নিজস্ব প্রতিবেদক : ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের স্মরণে চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী চলছে স্মরণ কালের স্মরণীয় “শহীদি মার্চ “। ছাত্র জনতার রক্ত সাগরের ফিরে পাওয়া স্বাধীনতা রক্ষায় আবারো প্রয়োজন হলে রাজপথে থাকবে ছাত্র-জনতা। চলছে রাষ্ট্রের সংস্কার। বৈষম্য বিরোধী দেশ গড়ার শপথ। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের এক মাসের পূর্তিতে দেশব্যাপী চলছে নানা কর্মসূচি। ছাত্র জনতার “শহীদি মার্চ” এ লাখো জনতার ঢল।গণভবন হবে “স্মৃতি জাদুঘর”। বিচারের আগে ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসন হওয়ার সুযোগ নেই।
সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদদের পুনর্বাসন হওয়ার সুযোগ নয়। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ আর দলীয় কার্যক্রম চালাতে পারবে না অন্তবর্তিকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা পরিষদের পঞ্চম বৈঠকে তিনি এসব তথ্যে আরো বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫সেপ্টেম্বর) বিকেলে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
উপদেষ্টা পরিষদের এই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তির দিনে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত হয়। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুনর্বাসন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পেয়েছি। যেহেতু আমরা ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে গঠিত একটি সরকার, আমরা মনে করি, সম্পূর্ণ বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদীদের পুনর্বাসনের সুযোগ নেই।’
সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত ফ্যাসিবাদীরা দেশে পুনর্বাসনের সুযোগ পাবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে তাদের বিচার নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফ্যাসিবাদী দল ও জোটকে প্রকাশ্যে কর্মসূচি (পাবলিক প্রোগ্রাম) পালনের ক্ষেত্রেও সরকার নিরুৎসাহিত করবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী যে রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক জোট বাংলাদেশে যে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল, সম্পূর্ণ বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না, এই প্রশ্ন জনগণের কাছে ছেড়ে দিয়েছি। তবে পাবলিক প্রোগ্রাম (প্রকাশ্য কর্মসূচি) করার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে ভাবছি, সেটাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। সেটি এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। তবে আমরা অবশ্যই নিরুৎসাহিত করব। সম্পূর্ণভাবে বিচারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।’ তিনি বলেন, বিচারের বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় দেখছে। কীভাবে বিচার হবে, সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় দ্রুত একটি রূপরেখা প্রকাশ করবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে।
আওয়ামী লীগ দল হিসেবে কার্যক্রম চালাতে পারবে কি না, ব্রিফিংয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, এ বিষয়ে দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। যেহেতু আওয়ামী লীগ দেশে একটি গণহত্যা ঘটিয়েছে, সেই গণহত্যার দায় নিয়ে তারা কীভাবে ফিরবে বা তাদের ফিরতে দেওয়া হবে কি না, এটি দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। এটি জনগণের সিদ্ধান্ত।
“জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর” উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, গণভবন জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি এবং বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যত অন্যায়, অবিচার হয়েছে, তার সবকিছু সংরক্ষণ করার জন্য এটাকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
দ্রুতই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হবে, জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, গণভবন যে অবস্থায় আছে, জনগণ যেভাবে রেখেছে, সে অবস্থায়ই রাখা হবে। এর মধ্যে ভেতরে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে। যাতে অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষিত থাকে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তিনি জানান, বিভিন্ন জায়গার অভিজ্ঞতা নিয়ে এই জাদুঘর করা হবে। এ বিষয়ে খুব দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গণপূর্ত ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজটি সম্পন্ন করবে।
উল্লেখ্য, উপদেষ্টা প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারতে অবস্থানকালে সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রীর চুপ থাকা উচিত। ’ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মন্তব্য করাএকটি ‘অবন্ধুত্বসুলভ’ আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশ-ভারত ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগ এবং এ ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ প্রকাশ সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটি শুধুই একটি অজুহাত।’ এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থাকে এভাবে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে ধরার চেষ্টার বিষয়টি একটা অজুহাত।’
তিনি বলেন, শুধু হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে, নয়াদিল্লিকে এমন আখ্যা দেওয়া অবশ্যই বাদ দিতে হবে। বিষয়টি এমন নয় যে সেখানে একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গেছেন তিনি। গণ-অভ্যুত্থান ও জনরোষের মুখে তিনি পালিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ভারতের সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন।
গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনার এক বিবৃতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে শেখ হাসিনা
‘ন্যায়বিচার’ দাবি করে বলেন, সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, হত্যাকাণ্ড ও লুটপাটে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে চিহ্নিত করতে ও সাজা দিতে হবে। এমন নানা নেতিবাচক দাবিতে দাবি অভিযোগ তুলেন শেখ হাসিনা।
এদিকে দেশব্যাপী ও চট্টগ্রামে চলছে শহীদী মার্চে ছাত্র-জনতার ঢল। ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের একমাস পূর্তি উপলক্ষে দেশব্যাপী ‘শহীদী মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। চট্টগ্রামে এই কর্মসূচি পালিত হয় নগরের ষোলশহর স্টেশনে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ছাত্র–জনতার ঢল নামে এই কর্মসূচিতে। স্লোগানে স্লোগানে আবারও উত্তাল হয়ে উঠে চট্টগ্রামের রাজপথ।
৫ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টার পর ষোলশহর স্টেশন থেকে মিছিল নিয়ে বহদ্দারহাট এলাকা ঘুরে মুরাদপুর এলাকায় গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়। এ সময় ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমাদের শহীদেরা, আমাদের শক্তি’, ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আইয়ুব–মুজিব–হাসিনা স্বৈরাচার মানি না’, ‘শহীদের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’স্লোাগানে উত্তাল হয়ে উঠে চারদিক। পরে মিছিল নিয়ে মুরাদপুর ও বহদ্দারহাট মোড়ে গিয়ে সবাই দৃপ্ত কণ্ঠে শপথ নেন ‘এই লড়াই শেষ লড়াই নয়। আমাদের লড়াই চলবে।’