ফেসবুক ভয়েস : পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, বরখাস্ত হওয়া ও বঞ্চিত পুলিশ কর্মকর্তারা চাকরিতে ফিরছেন। চাকরিচ্যুত ও অবসরে পাঠানো ৮ জনকে এবং বরখাস্ত হওয়া অন্তত ১০ জনকে ইতিমধ্যে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে বলে সুত্র জানায়।
আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন কারণে যারা চাকরি হারিয়েছিলেন তাদের মধ্যে যাদেরকে পুনর্বহাল করা হয়েছে তারা অনেকেই চাকরি ফিরে পেতে আওয়ামী সরকারের আমলেই প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন। তাদের মধ্যে কারো কারো ট্রাইব্যুনালে করা মামলার রায়ে, আবার কেউ কেউ মামলা প্রত্যাহার করার শর্তে চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছেন।
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ৫১ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে নতুন করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
তথ্য মতে, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে ২৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত ও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয় এবং ২৮ জনকে বরখাস্ত ও ওএসডি করে রাখা হয়। উক্ত চাকরিচ্যুতদের মধ্যে একজন হলেন ১৯৮৪ ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের পুলিশ কর্মকর্তা সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজি) এ কে মাহফুজুল হক। তিনি জানান, ২০০৯ সালে তিনি পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর ছিলেন। তাঁকে করার মাধ্যমেই আওয়ামী সরকার পুলিশ কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি করা শুরু করেছিল।
গত ২১ আগষ্ট দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি খবরের অংশবিশেষ নীচে হুবুহু তুলে ধরা হয়েছেঃ
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চাকরিতে পুনর্বহাল চান গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকরি হারানো পুলিশ ক্যাডারের ৫০ জন কর্মকর্তা। বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি এ কে মাহফুজুল হক সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি পুলিশ ক্যাডারের ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা। পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টরের পদ থেকে ২০০৯ সালে তাকে ওএসডি করা হয়।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ পনের বছর (২০০৯-২০২৪) যাবৎ বৈষম্যের শিকার পদন্নোতি বঞ্চিত, ওএসডি ও বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকা দীর্ঘ। বিসিএস পুলিশ সার্ভিসের ১৯৮৪, ১৯৮৫, ১৯৮৬, ১৯৮৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৫ ব্যাচের কর্মদক্ষ, সৎ, ও প্রফেশনাল ৫০জন কর্মকর্তাকে ২০০৯ সালের পর থেকে আর কোন পদন্নোতি দেয়া হয়নি। এর মধ্যে ২ জন কর্মকর্তাকে চাকুরী হতে বরখাস্তÍ করা হয়েছে। ২৩ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং ২জন কর্মকর্তাকে ২১শ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলায় অন্যায়ভাবে জড়িত করে সাজা প্রদান করা হয়েছে। ১জন কর্মকর্তা এমনও আছে যাকে ১৯৯৭ সালে চাকুরী হতে অপসারণ করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ৫ বছর পরে কোর্টের রায়ে চাকুরীতে পুনর্বহাল হওয়ার পর আবারো ২০১১ সালে তাকে ওএসডি করে এবং ওএসডি থাকাকালীন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে। এ সকল দক্ষ, সৎ, ও কর্মনিষ্ঠ কর্মকর্তাদেরকে চরমভাবে বৈষম্যের শিকার করে পুলিশ বিভাগে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিলো। আওয়ামী সরকারের পদলেহী একদল দলবাজ, তেলবাজ, অদক্ষ, অপেশাদার ও অসৎ কর্মকর্তারা পুলিশ বাহিনীকে দীর্ঘ সময় নের্র্তৃত্ব দিয়েছিলো। যার ফলে পুরো পুলিশ বাহিনী সরকারের রাজনৈতিক পেটোয়া বাহিনীতে পরিনত হয়েছিলো। অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত বল প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার পুলিশ বাহিনীকে সাধারণ জনগণের মুখোমুখী দাঁড় করিয়েছিলো। ছাত্র-জনতার অভুতপূর্ব বিপ্লবের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে প্রতি বিপ্লবীদের হাত থেকে বাঁচাতে এ মূহুর্তে প্রয়োজন ইতোপূর্বে পদোন্নতি বঞ্চিত, বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের “ নেক্সট বিলো রুল” এর মাধ্যমে দ্রুত পদন্নোতি দেয়া এবং পুলিশ বিভাগসহ সরকারের অন্যান্য জায়গায় চু৩িভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা। ……
(ইনকিলাব থেকে অংশবিশেষ)
এদিকে আওয়ামী সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত হওয়া ২৮ এবং ওএসডি করে রাখা উক্ত ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তাই আওয়ামী সরকার পরিবর্তনের পরে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে সাময়িক বরখাস্ত, স্থায়ী বরখাস্ত করা হয়েছিল অনেককেই। তাঁরাও পুনরায় চাকরিতে নিয়মিত হবার দাবি জানান কিন্তু সরেজমিনে দেখা গেছে দাবিদারদের তুলনায় চাকরিতে পুনর্বহালের সংখ্যা খুবই কম।
এছাড়াও জানা গেছে, যাঁদের চাকরির বয়স নেই, তাঁদের মধ্যেও কেউ কেউ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। কয়েকজনকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে চাকরিতে পুনর্বহাল করেছেও বটে, কয়েকজনকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে শূন্যতা ও বিরাজমান অস্থিরতার বিষয়ে সরকারি চাকরির বিধিবিধান বইয়ের লেখক ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘যাঁরা সত্যিকারের বঞ্চিত তাঁদের মধ্য থেকে যোগ্য কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, যাঁদের দিয়ে পুলিশ প্রশাসন ও জনগণ লাভবান হবে। তবে অতীতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত পছন্দের লোককে ফিরিয়ে আনা হয়’।
বস্তুত ঘুষগ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক কারণেও সাময়িক বরখাস্ত, ওএসডি ও চাকরিচ্যুতির নজির আছে এদেশের সর্ব আমলেই।
এক সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাকে পরবর্তীতে অন্য সরকারের আমলে পুনর্বহালের ঘটনাও ঘটেছে এদেশে অনেক। এসব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় অসাধু কর্মকর্তাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার অভিযোগও ওঠেছে অনেক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত ৫ অক্টোবর আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে এবং ২৭ আগস্ট থেকে পুলিশ কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহালের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
ক্ষমতাচ্যুত করা সরকারের আমলে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো যে ৫ কর্মকর্তাকে ২৭ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়, তাঁরা হলেন: ১) মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ছিলেন রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমির উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ২) রংপুরের পুলিশ সুপার মো. আলী হোসেন ফকির, ৩) সিআইডির পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন মিয়া, ৪) ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুলের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান এবং ৫) সিআইডির পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান।
এ ছাড়া গত ১০ সেপ্টেম্বর সাবেক পুলিশ সুপার আলী আকবর খানকে, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল-১-এর রায় অনুযায়ী ১৭ নভেম্বর শেখ মো. সাজ্জাত আলীকে, ২২ নভেম্বর অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মো. মাহবুব আলমকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে অপর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সাজ্জাত আলী পুনর্বহালের তিন দিনের মাথায় ডিএমপির কমিশনার নিয়োগ হন।
সর্বশেষ, গত সোমবার পুলিশ সুপার মো. মুনির হোসেনকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।
সূত্র বলেছে, এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অপেশাদার আচরণের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন: ১) সাবেক নৌ পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আরেফ, ২) রংপুরের পুলিশ সুপার মিলু মিয়া, ৩) শিল্প পুলিশ-২-এর সাবেক পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান ৪) ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুলের পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমিন।
এছাড়াও ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর গোলচত্বরে এক কনস্টেবলকে মারধরের অভিযোগে মো. আব্দুল্লাহ আরেফকে সাময়িক বরখাস্ত ও তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর তিনি চাকরিতে পুনর্বহাল হয়েছেন।
মিলু মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছিল ৭ বছরের এক শিশুকে আসামির মতো গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করায়। তাঁকেও বিভাগীয় মামলা থেকে ৬ নভেম্বর অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই বিভাগীয় মামলা করা হয়। সেই মামলা থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি দায়মুক্তি পান। দীর্ঘদিন গরহাজিরের কারণে বিভাগীয় মামলা হওয়া ও গুরুদণ্ড পাওয়া শামীমা ইয়াসমিনকে ২৯ আগস্ট অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পুলিশ বাহিনীতে চাকরিতে পুনর্বহালের পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের আমলে পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ পদ ও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের প্রধানদের বছরের পর বছর চুক্তিতে নিয়োগ দিয়ে রাখা হয়েছিল। এতে পদোন্নতি ও পদায়নে জটলার সৃষ্টি হতো। অনেকে বঞ্চিত হতেন। তাদেরকে যোগ্যতার ভিত্তিতে চুক্তিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম এবং ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলীকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অপরদিকে র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমানের এক বছরের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
তবে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করে পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, দক্ষ জনবলের ঘাটতি রয়েছে, তাই বলে ধারাবাহিকভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সমর্থনযোগ্য নয়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেও তা ৬ মাস বা ১ বছরের বেশি হওয়া উচিত নয়। এতে বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি কার্যক্রম ব্যর্থ মনে হতে পারে।
তাঁর এই কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে সবাই মনে করেন। এদিকে বাংলাদেশ পুলিশ এখনও জনগণের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে নি বটে কিন্তু পুলিশ বাহিনীকে রিসেট করা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে নতুন আমলের জন্য, অতএব সর্বসাধারণের ভাবনা, “নতুন রুপের পুলিশ কেমন হবে?”
যে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ৫৪ বছর ধরেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে, পুলিশ মানেই “প্যানিক”, তবে -একথাটি অনস্বীকার্য যে এই পুলিশই সাধারণ মানুষের জীবন মরণের শেষ সঙ্গী।
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের মানুষ তাদের ঘামের পয়সা দিয়ে কিনে দেয়া পোশাক পরা পুলিশ সদস্যদের কখনোই অযোগ্য ভাবতে রাজি নয় কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কিছু অযোগ্য কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি সবসময়ই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ৯০% -এরও বেশী সদস্যদের স্বাভাবিক কর্মকান্ড ও যোগ্যতার ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার প্রায় সকল পুলিশ সদস্যদের মতে, তারা সাধারণ মানুষের সাথে যদি কোনো আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে থাকেন তারজন্য তাদের কর্তৃপক্ষ দায়ী, তারা নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পুলিশ বলতে যাদের মুখোমুখি হন, যাদের আচরণগত কারণে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে মানুষের বোধ-বিচার হয়, তথা কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যরা বিতর্কিত চরিত্রের কর্তৃপক্ষের কাছে আজীবন আক্রান্ত।
উল্লেখ্য যে এবার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে প্রায় ৩ হাজারের বেশি (গণমাধ্যমে প্রকাশ) পুলিশ সদস্যরা প্রাণ হারিয়েছেন, যারা পোশাক পরা থেকে খোলা পর্যন্ত সকল কাজ বিতর্কিত চরিত্রের কিছু কর্তৃপক্ষের কারণেই করতে বাধিত ছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ৮০% এর বেশী কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার সদস্যরা মনে করেন, ‘উপর মহলের হুকুম পালন করার সাথে সাথে তাদের খায়েস মিটাতেই আচরণবিধিও লক্ষণ করলে করতে হয়, নয়তো বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতেন যে তারা পোশাক পরলেই ‘সুপারম্যান’…’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের মান কেমন? -এই প্রশ্নের উত্তর মিলে সেই দেশের পুলিশ বাহিনীর কনস্টেবল থেকে এসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক বিচার বিশ্লেষণ করলেই।
বাংলাদেশের আওয়ামী সরকারের আমলের পুলিশ বাহিনীর এসআই থেকে কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের সাধারণ মানুষ সরেজমিনে কে কেমন ভাবে পেয়েছেন তা সাধারণ মানুষের মনে আছে। ওদিকে গত ১৭ বছরের আওয়ামী সরকারের আমলে শেখ হাসিনা পুলিশ বাহিনীকে সবচেয়ে বেশী সুবিধা দিয়েছেন পাশাপাশি শতশত পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়াকে বৈধতা দিয়ে এদেশের সাংবাদিকতা তথা বাকস্বাধীনতাকে শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছেন।
তথ্য মতে, ১৭ বছরে এদেশের হাজার হাজার মিডিয়ার অগণিত বৈধ ও অবৈধ সাংবাদিকদের মধ্যে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি মৃত্যু ও অঘটন ঘটেছে। অর্থাৎ সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতার কারণে ও পুলিশের সর্বোচ্চ সুবিধা দেবার কারণেই বাংলাদেশ চলেছে পুলিশ আর মিডিয়ার হাতে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পর ডঃ আসিফ নজরুলের সেটাপে যে বাংলাদেশের পুনঃ প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে তার মধ্যে পুলিশ ও মিডিয়ার সেটাপ চলছে, এই মুহূর্তে সতর্ক ভাবে।
তথ্য মতে ৫ আগষ্টের এক পর্যায়ে ফেইসবুক লোগো লাল/কালো করার মাধ্যমে একটা সাইবার এটাক্ চালিয়েছে ডঃ আসিফ নজরুলের দুই অনুচর পিনাকী ও ইলিয়াস হোসেন। সেই সময় ফেসবুকের কোটি কোটি আইডি হেরফের হয়ে গেছে এবং গণমাধ্যম দখলে নিয়ে নিয়েছেন এই তথাকথিত সাংবাদিকদ্বয় আসলে যারা মেস্টালিস্ট বলে গণ্য হয় কার্যক্রম অনুসারে।
ওদিকে দেখা গেছে, ৫ আগষ্টের পর ডঃ আসিফ নজরুলের প্রথম আকর্শন ছিলো, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি কিন্তু ওটা যে একটা চাতুরি ছিলো তা বিএনপি তখনও টের পায়নি, এমনকি ডঃ আসিফ নজরুল ও ডঃ শফিকুল রহমানের অভ্যন্তরীণ সেটাপের বিষয়েও তারা উদাসীন ছিলেন।
তবে, জনমতের বাইরে কেউ কখনও কোনো জাতির জীবনে কিছু ঘটাতে পারে নি দুর্ঘটনা ছাড়া, তার সাক্ষী ইতিহাস। আর তাই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী দেশের সরকারের পতন ঘটিয়ে ডঃ আসিফ নজরুলের হাতে অর্পণ করলে তিনি বিএনপির সাথেই প্রথম সেটাপ করেন, যেখানে খালেদা জিয়ার মুক্তি থেকে শুরু করে তারেক জিয়া…, তারপর, -এমনই কথা হলেও তারেক জিয়া এখনও বাংলাদেশে নয়!! অতএব সাধারণ মানুষের আর কিছু বুঝতে বাকি নাই, তারা নিরবতা পালন করে, পর্যবেক্ষণ করছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, “বাংলাদেশের ৯০% সাধারণ মানুষের অনাগত বাংলাদেশ কেমন হবে?”
তথ্য মতে এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র ডঃ আসিফ নজরুল ছাড়া অন্যকেউ দিলে তা কাল্পনিক বলে গণ্য। কেননা, ৫ আগষ্টের পর থেকে ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পরবর্তী ৫৪ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাস বন্ধ করে দিয়ে একটা নতুন মোড়কে পুনরুত্থানের ইতিহাস রচনা করা শুরু করেছেন ডঃ আসিফ নজরুল ডঃ ইউনুস ও ডঃ শফিকুল রহমানের যৌথ উল্লাসের ঔরসে। তাই অন্যকেউ বললে তা অনুমান ছাড়া কিছুই হবে না।
যদিও বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের পরবর্তীতে থাকা দ্বিতীয় ভোট ব্যাংক বিএনপি কিন্তু সেই বিএনপির সাথেই “দেখাইছে কলা খাওয়াইছে মূলা” -এ পদ্ধতিতে তিন ডক্টরেট মিলে খেলেছেন যা সকলের কাছে পরিষ্কার, তার এক নম্বর উদাহরণ তারেক জিয়া দেশে নাই।
উল্লেখ্য যে “নেতা ছাড়া দল কানা’ এটা একটা চরম ঐতিহাসিক বাস্তবতা। আওয়ামী লীগের পরে বিএনপি আর বর্তমান বিএনপি মানে তারেক জিয়া একথা বলার অবকাশ আছে বলে মনে হয় না!!!”
শুধু তাই নয়, কে এই তারেক জিয়া?
৫৪ বছরের বাংলাদেশের ইতিহাস যদি রাজতন্ত্রের ইতিহাস হোতো তবে একমাত্র তারেক জিয়াই বাংলাদেশের বৈধ প্রিন্স বা রাজপুত্র বলে গণ্য হন, কেননা বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র তারেক জিয়াই (জীবিত) সেই বাঙালী পুরুষ যার পিতা এদেশের স্বনামধন্য প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তাঁর মা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীও বটে! পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক থেকে সর্ববিষয়ে সুযোগ্য বলে এদেশের বৃহত্তম ভোট ব্যাংকের লিডার তারেক জিয়া মানে একটি বাঙালী গণজাগরণ। তারেক জিয়া মানে জিয়াউর রহমান, জিয়াউর রহমান মানে স্বাধীনতার ঘোষক, বাঙালী মুক্তি-ফৈজি, ৭১-এর পক্ষ শক্তি!!!
ওদিকে কানার ভাই ল্যাংড়াও জানে বাংলাদেশে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে নিধন চলছে?
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির উইকেট সরাসরি ফেলার পরে বিএনপির উইকেট বিভিন্ন বলে বলে যে ফেলা হচ্ছে তা সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বিএনপির ‘সম্পাদক’ নেতাসহ অনেকেই না দেখার ভান করলেও রুমিন ফারহান ও মুরুব্বি নেতার যে চোখ এড়াচ্ছে না তা তাদের কথাবার্তায়ই সুস্পষ্ট। এমতাবস্থায় ‘তারেক জিয়া দি প্রিন্স এন্ড লিডার অফ বাংলাদেশ’ উপস্থিত থাকলে কেমন হোতো? এই মুহূর্তে দেশের মাটিতে পা দিলেই বা কেমন হবে!?
বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে খেলা রামদের হাতে তুলে দিয়ে তিন ডক্টরেট মিলে নতুন পুরান করে প্রশাসন ও পুলিশের মধ্যে সে সেটাপ নিচ্ছেন পরবর্তী সরকার পরিচালনার জন্য, পাশাপাশি গণমাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যেও যেসব আমূল পরিবর্তন পয়দা করছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছরের ইতিহাসের গোরস্থান বানিয়ে, তা কি তারেক জিয়ার বাংলাদেশ হবে?
সকলেই মনে করেন হবে না এবং কেউ কেউ মত প্রকাশ করে বলেন, ‘তারেক জিয়ার বাংলাদেশ না হলে বাংলাদেশের ৩০% ভোটারের বাংলাদেশ হবে না’।
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশের ৬০% ভোট ব্যাংক বিএনপি ও আওয়ামী বাকী ৪০% এর প্রায় ২৫% ভোট জাতীয় পার্টির, বাকী মাত্র ১৫% সম্মিলিত রাজনৈতিক নেতাদের তা তারা যে যে দলেরই হোক না কেনো। আর এর মধ্যে এখনও সীমাবদ্ধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভবিষ্যৎ সরকার।
এমতাবস্থায় ডঃ ইউনুস যে ঐক্য মত করেছেন সেখানে যে দলের সে নেতাই থাকুক না কেনো, যেহেতু বিএনপির তারেক জিয়া ছিলেন না, আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি তো এমনিতেই বাদ অতএব তা ১৫% কম ভোটারের ঐক্য মত বলে গণ্য করা যায়।
ডঃ আসিফ নজরুলের ভাড়াটে মিডিয়ার প্রতিনিধি পিনাকী ও ইলিয়াস হোসেন নতুন পুরান খবরাখবরের রিমিক্স আর আজগুবি বিশ্লেষণ দিয়ে ধামাচাপা রাখছেন দেশের রদবদলের কাহিনী। তারা হয়তো মনে করছেন যে শেষপর্যন্ত তারেক জিয়াকে বর্তমানের মতো জীবিত কিন্তু মৃতের ভূমিকায় রাখা যাবে কিন্তু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তা মনে করেন না। তারেক জিয়ার উপরে তাদের অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। তারেক জিয়া দেশে মানে সবকিছু ওলটপালট।
সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের বর্তমান মারাত্মক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে যাই ভাবুক কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সচেতন হয়ে চুপচাপ অপেক্ষা করছেন। তারা বাজার দরের বাস্তব অবস্থা জানেন, তাদের ঘরের আন্দোলনকারী সন্তানরা না জানলেও। পাশাপাশি তাদের সন্তান ও ডঃ সাহেবদের বদৌলতে আন্তর্জাতিক যে পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হচ্ছে সেদিকেও তাদের নজর আছেন। তারা বলেন, “আমরা তো খালি তামশা দেখতাছি। এই তিনজন ডঃ সাহেব মিডিয়া নিয়া আবার এমন একটা খুনাখুনির পাঁয়তারা করছে যার কারণে হয়তো হাজার পঞ্চাশেক লোকজন মারা যাবে কিন্তু আবার দেশ তার নিজের মতো চলবে। ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ সাধারণ বাঙালী করেছে। সেই বাঙালী যদি বাজার করে সংসার চালাতে না পারে, যদি পরিবেশ বিপক্ষে চলে যায় তবে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে নেমে পরবে। যা দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি তারা সেদিকেই নিয়ে যাচ্ছেন।”
দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের মতেই, তারা পরিবর্তন চায় কিন্তু এরা শেষ পর্যন্ত মিলাতে পারবে না কারণ তারা মাত্র ১৫% -এরও কম ভোটার নিয়ে মাঠে আছে। তারেক জিয়ার বিএনপির ৩০% ভোট, আওয়ামী লীগের ৩০% ভোট এবং জাতীয় পার্টির ২৫% -এর অধিক ভোট ব্যাংকের একটা ভোটও তারা হিলাতে পারবে না প্রশাসন আর পুলিশ সেটাপ করেও। তাহলে তারা ক্ষমতায় যাবেন কিভাবে?
ওদিকে ডঃ আসিফ নজরুল ডঃ ইউনুসকে কেন্দ্র করে ডঃ শফিকুল রহমানের যে রাজনৈতিক সেটাপ দিচ্ছেন গণমাধ্যম হাতের মুঠোয় নিয়ে তার মূল লক্ষ্য জামায়াতের ক্ষমতায় যাওয়া এবং তারা এই লক্ষ্যে এতোটাই হার্ড লাইনে চলে গেছেন যে এর কোনো বিকল্প নাই, নয়তো প্রতিটি বিষয়ের জন্য মামলার সম্মুখীন হতে হবে যা যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক।
ডঃ আসিফ নজরুল, ডঃ ইউনুস ও ডঃ শফিকুল রহমানের ২০২৪ সালের ইতিহাস কার্যকর করতে হলে অবশ্যই জামায়াতকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে হবে নিজস্ব ১০% -এর কম ভোট ও জোটগত ১৫% ভোট নিয়েই।
এমতাবস্থায় এই ভোট বৃদ্ধি করার জন্য মরিয়া ডঃ শফিকুল রহমান। ওদিকে তিনি জামায়াতকে নমুসলিমদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে, নারীদের স্বাধীনতা দেয়া হবে এই গ্ৰীন সিগন্যাল দিয়েও কিন্তু এখন পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে ৩০% আওয়ামী, ৩০% তারেক জিয়ার বিএনপি আর ২৫% এর বেশী জাতীয় পার্টির ভোটাররা কেবলমাত্র চুপচাপ অবলোকন করছে। এই ৮৫% এর উপর সবাই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, বাজারে দরকষাকষি করে বাজার করে সংসার চালান।
বস্তুত বাংলাদেশ সকল ক্ষমতার উৎস এই ৮৫% সাধারণ মানুষরাই। এরাই সরকার চালায়, এরাই দেশে টেক্স ভ্যাট দেয়। এদের কাছেই আলু, পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচ বিক্রি করে শুল্ক আদায়ের মাধ্যমে টাকা মিলে যা দিয়ে পুলিশ প্রশাসন চলে। অতএব ডঃ আসিফ নজরুল যতোই মাথা চুলকাক তিনি তার রাজা বাঁচাতে পারবেন না কথিত বিটিভির সেই বিজ্ঞাপনের ডায়লগের ভাষায় বলতে হয়!
সাধারণ মানুষ সব দেখছেন। বাংলাদেশ গত ৫৪ ধরে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় চলমান ছিলো এবং ডঃ আসিফ নজরুল যাকে সস্তার কোনো বস্তু পঁচা গল্পের বইয়ের মতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তা মুছে ফেলতে কিছু লোকজন নিয়ে যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছেন এদেশের সাধারণ মানুষ তা অবলোকন করছেন। তাদের মতে তাদের চোখে ফাঁকি দেবার কোন উপায় নেই।
বাংলাদেশ সাধারণ মানুষের, এটা ১৯৭১ সালের থেকে কোন ভারত বা পাকিস্তানের ইচ্ছায় কোন দিন চলে নি, যে যাই বলুক সব বাজে কথা বলে তারা জানেন। গত ৫৪ বছর ধরে একটা ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে যে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে ছিলো ভবিষ্যতেও তাই থাকবে, এতে কারো কোনো সন্দেহ নেই।
এদেশের মানুষ শতভাগ নিশ্চিত, বাংলাদেশের ইতিহাস কেউ বদলাতে পারবে না। ‘বাংলাদেশের পতাকা কোন পাকিস্তানের বা ভারতের পতাকার তলে’, -একথা কেউ চিন্তা করলেও সে ভুল করবে, প্রয়োজনে লক্ষ বাঙালী জীবন দিয়ে দিবে, যা ওরা এখনও কেউ কল্পনাই করতে পারছে না….