”
গত বুধবার ছিল বড় দিনের ছুটি। এরই মধ্যে গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। উক্ত ভবনে রয়েছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ আরও কিছু দপ্তর। সুত্র জানায়, তবে আগুনের ঘটনায় ছয়, সাত, আট ও নবম তলায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সচিবালয়ের এ আগুন ‘রিমোট কন্ট্রোল’ দিয়ে নাকি অন্য কিছু দিয়ে লাগানো হয়েছে? এমন প্রশ্নও উঠেছে।
প্রশ্ন উঠেছে গান পাউডারেরও রহস্যজনক কারণে সিসি ক্যামেরার কথা সবাই এড়িয়ে গেছেন অবলিলায়! এপ্রসঙ্গে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে এই অজুহাতে ধামাচাপা অব্যাহত রয়েছে! এমনকি, এক্ষেত্রে এতো পরীক্ষা নিরীক্ষার কি আছে, সিসি ক্যামেরা ফুটেজে তো সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকবেই! অতএব সিসি ফুটেজ নিয়ে যা হচ্ছে তার কথা ভেবেই সবাই হতবাক?
এটিকে সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতাও বলেছেন কেউ কেউ। গোয়েন্দা সংস্থা এক্ষেত্রে নিজস্ব কোর্স ও গত এক সপ্তাহের সিসি ফুটেজ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই তাৎক্ষণিক দেশের মানুষের জন্য তথ্য প্রদান করতে পারতো! কিন্তু করে নাই!!
মোটকথা, সচিবালয়ে হঠাৎ ওই আগুন পুর্ব পরিকল্পিত হলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তার পরিস্কার প্রমাণ কেনো থাকবে না? এটাই বুঝতে নারাজ সাধারণ মানুষ। আর এনিয়ে নাটক করাও তাদের কাছে অশোভন আচরণ বলে মনে করেন।
‘দুর্ঘটনার আগুন এভাবে লাগে না’, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ খান এছাড়াও বলেন, ‘সচিবালয় তো রাষ্ট্রের ‘কি’ পয়েন্ট, কেপিআইভুক্ত এলাকা। যদিও এখানে আগেও একাধিকবার আগুন লেগেছে। পিডব্লিউ কাজও করেছে। আবার কেন তাহলে আগুন লাগলো? আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এভাবে কখনো দুর্ঘটনার আগুন লাগে না।’
এছাড়াও স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টসে লাগা আগুনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা যখন আগুন লাগায় তখন একসঙ্গে একাধিক স্থানে আগুন লাগে। এমন দুর্বৃত্তায়নের আগুন আমি আগেও দেখেছি। এখানেও (সচিবালয়) তাই হয়েছে। এটা শর্টসার্কিট না, আগুন লাগানো হয়েছে।’
সাততলায় কুকুর ছাড়া আর উল্লেখযোগ্য কে কে যায়!?
পুরোপুরি নিভে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে। এদিকে ঘটনার পর ভবনের ৮ তলায় একটি কুকুরের পুড়ে যাওয়া দেহ পাওয়া গেছে যা নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অধিকাংশ লোকের মতেই কুকুরের মতো অযাচিত ব্যক্তিদেরও আসাযাওয়া ছিলো যে প্রশ্নের উত্তর নিরাপত্তা প্রহরীদের না জানার প্রশ্নই আসে না।
এছাড়াও আগুন নেভাতে গিয়ে প্রথমেই একজন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীর মৃত্যু একটি বারতা নিয়ে আসে যা পাওয়ার পরেই বাকি সবাইকে আগুন নেভাতে হাত দিতে হয়, এই মৃত্যুটিও কেউ স্বাভাবিক ভাবে নিতে নারাজ, কেননা বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের স্বাধীনতা বিজাতীয় বীজের পুনরাভূথ্থানের প্রমাণ বহন করে।
উল্লেখ্য রাজধানীর বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে লাগা আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম মোঃ সোহানুর জামান নয়ন।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল ঘটনাস্থলে এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান।
উল্লেখ্য যে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা ঢাকা শহরের উপর যে ধ্বংসযজ্ঞের কর্মসূচি পালিত হয়েছিল সচিবালয়ের আগুন পুনরায় সবাইকে সেই স্মৃতিই মনে করিয়ে দেয়। যদিও গণমাধ্যম আজও প্রকাশ করেনি ওই নাশকতা ও হত্যাকাণ্ডও কারা চালিয়েছে কিন্তু ঢাকা নিবাসীরা নিশ্চিত যে ওই কর্মসূচিতে ঢাকা নিবাসীরা ছিলো না বললেই চলে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পরে আস্তে আস্তে সবার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে, দুইয়ে দুইয়ে চারের মতো সহজ হিসাব করেই!
তবে সাধারণ মানুষ আস্থার সাথে মত বিনিময় করে বলেন, “যতোই যাই হোক কোন বিজাতীয় তন্ত্রমন্ত্র বাংলাদেশে কায়েম করা সম্ভব নয়।”
“বাঙালী জানে কি করিলে কি হইবে? শুধু সময়ের অপেক্ষা। বাঙালী সময় হলে মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াবে…”, এমন আরো অনেক কথাই বলেন সচিবালয়ের সামনেই এক ভুবনে প্রাইভেট জব করেন আহমেদ কবির।