নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ জুমার নামাজের ইমামতি কে করবেন তা নিয়ে দুই দলের মধ্যে বিবাদ ও সংঘর্ষের একটি নেককার জনক ঘটনা ঘটেছে, যা প্রমাণ করে যে তারা আসলে ইসলামের বিধান না’মানা তথাকথিত মুসলিম।
আজ শুক্রবার জুমার নামাজের আগে এই ঘৃণিত সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মসজিদের ভেতরে ভাঙচুরও চালানো হয়।
উল্লেখ্য যে অতীতে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কারণে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে বিভিন্ন রকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা গেলেও মসজিদের ভেতরে এবারের মতো ভাঙচুর ও হামলা শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং ইসলাম জাহানের জন্য একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
এ ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দ্রুত ছড়িয়ে পরে সামাজিক মাধ্যমে এবং মসজিদের ভেতরে এ ধরনের ঘটনা ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে।
🔘 ঘটনার সূত্রপাতঃ
একথাটি সর্বজনীন যে বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশের মুসলিমদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আর তাই এখানে জুমার নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে আসেন।
বাইতুল মোকাররম মসজিদে সাধারণত জুমার নামাজের ইমামতি করেন মসজিদের খতিব। তবে খতিব মোহাম্মদ রুহুল আমীন গত জুলাই থেকে অনুপস্থিত থাকায় এতদিন এ দায়িত্ব পালিত হয় অন্য দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে।
স্থানীয় কোনো কোনো গণমাধ্যমে খতিব আমীনের এই অনুপস্থিতিকে ‘সরকার পতনের পর আত্মগোপনে’ যাওয়া হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে তার এই অনুপস্থিতির কারণ তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। প্রায় দুই মাস পর আজ শুক্রবার তিনি মসজিদে আসেন।
এদিকে আজকের জুমার নামাজের ইমামতির জন্য আগে থেকে দায়িত্ব দেওয়া ছিল মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারীকে। এমতাবস্থায় খতিব রুহুল আমিনের উপস্থিতি টের পেয়ে আবু ছালেহ পাটোয়ারীসহ কয়েকজন মুসল্লি খতিবের কক্ষে গিয়ে খতিব রুহুল আমীনকে জুমার নামাজে ইমামতি থেকে বিরত থাকতে বলেন তারা।
আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় অনুরোধ করা’ হয়েছে। অন্যদিকে রুহুল আমিন বলছেন তাকে ‘দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেয়া’ হয়েছে।
এরপর, খতিবের কক্ষ থেকে বের হয়ে গিয়ে খুতবায় দাঁড়ান পাটোয়ারী। কিছুক্ষণ পর সেখানে গিয়ে উপস্থিত খতিব রুহুল আমীন এবং মিম্বারে (ইমামের দাঁড়ানোর স্থান) অবস্থান নেয়াকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা দেখা দেয় তাদের দুইজনের সঙ্গে থাকা দুই দল মুসল্লিদের মধ্যে।
পরস্পরের অভিযোগ থেকে জানা যায়, তাদের দু’জনের সঙ্গেই বেশ কিছু অনুসারী ছিলেন। একপর্যায়ে উপস্থিত থাকা নামাজ আদায় করতে আসা সাধারণ মুসল্লিরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান, শুরু হয় হাতাহাতি ও ভাংচুর!
আবু সালেহ পাটোয়ারী মিডিয়াকে বলেন, “আমি খুতবা শুরু করেছিলাম। উনি দলবল নিয়ে এসে জোর করে মিম্বারে দাঁড়ায়। আমাকে একজন সরে যেতে বলে। আমি সরে দাঁড়াই।”
অন্যদিকে রুহুল আমীন বলেন, “ওনার (পাটোয়ারী) সঙ্গেরা লোকেরা হট্টগোল করছিল। মুসল্লিরা আমাকে প্রটেকশন(নিরাপত্তা) দিয়ে রাখেন। আমি বয়ান শুরু করি। এর মধ্যে উনি(পাটোয়ারী) আমাকে বলেন, আপনি নামেন।”
যদিও, আবু সালেহ পাটোয়ারী বলছেন, খতিবের নিরাপত্তা এবং উদ্ভুত পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় তাকে চলে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি আর ‘নিরাপদ’ মনে না হওয়ায় স্থান ত্যাগ করেন মোহাম্মদ রুহুল আমীন। খতিব রুহুল আমীন ঘটনাস্থল ত্যাগ করলেও ততক্ষণে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষে।
আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, মসজিদের প্রবেশদ্বারগুলোতে তার(আমীন) লোক দাঁড়িয়েছিল। তারা সাধারণ মুসল্লিদের মারধোর করেছে।
তবে, রুহুল আমীনের পাল্টা অভিযোগ, হট্টগোল করেছে পাটোয়ারীর সঙ্গে থাকা লোকেরা।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, জুতা রাখার বাক্স, জুতা ছুড়ে মারছেন মুসল্লিরা। মসজিদের দরজা-জানালাও ভাঙচুর করা হয়।
ভিডিওতে মুসল্লিদের একাংশকে আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান দিতে শোনা যায়। ওদিকে মাইকে বার বার মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার আহ্বানও জানানো হচ্ছিল। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। দুই খতিবই এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সুষ্ঠু সমাধান চাইবেন বলে জানিয়েছেন।
🔘 ‘মুসল্লি কমিটি’
ঘটনার শুরুতে খতিবের রুমে যারা গিয়েছিলেন তারা নিজেদেরকে ‘মুসল্লি কমিটি’ বলে পরিচয় দেন।
খতিব রুহুল আমীনের অভিযোগ তাদের একটি রাজনৈতিক পরিচয় আছে। আবু সালেহ পাটোয়ারী বলছেন, তারা মসজিদের সাধারণ মুসল্লি। এছাড়াও আবু সালেহ পাটোয়ারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন উপ-পরিচালকও বটে। তিনি বলেন, সাধারণ মুসল্লিরা মিলে একটি কমিটির মত গঠন করেছেন। যেটি মুসল্লী কমিটি হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে গত ৫ই অগাস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রদবদল দেখা গেছে।
কোথাও সরকারের নির্দেশে বদলি বা অবসরে পাঠানো হয়েছে। কোথাও ‘ফ্যাসিবাদের দোসর বা সুবিধাভোগী’ হিসেবে উল্লেখ করে বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে কেউ কেউ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। এবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমেও সেই রাজনৈতিক প্রভাবেরই সরাসরি উপস্থিতি সকলের নজর কাড়ে!
(তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা)