মঞ্জুর মোর্শেদ : একথা বলাই বাহুল্য যে একদিনে পয়দা হননি একজন ডঃ ইউনুস।
আজ সারা পৃথিবীর কাছে একটি সুপরিচিত নাম ইউনুস, কেননা আধুনিক পৃথিবীর বানিজ্য ও অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য একটি বিশেষ ব্যবসা পদ্ধতির জন্মদাতা বাঙ্গালী বংশোদ্ভূত ডঃ ইউনুস। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে তিনি পৃথিবীর আদি পদ্ধতির ব্যাংকিং ও সুদ ব্যবসার নীতি ও পদ্ধতির বিপরীতে যে নতুন ব্যবসানীতি ও পদ্ধতিটি আবিস্কার করেছেন সেটিকেই শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করেছেন পৃথিবীর প্রায় সকল অর্থনীতি ও বানিজ্যনীতি বিশারদরা। বস্তুত তার এই মেধাবী আবিষ্কার থেকে প্রাপ্ত ফলাফল দেখে একপ্রকার হতবাক হয়েছেন পৃথিবীর বড়ো বড়ো অর্থনীতিবিদরা!
তথ্য প্রমাণ আছে যে আমাদের মানব সভ্যতায় অর্থনৈতিক লেনদেনকারী সুদ ব্যবসায়ীরা যুগ যুগ ধরে রয়েছেন। তবে বৈধতা নিয়ে সুদের ব্যবসাটি ব্যাপক ভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে বিশেষ করে পরবর্তীতে যখন ব্যাংকের জন্ম হয়। ১১৫৭ সালে ভেনিস সরকারের প্রচেষ্টায় ‘ব্যাংক অব ভেনিস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা বিশ্বের প্রথম সংগঠিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত আর ব্যাংক ব্যবসার মূল জীবনীশক্তির নাম সুদ।
⚫ ব্যাংক ব্যবসার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
ব্যাংক অফ ভেনিসের জন্মের প্রায় দুইশ বছর পরে ১৪০০ সাল থেকে এই পৃথিবীতে ব্যাংক ব্যবস্থার আধুনিক যুগের সূচনা হয়। ১৪০১ সালে ‘ব্যাংক অব বার্সিলোনা’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ব্যাংকের কার্যাবলী বিস্তৃত হতে থাকে। এ ব্যাংককেই বিশ্বের সর্বপ্রথম আধুনিক ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিতকরা হয়। এরপরে ১৪০৭ সালে ‘ব্যাংক অব জেনোয়া’ ১৬০৯ সালে ‘ব্যাংক অব আমস্টার্ডাম’, ১৬১৯ সালে ‘ব্যাংক অব হামবুর্গ’ প্রতিষ্ঠিত প্রথম সনদপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে ১৬৫৬ সালে সুইডেনে ‘ব্যাংক অব সুইডেন’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ব্যাংক অব সুইডেন প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পরে ১৬৯৪ সালের ২৭ জুলাই ইংল্যান্ডে ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ নামে বিশ্বের প্রথম আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে এই ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুইডেনের স্ভেরিজেস রিক্সব্যাংকের পর বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিশ্বের ৮ম প্রাচীন ব্যাংক। এছাড়াও পৃথিবীর প্রাচীনতম ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত মন্টে ডেই পাসচি ডি সিয়েনা নামক প্রতিষ্ঠানটি যার সদর দফতর ইতালির সিয়েনায়। ১৪৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি এখনও আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করে আসছে। এরপর ১৭৩৪ সাল থেকে সিটি অব লন্ডনের থ্রেডনিডল স্ট্রিটে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সদর দফতর অবস্থিত। মুদ্রানীতি প্রণয়নসহ এটি সরকারের যাবতীয় ঋণ পরিশোধ, নোট তৈরি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ করছে।
মূলত সারা পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য একটি “আন্তর্জাতিক ব্যাংক আইন” প্রতিষ্ঠিত করে এবং তার উপর ভিত্তি করে দেশে দেশে চলে ব্যাংক ব্যবসা। যেখানে পৃথিবীর একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সর্বসাধারণের নগদ অর্থ ও অর্থমূল্যবান সম্পদকে মূলধন বলে গণ্য করা হয় এবং সুদ লাভের প্রধান উৎস।
দেখা গেছে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করত ব্যাংকের বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক নীতিমালার কারণে অল্পসময়ের মধ্যেই প্রায় সারা পৃথিবীকে তার আইনের আওতাভুক্ত করে এমন অবস্থায় আনতে সক্ষম হয়েছে যে বর্তমান জামানায় ব্যাংকিং ব্যবসার দ্বারস্থ অবস্থায় আন্তর্জাতিক অর্থনীতিকে একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বাধ্য হয়েই!
এক্ষেত্রে পৃথিবীর অত্যন্ত মেধাবী হিসাববিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদরা কড়া পাহারায় রেখে ব্যাংক আইন ও বিধিমালা পরিচালনা করে থাকেন। আর ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য, ‘সকলের নগদ অর্থ ও অর্থমূল্যবান সম্পদকে নির্ধারিত পরিমাণ সুদ ও অন্যান্য শর্তসাপেক্ষে জমা নেয়ার পরে তা অন্যদের কাছে পুর্বে নির্ধারণ করে নেয়া সুদ ও অন্যান্য শর্তসাপেক্ষে বিনিয়োগ করে বিশেষ ভূমিকা পালন করা এবং এই গ্ৰহন ও বিনিয়োগ জনিত লেনদেনের মাধ্যমে অর্জিত অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জনবাদ তা পুর্বে নির্ধারণ করা নির্দিষ্ট পক্ষের মধ্যে পূর্বশর্ত মতো যথাযথ বন্টন করা’।
তবে সকল তথ্য উপাত্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে প্রমাণিত হয়েছে, “আধুনিক পৃথিবীতে ব্যাংক ও বিনিয়োগ ব্যাবসাটি প্রচলিত হবার পর থেকে তার আওতায় এতোকাল ধরে যে নীতি ও শর্তের উপর ভিত্তি করে সুদ ব্যবসা চলছে এবার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ডঃ ইউনুসের আবিষ্কাকৃত “কিস্তি” পদ্ধতি তার পুরো চেহারাটাই পাল্টে দিতে সক্ষম হয়! কেননা ডঃ ইউনুসের আবিষ্কৃত পদ্ধতিটি এতোটাই উন্নত যে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে রাস্তার ভিখারি নারীকেও প্রায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তায় সুদের ব্যবসার আওতাভুক্ত করা যায়, যার মধ্যে নেই কোন অর্থ বা অর্থমূল্যবান সম্পদ সংক্রান্ত জামানত নামক শর্তের প্রয়োজন।
উল্লেখ্য যে এতোকাল ধরে প্রচলিত পদ্ধতিতে বিনিয়োগ ব্যবসায় জামানত নামক অত্যাবশ্যকীয় যে শর্তটি রয়েছে তা নামান্তরে একটি প্রতিবন্ধকতাও বটে, এমনকি এই জামায়াতের শর্ত বাদ দিয়েও যে সুদ ভিত্তিক ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ ব্যবসা করা যায়, -এটা এর আগে কেউ ভাবতেই পারে নাই কিন্তু সবার সব ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে ডঃ ইউনুসের আবিষ্কৃত ফর্মুলাটি, যা বস্তুত তার তিন পুরুষের একই স্ত্রোতধারার কর্মে নিযুক্ত থেকে একাগ্ৰতার ফল বা কামাই বলা চলে।
ডঃ ইউনুসের এই অভাবনীয় আবিষ্কার বিশেষ করে গোটা পশ্চিমা বিশ্বকে দারুন ভাবে উৎসাহিত করেছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পৃথিবীর রাঘববোয়াল অর্থনীতিবিদরাও প্রমাণ পেয়ে যান যে আধুনিক ব্যাংকিং ও নগদ টাকা লেনদেন জনিত ব্যবসায়িক অর্থনীতিতে ডঃ ইউনুসের আবিষ্কৃত পদ্ধতিটিই সবচেয়ে বেশী নিরাপদ ও নিশ্চিত ফলদায়ক। এছাড়াও আরও বেশকিছু সফলতার প্রমাণ পেয়ে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ইহুদী সম্প্রদায়ের লোকজন (পৃথিবীর সবচেয়ে আদি কিন্তু সংখ্যায় সবচেয়ে কম) ডঃ ইউনুসের নাম ইতিহাসে স্থান করে দিতে তাদের অর্জিত ক্ষমতার মধ্যে থাকা সর্বোচ্চ সন্মান প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করেন। বিশেষ করে তারা যখন দেখতে পান, ডঃ ইউনুসের আবিষ্কৃত পদ্ধতির সুদ ব্যবসাটি ৯২% মুসলমানের দেশ হওয়া সত্যেও বাংলাদেশের প্রায় ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে যা পৃথিবীর কোন ব্যাংক কস্মিনকালেও কল্পনাই করতে পারে নাই! পাশাপাশি যখন তারা আরও দেখেন যে ডঃ ইউনুসের আবিষ্কৃত পদ্ধতির মূল ভিত্তি ও চালিকাশক্তিই হচ্ছে “নারী”, তখন তারা নারীকে ক্ষমতায়িত করার লক্ষ্যে এটিকে অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করেন বিভিন্ন কারণে…
তবে ডঃ ইউনুস একারণেও ইসলাম জাহানে সমালোচিত হন, কেননা নারী জাতির জন্য ইসলামী আইনে মুসলিম ধর্মাবলম্বী পুরুষ জাতির উপরে যে দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পিত রয়েছে তার মতে, ‘পর্দার আড়ালে রেখে নারী জাতিকে পৃথিবীর সর্বাধিক সম্মান প্রদর্শন পূর্বক সকল সুবিধার মধ্যে বৈষয়িক জীবনের সকল প্রকারের বাহ্যিক দায়দায়িত্ব, ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টদায়ক ব্যাপার থেকে আগলে রাখার কঠোর নির্দেশ কিন্তু ডঃ ইউনুসের আবিষ্কৃত পদ্ধতির একমাত্র স্তম্ভই হচ্ছে নারী, যার উপর নিহিত রয়েছে সকল দায়-দায়িত্ব। ফলে ইসলাম তার পদ্ধতিটিকে অস্বীকৃত বলে গণ্য করে।
অবশ্য, যদিও প্রতিদিনই পৃথিবীতে মুসলমান ধর্মালম্বীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু প্রশ্ন আসে, “বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে কয়জন আছেন যাঁরা নিজেদের ইসলামের সুন্নাহর আলোকে মুসলিম মানতে সক্ষম হন?” বলাই বাহুল্য, এই প্রশ্নের উত্তরটিও প্রায় সকলের জানা, “এককথায় যৎসামান্য এবং ওই সামান্য সংখ্যকদের মধ্যেও অধিকাংশরাই নিজেদেরকে মনে মনে প্রশ্নবিদ্ধ করে থাকেন বিভিন্ন কারণে।”
তথ্য মতে এ অবস্থা সৃষ্টি হবার প্রধান কারণ হচ্ছে, পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী বিভিন্ন লোকেদের বাসভূমি বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে যেসকল দেশে মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক ও একছত্র মুসলিম দেশ বলে গণ্য সেসব দেশ তথা রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রীয় চিন্তা চেতনা ও পরিচালনা নীতি দৈবিক কারণে ইসলামী আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পরেছে। শুধু তাই নয়, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম বলে বিবেচিত ধর্ম ইসলাম ধর্মাবলম্বী মুসলিমরা তাদের নিজ ধর্মীয় অনুশাসন যতো বেশী লঙ্ঘন করে থাকেন তা অন্যকোন ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে নেই বললে খুব বেশী বলা হবে না…
এমতাবস্থায় সহজ বাংলায় ও এককথায় বলা যায়, ডঃ ইউনুস এই পৃথিবীর অত্যাধুনিক সুদের ব্যবসা পদ্ধতির আবিষ্কার করেই নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, অন্যকিছু নয়। দেখা গেছে, তিনি তার মেধা ও যোগ্যতার বলে এমন এক সুদ ব্যবসা পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন যেখানে নিরাপত্তা জনিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত “জামানত” একেবারেই অপ্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত! তিনি তার পদ্ধতিটিকে এমনকি মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করে কাজেকর্মে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে বরং চাইলে রাস্তার ভিখারি নারীকেও সুদে টাকা দিয়ে তা সময়মতো আদায় করা সম্ভব, আর এক্ষেত্রে তিনি তার আবিষ্কৃত পদ্ধতিটিকে প্রায় ৯২% মুসলিমের দেশ বাংলাদেশের উপর সরেজমিনে প্রয়োগ করে শতভাগ কার্যকর বলে প্রমাণ করেছেন।
এদিকে যদিও তার এই গবেষণার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগছে বাংলাদেশ। আজকের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে একমাত্র কমন প্যারার নাম “কিস্তি”!
শুরুটা হয়েছিল ডঃ ইউনুস ও ফজলে হাসান আবেদের বদৌলতেই, তারপর এই পদ্ধতির বানিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে আরোও অনেকেই এবং বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পরেছে কিস্তি নামক লেনদেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে প্রচলিত এই কিস্তি সাধারণ মানুষকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে যে এখন তাদের নিজেদের জীবনটাই যেনো একটি সস্তা উপহাস আর সমাজ ব্যবস্থায় ইসলাম ধর্মটি একটা ভ্যাবাচ্যাকা পরিস্থিতির মধ্যে ডুবন্ত বাস্তবতা। তবে কিস্তি পদ্ধতির আওতাভুক্ত হবার পরে গ্ৰাহকরা কে কি পেলো না পেলো তা যতোই প্রশ্নবিদ্ধ হোক না কেন এই পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসমেত সময়মতে টাকা আদায় করাটা প্রায় শতভাগ নিশ্চিত আর এটি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অধিকতর লাভজনক ব্যবসা তো বটে।
এবিষয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, সুদের ব্যবসায় ডঃ ইউনুসের এই অসামান্য অর্জনটি একদিনে অর্জিত হয় নাই। দেখা গেছে, তার বাপদাদারাও জাত সুদি ছিলেন, তৎকালীন সময়ে তাদের জুয়েলারির দোকান ছিল। সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজনে, বিপদে আপদে সেখানে গিয়ে সোনাদানা, জমিজমার দলিলপত্র জামানত বাবদ রেখে সুদের বিনিময়ে টাকা ধার করেন ফলে তিন পুরুষের আমল ধরে তার রক্তের স্ত্রোতধারায় মিশে আছে পারিবারিক সুদ ব্যবসা, শিশুকাল থেকেই যার মধ্যে লালিত পালিত ডঃ ইউনুস তার সেই সকল অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটিয়ে, গবেষণার মাধ্যমে যে পদ্ধতিটির উদ্ভাবন করেছেন তা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার আবিষ্কৃত পদ্ধতি মতে, ‘সুদের ব্যবসা করতে জামানত নিতেই হবে -এমনটা নয়!’ বলা যায় এটাই ডঃ ইউনুসের আবিষ্কারের সবচেয়ে বড় চমৎকার যা পছন্দনীয় হয়ে ক্রমান্বয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে ছড়িয়ে পরছে।
আর সুদের ব্যবসায় তার এই অভাবনীয় সাফল্য গোটা ইহুদী বিশ্বকে এতোটাই আবেগে আপ্লুত করেছে যে তারা তাকে আনন্দের সাথে শুধু নোবেল পুরস্কার দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তারা ডঃ ইউনুসকে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ নিজেদের শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় বলেও গণ্য করেন। ফলে বর্তমানে পৃথিবীর একশরও বেশি ইহুদী খ্রীষ্টান প্রধান দেশের শিশুদের পাঠ্যক্রমে ডঃ ইউনুসের জীবনী ঠাঁই পেয়েছে।
তবে তার নোবেল পুরস্কার বিজয় প্রসঙ্গে নিন্দুকেরা বলেন, “নিজেদের কার্যকলাপের মধ্যে ইহুদীরা ভুল খুব কমই করে থাকেন তাই ডঃ ইউনুসকে একা নয়, তার সাথে গ্ৰামীণ ব্যাংককেও ভাগিদার বানিয়ে ভাগে-যোগে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় কিন্তু মোঃ ইউনুসের পাশাপাশি ফজলে হাসান আবেদও এই পদ্ধতির আওতায় বাংলাদেশের যতো নারীদের উদ্বুদ্ধ করে গ্ৰাহক বানাতে সক্ষম হয়েছেন তা বিবেচনা করলে, এই মর্মে নোবেল পুরস্কার যদি দিতেই হয় তবে তা পাবার অধিকার তাদের দুজনেরই আছে…
ছবিতে দেখছেন, বাংলাদেশের চট্রগ্রামে ডঃ ইউনুসের বাপদাদার সেই আমলে বানানো একটি বাড়ি যা ডঃ ইউনুস নামক ইতিহাসের একটি অংশ। কেননা এই বাড়িতেই বেড়ে ওঠেন বিশ্ববিখ্যাত ডঃ ইউনুস। অনেকেই জানেন, ডঃ ইউনুসের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলা শহরের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায়। তবে তার গ্রামের বাড়ী চট্রগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই রোডে অবস্থিত।
ডঃ ইউনুসের দাদার নাম হাজী নজু মিয়া, এই ব্যবসায়ীর নামেই নামের উপর ভিত্তি করেই নাম দেয়া হয়েছে চট্রগ্রামের ‘নজুমিয়া হাট’ -এর। এই হাটের কিছুটা পশ্চিমে এগিয়ে গেলেই ডঃ ইউনুসের বাপদাদাদের গ্ৰামের বাড়ি (আদি বসতবাটি)।
ডঃ ইউনুসের বাবার নাম হাজি দুলা মিয়া, তার বাবার মতো তিনিও ব্যবসায়ী ছিলেন। ডঃ ইউনুসের দাদা ও বাবা এই দুই পুরুষই জুয়েলারির দোকানদারী করতেন তা ছবির এই স্থাপনাটিতে অবস্থিত, এখানেই তাদের সুদের উপর ভিত্তি করে বন্ধকী ব্যবসাটি স্বনামধন্য ছিল। তার বাবা হাজি দুলা মিয়া সওদাগরের নামের উপর প্রতিষ্ঠিত জুয়েলারির দোকানটি এখনো খাতুনগঞ্জের নিকটবর্তী বক্সিরহাটে চলমান আছে।
ছবির নিরিবিলি নামক স্থাপনাটি ষাটের দশকে স্থাপিত করে তার নীচতলায় মোঃ ইউনুসের বাবা নজু মিয়া সওদাগর জুয়েলারির দোকানদারি করতেন ও দোতলায় বসবাস করতো পরিবারের সদস্যরা, যেখানে কেটেছে নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুসের ছোটবেলা।
তিনি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং শৈশবে শহরের কোরবানীগঞ্জের লামা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। উল্লেখ্য, ডঃ ইউনুস চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল হতে ১৯৫৫ সনে এসএসসি পাস করেন, তখন তিনি মেধা তালিকায় ১৬তম স্থান লাভ করেন।
[টিকাঃ- পৃথিবীর সকল ধর্ম ও দর্শন রয়েছে তন্মধ্যে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান মূলতঃ এই চারটি ধর্মই প্রধান এবং কেবলমাত্র “ইসলাম” ধর্মের আইন অনুসারে এহেনো লেনদেনের মধ্যে সুদ মিশ্রিত আছে বলা হয়েছে, আর ইসলামের বিধানে “সুদ” সবচেয়ে ঘৃণিত বলে গণ্য।
এখানে আরোও উল্লেখ্য, আনু. ৫৭০ খ্রি. (৫৩ হিজরিপূর্ব) -এ জন্ম গ্ৰহন করেন আরব্য বংশোদ্ভূত আব্দুল্লাহর পুত্র (সা:), যিনি তাঁর ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রি. -এ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নবুয়ত লাভ করে ইসলাম ধর্মের প্রকাশ ঘটান। ইসলাম ধর্মের নবী ও রাসূল মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা:) এর মাতৃভাষা আরবি, এই আরবি ভাষায় দুটি শব্দ রয়েছে, ১) “حَرَام” (হারাম) ও ২) “الربا” (রিবা)।
আরবি ভাষার হারাম শব্দটির বঙ্গার্থ অবশ্যই বর্জনীয় এবং রিবা শব্দের বঙ্গার্থ সুদ। আরবি ভাষায় নাজিল হওয়া পৃথিবীর শেষ ও শ্রেষ্ঠতম আসমানী কিতাব “আল-কোরআন” -এর আইনে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য রিবা অর্থাৎ সুদের উপরে সর্বাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কঠিনতম হারাম অর্থাৎ অবশ্য অবশ্যই বর্জনীয় বলে গণ্য আছে। একই মতাদর্শের আলোকে রাসুলুল্লাহ (সা:) এর বাণী অর্থাৎ হাদিসেও সুদের বিরুদ্ধে সর্বাধিক নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি নিকৃষ্টতম ঘৃণীত বলা হয়েছে। ফলে সুদ মুসলিম জাহানের জন্য অবশ্যই বর্জনীয় কেননা তাদের ধর্মে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম অপরাধ, একই সাথে “সুদি” সবচেয়ে নিকৃষ্টতম পাপী বলে গণ্য, যার চেয়ে নিকৃষ্টতম অপরাধী (পাপী) বলে ইসলাম ধর্মের আইন অন্য কাউকেই গণ্য করে না!]