নিজস্ব প্রতিবেদক : ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে ১০জন উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম! ব্লকেডসহ বহুবিধ কর্মসূচির হুমকি!!
যে আবু সাঈদের রক্তে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন রুপ নিয়েছিলো গণঅভ্যুত্থানে, যে আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল রংপুর, সেই আবু সাঈদের রংপুর থেকে উপদেষ্টা পরিষদে কেউ জায়গা না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পরলেন শিক্ষার্থীরা ৷ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরাঞ্চল থেকে ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন রংপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা, উত্তরবঙ্গ অচল করে দেবার হুমকিও দেন তারা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত সোমবার (১১ নভেম্বর) দু’দফায় রংপুরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা।
তারা দাবি করেন যে বৈষম্য দূরীকরণে যে বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে তার ফলাফল শূণ্য হতে চলেছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে বেরোবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। এ সময় বেরোবির অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, ‘১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের আবু সাঈদ। তার মৃত্যুর পরে মুহুর্তের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন গণআন্দোলনে রুপ নেয়। যার ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান। কিন্তু যে বৈষম্য দূরীকরণে আমাদের সংগ্রাম, রক্ত দেয়া তা থেকে আমরা এখনও রেহাই পাইনি। উত্তরবঙ্গের আবু সাইদের প্রাণ দিল আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বেশিরভাগ উপদেষ্টাই দক্ষিণবঙ্গের। এই বৈষম্য আমরা মেনে নেবো না।’
বেরোবি শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জয় বলেন, ‘শপথ নেয়ার পরের দিন রংপুরে এসে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন রংপুর হবে বাংলাদেশের এক নম্বর জেলা কিন্তু এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো তৎপরতা আমরা দেখতে পাইনি। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হলেও রংপুর থেকে এখন পর্যন্ত একজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই আমাদের দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে উপদেষ্টা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তা না হলে রংপুর ব্লকেড কর্মসূচিসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
এর আগে বিকেলে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারে রংপুর বিভাগ থেকে উপদেষ্টা না রাখাকে ‘চরম বৈষম্য’ দাবি করে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে ছাত্র-জনতা।
অবিলম্বে উত্তরবঙ্গ থেকে অন্তত ১০ উপদেষ্টা নিয়োগসহ সকল বৈষম্য দূর করতে সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। অন্যথায় রংপুরকে অচল করতে ‘উত্তরবঙ্গ ব্লকেড’ কর্মসূচিসহ বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলেন, শহীদ আবু সাঈদের রক্তে রঞ্জিত উত্তরবঙ্গের প্রতি বৈষম্য বন্ধ করা না হলে বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মানুষ রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। আমাদের অবহেলিত এই অঞ্চলের মানুষেরা আন্দোলন সংগ্রাম করে, জীবন দেওয়ার পরও কেন বৈষম্যের শিকার?
তাদের প্রশ্ন, শুধু কি চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, ঢাকাসহ দক্ষিণ অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা খুঁজে পাওয়া যায়? রংপুর-রাজশাহী বিভাগ থেকে কেন উপদেষ্টা রাখা হচ্ছে না? কাদের ইশারায় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত ও বিতর্কিতরা উপদেষ্টা হচ্ছেন। আর কারাই বা রংপুরকে পেছনে ফেলে রাখার ষড়যন্ত্র করছেন, তা উত্তরবঙ্গের মানুষ জানতে চায়।
এছাড়াও ছাত্র-নেতারা আরও বলেন, আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি আর কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা রংপুর সফরে এসে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করে রংপুর বিভাগকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবতায় এখন ভিন্ন। দফায় দফায় উপদেষ্টা নিয়োগ হলেও আবু সাঈদের অঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত একজনও নেই। অথচ জুলাই বিপ্লবের টার্নিং পয়েন্টে ছিল রংপুর থেকে গড়ে উঠা আন্দোলন-সংগ্রাম।
মঙ্গলবার সরকারি অফিস চলাকালীন উপদেষ্টা নিয়োগের ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তা না পেলে সারা দেশের সঙ্গে রংপুর বিভাগের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারিও দেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা।