নিয়াজ মোর্শেদ : জীবনে “উচ্চশিক্ষা” নিতে গিয়ে নানান ধরনের “শিক্ষা” হইছে। এক বন্ধু একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিল। তার ভাষ্যতেই বলছি।
একবার ক্লাসে বসে আছি, নতুন ইয়ারের শুরু, নতুন একজন মাস্টারসাব ক্লাস নিবেন। আমরা কেউ তাকে চিনিনা। সবার মধ্যে কানাঘুষা আর ফরিয়াদ চলতেছে, “আল্লাহ, এই বান্দা যেন ভালা আদমি হয়, এই ক্লাসটা যেন সুখে কাটে।”
এই করতে করতেই দরজা ঠেলে বান্দা ঢুকলেন। শারীরিক বর্ণনা দিচ্ছিনা, কারন তাতে পার্সোনাল আক্রমণ হইতে পারে।
তো যাইহোক, বান্দা ক্লাসে ঢুকেই কোন হাই হ্যালো ছাড়া মাথা নিচু করে বোর্ডের সামনে গিয়ে ডেক্ এ উঠে গেলেন। বান্দার মুখমণ্ডল অনুভূতিহীন – ইংরেজিতে যাকে বলে poker face. সেই পোকার ফেসের দিকে তাকিয়ে আমরা আমাদের ভবিষ্যত বুঝার চেষ্টা করছি। আল্লাহ কি ফরিয়াদ শুনল কিনা বুঝা যাচ্ছেনা।
শেষমেষ বান্দা মুখ খুললেন। খনখনে গলায় বললেন, “আপনারা তো পড়াশুনা করেন না, রেজাল্ট তো খুব খারাপ আপনাদের।”
এই এক বাক্য শুনে আমরা আমাদের ভবিষ্যত বুঝে গেলাম।
বহুদিন হয়ে গেল, এই বান্দার সাথে মানবিক, প্রাতিষ্ঠানিক কোন ধরনের সম্পর্কই আমাদের ভাল হয়নি। হবেও না কোনদিন। আর এই বান্দার ক্লাসেই আমাদের রেজাল্ট বরাবরই সবচেয়ে খারাপ।
অভিজ্ঞতা এই পর্যন্তই।
পৃথিবীর অনেক উন্নত জায়গায় ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় প্রাইমারি শিক্ষকদের। সবচেয়ে ট্যালেন্টেড, জেনারাস লোকগুলোকে দেয়া হয় গ্যাদা বাচ্চাদের “মানসিকতা তৈরির দায়িত্ব।” এ ফর আপেল, বি ফর বল পড়ানোর সাথে সাথে বাচ্চাদেরকে যে মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্মান, ভদ্রতাও শেখানো প্রয়োজন, সেটা আমাদের মনেই হয়না।
দুঃখের বিষয় হল, ফিজিক্স ম্যাথমেটিক্স আপনি ছোটবেলায় না শিখলেও কষ্টশিষ্ট করে বয়সকালে শিখতে পারবেন। কিন্তু ভদ্রতা, শিষ্ঠাচার, সম্মান এগুলা গ্যাদাকালে না শিখলে ইউনিভার্সিটির মাস্টার হয়েও শিখতে পারবেন না। শিখানো তো দূরের কথা!
শিক্ষকতার মতো মহান একটা কাজকে তখন আপনার কাছে নিছক একটা “সরকারি চাকরি” ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না।