ফেসবুক ভয়েজ : হালের তথাকথিত সৃজনশীল মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী, যিনি পেশায় একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক ও নাটক নির্মাতাও বটে তবে তাকে সমাজ বিধ্বংসের কারিগর না বললে বাঙালী জাতি ও সভ্যতার সাথে বেঈমানি করা হবে। এছাড়াও এই লোকের আরোও একটা বিশেষ পরিচয় আছে, তিনি হচ্ছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী তিশার স্বামী আর তিশা হচ্ছেন এ সময়ের নোংরা-ধারার অভিনেত্রী হিসেবে সর্বাধিক সমাদৃত।
উল্লেখ্য এদেশের মানুষ কখনও স্বপ্নেও ভাবেনি যে এই ফারুকী কখনও কোনো সরকারি মুখপাত্রও হতে পারেন কিন্তু যে লোকটা তার স্ত্রী তিশাকে সামনে রেখে আওয়ামী সরকারের আমলেও বহুত এমপি, মন্ত্রী, মিনিস্টার, শিল্পপতিদের প্রিয়পাত্র হবার সুযোগ পেয়েছেন সেই আজ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা বনে গেলেন! এছাড়াও ফারুকী ছোটবেলা থেকেই একজন মারাত্মক পর্যায়ের মাদকাসক্ত, তিশাকে বিয়ে করার পরে একাধিক টিভি শোতে জানিয়েছেন যে তিনি মাদক সেবন প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন এবং এসব কিছুই তিশার কৃতিত্ব।
এতো গেলো তার নিজস্ব চরিত্র ও রুচিবোধের কথা। এবার জানি তার কর্মধারা কেমন কি!?
তার আগে বলি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েছেন দেখে ফারুকীকে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাষায় ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। তেমনই একজন ইউজার লিখেছেন, “খ্যাতিমান এই চলচ্চিত্র পরিচালকের কাজ আমাদের কাছে অন্য দশজন বাঙালী চলচ্চিত্র পরিচালকের কাজের চেয়ে একটু বেশী জঘন্য বলে মনে হয়েছে।”
ফারুকী সম্পর্কে এসব কথা শুনে আপনি অবাক না ক্ষুব্ধ হচ্ছেন তা জানি না, তবে এছাড়াও এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বদৌলতে ফারুকী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার কাজটাও হাসিল করতে সক্ষম হয়েছেন যদিও শিক্ষা জীবনে মাদকাসক্ত ফারুকী তার মেধা ও যোগ্যতার বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।
এদিকে দেখা গেছে রেকর্ড পরিমাণে মাদক সেবনের ফলে সৃষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তাকে করেছে মানসিক ভারসাম্যহীন ও আজীবন নোংরা লোকজনের সাথে চলাফেরা করার কারণে তার মধ্যে জন্ম নিয়েছে বিকৃত রুচির এবং এই দুয়ের সমন্বয়ে উনার তৈরি করা ছবিতে কোনো আইটেম সং বা অত্যধিক নগ্নতা থাকে না বটে কিন্তু অনেকেই মনে করেন যে সুন্দর সামাজিক পরিবেশ ধ্বংসে এই লোকটা বেশ ভালো ভূমিকা রেখে চলেছেন এবং সৃজনশীল উপায়ে পারঙ্গমতার সাথে সে আপন মনে অশ্লীলতা ছড়িয়ে চলেছেন।
বন্ধুরা, আপনারা অনেকেই হয়তো ‘লিটনের ফ্ল্যাট’ শব্দটিকে আজও ভুলতে পারেননি। আর ‘লিটনের ফ্ল্যাট’ এ কথাটা শুনতেই যাদের..! তাদের কাছে তো আর এর অর্থ ভাঙ্গিয়ে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নাই, তাই নয় কি!?
যদি প্রশ্ন করি, জনপ্রিয় এ নোংরা টার্মটি বাংলা ভাষায় আসলো কোথা থেকে? বা কে এর উদ্ভাবক? হ্যাঁ, যিনি এদেশের নাটক ও চলচ্চিত্রে এসব এনেছেন তিনিই হচ্ছেন এই ঐতিহাসিক মাদকাসক্ত (অনেকের মতে সাইকো) ফারুকী। ২০০৩ সালে রিলিজ হওয়া তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘ব্যাচেলর ‘ছবিতে এ টার্মটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। একটা মেয়ে বিয়েতে আগ্রহী নয় এবং তার সাথে একঝাঁক ছেলে বন্ধুর (জাস্ট ফ্রেন্ড আরকি!) নানামুখী সম্পর্ক বর্ণিত হয়েছে ফারুকীর সমাজ ও সভ্যতা বিধ্বংসী এই ছবিটিতে। ফারুকীর নোংরা রুচির ওই ছবির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টাই ছিলো, মেয়টাকে মাঝে মাঝে ‘লিটনের ফ্ল্যাটে’ যাবার অফার দেয়া। সোজা বাংলায়, ‘বিয়ের চেয়ে লিভটুগেদার বেটার’ -এই কুৎসিত মানসিক রোগটি জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে দেয়ার ভরপুর চেষ্টাই ছিলো তার ওই ফিল্মের প্রধান টার্গেট যা বৃথা যায় নাই। আমরা সবাই জানি, ‘নিষিদ্ধ যেকোনো কিছুর প্রতি নবীনদের কৌতুহল বেশী’, আর ফারুকীও একথাটি মাথায় রেখেই ছবি বানানোর নামে সভ্যতার কোমড়ে ঠিকঠাক মতো ওই লাথিটা মেরেছিলেন, ফলশ্রুতিতে তার দুই বছর আগের সেই চাওয়াটি আজ পাওয়াতে রূপান্তরিত হচ্ছে!
পরবর্তীতে ফারুকী রিলিজ করেন তার আরোও জঘন্য গল্প অবলম্বনে ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ চলচ্চিত্রটি। ওখানে ফারুকী ‘পরকিয়া’ নামক নোংরাতম সম্পর্কটিকে খুব মহিমান্বিত ও অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা চাহিদা হিসেবে উপস্থাপন করে সাধারণ মানুষকে মানবিক ইস্যু হিসেবে মেনে নেয়ার সবক দিয়েছেন। “একজন মা’ ও তো মানুষ, তাই তার পরকিয়া করা দোষের কিছু নয়” -এটাই ছিলো তার ওই সিনেমার মূল বক্তব্য। এক্ষেত্রে বলতেই হয়, আমরা তো মনে করি ফারুকী কোনো ইহুদী নয়, তাহলে তার লিভটুগেদার, পরকিয়া এসব প্রমোট করার হটাৎ এমন কি প্রয়োজন পরে গেলো? উত্তরটা হয়তো ফারুকীই ভালো বলতে পারবেন।
মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর তৈরি সবচেয়ে বেশী বিদেশী প্রশংসা কুড়ানো চলচ্চিত্রটি নাম হচ্ছে ‘টেলিভিশন’। সেখানে দেখানো হয়েছে টেলিভিশন রাখার বিরোধী কারী একজন রক্ষণশীল মুসলিমও শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারেন যে ঘরে টেলিভিশন রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন ফেসবুক ইউজার বলেন, “টেলিভিশনের গুরুত্ব বোঝানোর তার এই চেষ্টার কারণ আমি যা বুঝতে পেরেছি তা হচ্ছে, টেলিভিশন না থাকলে তো ফারুকীর এসব সামাজিক (!) ফিল্মগুলো মানুষ দেখে সচেতন (!!) হতে পারবে না…
তার আরেকটি সুপরিচিত চলচ্চিত্রের নাম “ডুব” যা সদ্য প্রয়াত ভারতীয় অভিনেতা ইরফান খান অভিনীত। তার ওই চলচ্চিত্রটি পরিবারের প্রধান সদস্যের মৃত্যুর পরে দুইটি পরিবারের অটুট বন্ধনের কাহিনী নিয়ে চিত্রায়িত। গল্পের মূল ইস্যু, একজন মধ্যবয়স্ক লেখক এক তরুনীর প্রেমে পরেন যে তার মেয়ের বন্ধু। তারপর …
“এক ফিল্মে মাকে দিয়ে পরকিয়া! আরেকটিতে বাবাকে দিয়ে মেয়ের বান্ধবীর সাথে প্রেম! বাহ্ রে ফারুকী! অসামাজিক বাংলাদেশের মানুষকে সামাজিক করার কি ভয়ঙ্কর প্রচেষ্টাই না তোর, তুই দেখতে সুন্দর হলে ‘কুত্তার বাচ্চা ফুটফুটে সুন্দর’ গানটা তোকে উৎসর্গ করতাম”, মন্তব্যটি জনৈক ব্যক্তির, আমার নয়।
তার সর্বশেষ যে ছবিটি মুসলিমদের প্রতিবাদের মুখে সেন্সর বোর্ডের আটকে আছে সেটা হলি আর্টিজেনের হামলার ঘটনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত। ফারুকী ওখানে ইসলামের উপর কি আঘাত করেছে তা আল্লাহই জানেন, যেহেতু সেন্সর বোর্ড পর্যন্ত প্রচারের অনুমতি দিতে সাহস করছে না! অতএব কঠিন কিছু তো হবেই…
এদিকে ফারুকী তো নাছোড় বান্দা! ছবিটা রিলিজের জন্য কোমরে গামছা বেঁধে নেমেছেন। যে করেই হোক ছবিটার মুক্তি তার চাইই চাই! আর এমতাবস্থায়ই সে এদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধরদের একজন বনে গেলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পদমর্যাদা লাভ করে! কারো কারো মনে প্রশ্ন জেগেছে, “তাহলে কি এবার তার সেই কাঙ্খিত রিলিজটি মিলে যাচ্ছে পানির দরে!?”
বন্ধুরা, এতক্ষণ বলেছিলাম ফারুকী নির্মিত ফিল্মের কথা, নাটকের কথা আজ থাক, অন্যকোনো দিন বলবো ইনশাআল্লাহ। তবে আর একটা কথা না বললেই নয়, তার নির্মিত প্রায় সকল চলচ্চিত্রেই প্রধান নারী চরিত্রে ছিলো তার ওয়াইফ তিশা। আপনারা হয়তো অনেকেই অবগত যে তিশা গত বছর দুয়েক আগে সমকামীদের অধিকার (!) নিয়ে প্রথম বাংলাদেশী নাটকের অন্যতম চরিত্রে অভিনয় করেছেন! কি আর বলবো বলেন, এর নাম বুঝি স্বাধীনতার অধিকার, এসবই বুঝি বাঙালী সভ্যতার নাম…
মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর উপদেষ্টা হবার পরে অপর এক ব্যক্তি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “হাজব্যান্ড-ওয়াইফ মিলে ভালোই শুরু করেছেন। অবশ্য বাঙালীদের তারা দুজন উঠাতে যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তার মধ্যে কোন ত্রুটি করছেন, এমন কথা বলার সুযোগ নেই। এদেশের মানুষদের জাতে উঠানোর জন্য তারা পরকিয়া, লিভটুগেদার, সমকামীতা, অসংলগ্ন প্রেম ইত্যাদিকে প্রমোট করা শুরু করেছেন যেসবের ইঙ্গিত ও ডায়লগের মধ্যে সুক্ষ্মভাবে ইসলামী কালচারের উপর আক্রমণ তো থাকছেই। এসব কারণে এশিয়া সিনেমা ফান্ড ফর পোষ্ট-প্রোমডাকশন এওয়ার্ড সহ দেশি-বিদেশি এওয়ার্ডের তার কোনো অভাব নাই। সে ছাড়া কোন বাংলাদেশী পরিচালক এতবেশী আন্তর্জাতিক সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। ওদিকে ফারুকী হয়ে উঠেছেন তরুণ পরিচালকদের আইডলে।
অশ্লীলতার প্রসার ও সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টির এই কারিগররাই যখন জাতির সেলিব্রিটি, আইডল। তৈরি করেছেন জিয়াউল হক পলাশ ও বান্নার মতো পরিচালক ও অভিনেতাদের যারা অশ্লীল কথাবার্তাকে নাটকের আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। পরিবারে ভাঙন , দাম্পত্য কলহ, ব্যভিচারের পক্ষে জনমত গড়ে তুলছে এ ফারুকীরা। দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে খুব কাঁদা ছোড়াছুড়ি করতে পারি কিন্তু জাতির শত্রুদের চিনতেও পারি না। এদের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো দেশে কোন মানুষ নেই। তখন ভবিষ্যত বাংলাদেশ আরো খুব সুন্দর হবে বলে কী আশা করতে পারি!!”
উল্লেখ্য যে দেশের রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে বেশী দাপুটে জামায়াত শিবির। ‘আওয়ামী লীগ তো চুলায় গেছে বিএনপি যেনো সতীনের ছেলে! প্রতিদিনই মরে, প্রতিদিনই ধরে, প্রতিদিনই গণমাধ্যম বিভিন্ন রং দিয়ে সং সাজিয়ে উপস্থাপন করতেও কমতি রাখছে না দোকানদার সাংবাদিকরা’। ওদিকে জামায়াতের আমীর থেকে শুরু করে যেকোনো সমর্থকের একটাই বাণী, ‘সরকার হবার সুযোগ পেলে তারা নাকি দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করবেন’। কিন্তু সরকার না হলেও ক্ষমতা নামক যাদুর চেরাগটি এখনই শিবিরের হাতে, তবুও ফারুকীরা জাতির কর্ণধার হয়ে গেলেন, ক্ষমতায় গেলে….! কেমন করে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করবে, বলতে পারেন!?
জামায়াত শিবিরের সবাই রুটিন করে নামাজ আদায়, কোরআন পাঠ, দান খয়রাত, দোয়া দাওয়াত থেকে শুরু করে দলীয় চাঁদার টাকাও দিয়ে থাকেন! যদিও মহান নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী জামায়াতকে ইসলামী দল মনে করতে নারাজ কিন্তু তাদের দলে আইন শৃঙ্খলা অত্যন্ত কঠিন হাতে নিয়ন্ত্রিত হয় দেখে অনেক গুণীজন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহোদয়রা পর্যন্ত বলেছেন, “তাদের কাছে শেখার আছে…”, কিন্তু নির্দলীয় ছাত্রজনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটার পরে আন্দোলনের মাস্টার মাইন্ড’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছেন যে তারা নির্দলীয় নয়, তারা শিবির সদস্য এবং তারা তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু এখন দখলে নিয়ে দেশের জন্য সুফল এনে দেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কিন্তু একজন মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী সেক্ষেত্রে কেমন উদাহরণ হতে পারে?
তাছাড়া পৃথিবীতে সর্বাধুনিক সুদের ব্যবসার সুত্র আবিষ্কার করে রাস্তার ভিখারিনীকেও সুদে টাকা দিয়ে তা কিস্তিতে কিস্তিতে সফল ভাবে আদায় করার মাঠ পর্যায়ের সফলতা দেখিয়ে পৃথিবীকে অবাক করে দিয়েছেন মেধাবী ডঃ ইউনুস। অর্থনীতিতে তার এই সফলতায় ফিদা হয়ে তাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। সেই নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুস বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আর তার দরবারের উপদেষ্টা মন্ডলীদের মধ্যে নতুন করে যোগ করা হয়েছে মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর মতো মারাত্মক ফিল্ম মেকারকে!
ইসলামের পক্ষে না বিপক্ষে, দেশে আসলে কি হচ্ছে, জাতির ভবিষ্যৎ কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে, -এনিয়ে এখন দেশের মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত! বাধ্য হয়েই সবাইকে ভাবতে হচ্ছে, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলটা আসলে কি? মাকাল ফল নয় তো!?
#সাফকথা
একটি ভিডিও ক্লিপ সংযুক্ত করা হয়েছেঃ