বিশেষ প্রতিবেদন : ওদিকে পাকিস্তানে চলছে সরকার বিরোধী আন্দোলন, যেখানে দেখা যাচ্ছে অগণিত বাংলাদেশের পতাকা! যা আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে গণ্য!
এই পোষ্টটি লেখার কারণ হচ্ছে, ইদানিং যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল একাধিক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেশকিছু বাংলাদেশের পতাকাও উড়ছে! পাশাপাশি বাংলাদেশ কথাটা উচ্চারণ করা হচ্ছে! এদিকে বেশকিছু বাঙালীরাও যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়টিকে এমন ভাবে বাহবা জানাচ্ছেন, এযেনো তাদেরই আরেকটা আন্দোলনের অংশ, তারাই চায় পাকিস্তানের বর্তমান সরকারের পতন ঘটুক কিন্তু এবিষয়ে আন্তর্জাতিক আইন কি বলে?
বিশ্ব মানচিত্রে পাকিস্তান একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ যেমন আমাদের বাংলাদেশ। প্রতিটি দেশের নিজস্ব অধিকার বলে একটি বিশেষ বিষয় আছে যে বিষয়ে কোনো বহির্বিশ্বের কেউ হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে পাকিস্তানের জনগণ তাদের সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে নেমেছে। এক্ষেত্রে একটি কথা উল্লেখ্য যে পাকিস্তান আজীবন একটি অশান্তিময় ও হানাহানির দেশ বলে সারাবিশ্বে পরিচিত। পৃথিবীর যেকয়টি দেশে রেকর্ড পরিমাণ মার্শাল’ল এসেছে তন্মধ্যে পাকিস্তান তিনটির মধ্যে একটি।
মার্শাল’লঃ- শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য সেনা আইন প্রযোজ্য হয়। আবার, সামরিক আইন বলতে বহিরাক্রমন, অভ্যন্তরীন বিদ্রোহ, দাংগা হাংগামা প্রতিহত করে শান্তি শৃংখলা রক্ষা করার জন্য সামরিক বাহিনী কর্তৃক যে বিশেষ জরুরী অবস্থা জারী করা হয় তাকে সামরিক আইন (Martial Law) বলা হয়।
পাকিস্তানের মার্শাল’ল বা সামরিক শাসনের ইতিহাসঃ- ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর যে পাকিস্তানের জন্ম, সেখানেও বার বার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। ১৯৫৮ থেকে ১৯৭১, ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৮ এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিন দফায় সেনাবাহিনীর শাসন জারি হয়েছিল পাকিস্তানে।
এদিকে তথ্য মতে জন্ম থেকেই পাকিস্তানিরা একটি অশান্ত ও রুক্ষ মেজাজের ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ। এরা কেউ কাউকে মানতে নারাজ তাই এই মুসলিম দেশটির অভ্যন্তরে আজীবন দাঙ্গা হাঙ্গামা লেগেই থাকে। ওদেশের ঘরে ঘরে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি, কেউ কাউকে মানে না, একটা রুক্ষ স্বভাবের মারমুখী, মুসলিম হলেও অধিকাংশই সমকামী মানসিকতার এই পাকিস্তানীরা। উল্লেখ্য যে সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমবেশী প্রবাসী পাকিস্তানের নাগরিক মেলে। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, তাদের ওই সব চারিত্রিক কারণে তারা বিশ্বের সকল দেশের মানুষের কাছেই একটা এড়িয়ে চলার মতো শ্রেণী এবং পারতপক্ষে প্রায় সবাই পাকিস্তানিদের এড়িয়েও চলেন বটে মূলতঃ তিনটি কারণে: ১) এরা মারমুখী ও শারীরিক হয়রানি মুলক আচরণকারী; ২) এরা মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজের সাথে জড়িত থাকে নির্ভয়ে; ৩) এরা যেকোনো মুহূর্তে প্রতারণা করে বসতে পারেন।
(🔴 আমার এই পোস্টটি প্রবাসীরা যারা দেখছেন তাদের কারোর কাছে আমার প্রদত্ত এই তথ্য বিষয়ে কোনো প্রকারের দ্বিমত থাকলে প্রকাশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি)
ওদিকে ১৯৭১ সালে আমরা বাঙালীরা একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে প্রায় ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও অগণিত মাবোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে এই পাকিস্তানীদের কাছ থেকেই মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দেশ লাভ করেছি। উল্লেখ্য আমরা যে কেবলমাত্র ১৯৭১ সালের যুদ্ধেই পাকিস্তানিদের হাতে জানমাল, ইজ্জত, অধিকার বিসর্জন দিয়েছি শুধু তাই নয়। বাংলাদেশের মানুষের জন্য ১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান আমল হিসেবে গণ্য ছিলো এবং এসময়ে পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজনের গোলাম হিসেবে জীবন যাপন করেছেন প্রতিটি বাঙালী। ১৯৫০ সালে ভূমি সংস্কারের অধীনে ব্রিটিশ আমলে প্রবর্তিত জমিদার ব্যবস্থা রদ করা হয় কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও বাঙালী পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানিদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল যা একটি চক্রান্তও বটে। সে এক বীভৎস ইতিহাস…
এমতাবস্থায় ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম মুক্তিযোদ্ধারা ভয়ঙ্কর পাকিস্তানী সেনাদের সাথে যুদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনেন, এরফলে আমরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাই বাংলাদেশ নাম, একটি লাল সবুজের পতাকা, একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকার এবং এ যুদ্ধের একমাত্র তূর্য বাদক ছিলেন বিশ্বের কাছে শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে সমাদৃত শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বাঙালী জাতির সাধারণ মানুষ কোনোদিনই তাদের অধিকার ফিরে পান নি। ৭১-এর আগে এই জাতিটিকে শোষণ করেছে ভিনজাতি তথা পাকিস্তানীরা আর ৭১-এর পরে তা করে স্বদেশী ক্ষমতাধর সরকার। গত ৫৪ বছর ধরেই এদেশের মানুষের সাথে এই লুটেরা সুলভ আচরণ করে যাচ্ছে এদেশের যখন যেদল সরকার হয় সেই দলের লোকজনেরা এবং তাদেরকে মদদসহ লুটপাটের ট্রেনিং ও সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন বিভিন্ন দেশের অন্ধকারে থাকা কুচক্রী মহল।
তবে এতোকিছুর পরেও বাঙালী ও বাংলাদেশের কোন কিছুই কখনো পৃথিবীর কোনো দেশে এমনভাবে ব্যবহার হয়নি যার কারণে কোনো দেশের কাছে বাংলাদেশকে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধের অপরাধী বলা যাবে কিন্তু ৭১ সালের পরে এবার প্রথম তার ব্যতিক্রম দেখা গেছে। এদিকে বাংলাদেশে চলছে ছাত্র আন্দোলন। ছাত্রসমাজ আন্দোলন করে আওয়ামী সরকারের উৎখাত করে বর্তমানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধিনে রয়েছে বাংলাদেশ, ওদিকে পাকিস্তানে চলছে সরকার বিরোধী আন্দোলন যা তাদের ইতিহাসের সহজাত বিষয় বলা চলে। এমতাবস্থায় পাকিস্তানের আন্দোলনকারীদের মধ্যে অজানা কে বা কারা ওই আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশের পতাকা, বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করছে যার কারণে আন্তর্জাতিক পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কেননা একটি দেশের পতাকা অপর একটি দেশে ওড়ানোর জন্য কিছু বৈধতার প্রয়োজন হয়, যা সেই দেশের সরকারের অনুমোদনের অংশ বলে গণ্য।
আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমাদের বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার। আমরা জানি যে তিনি একজন ফৌজি তথা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য, অতএব তিনি এসব আন্তর্জাতিক আইন ভালো করেই জানেন বলে মনে করি। পাকিস্তানের আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশের কোন সম্পর্ক নাই এবং যেহেতু আমাদের কাছে তথ্য মিলেছে যে ওই দেশের সরকার বিরোধী আন্দোলনে আমাদের দেশের পতাকা ও নাম ইস্তেমাল করা হচ্ছে তাই আমাদের দেশে অবস্থিত পাকিস্তানের দূতাবাসের কাছে বিষয়টি অবগত করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মাধ্যমে এই মর্মে জানানো হোক যে আসলে আমরা এসবের সাথে জড়িত নই এবং আপনারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্ৰহন করুন।
উল্লেখ্য, আমাদের কিছুতেই ভুলে গেলে হবে না যে পাকিস্তানিরা একটি উগ্ৰ মানসিকতার মানুষ, ওদেশের চলমান আন্দোলন তাদের সরকার বিরোধী আন্দোলন এবং প্রতিটি দেশের সরকার আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় কিছু বিশেষ বিশেষ অধিকার রাখে যে কারণে আজ নয়তো কাল এসব কারণে তারা যদি বিশ্বের দরবারে বলে যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সরকার বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের উস্কানি ছিলো তবে বিশ্বের কাছে আমরা অযথাই অপদস্থ হবো একথাটি বলাই বাহুল্য।
একটি ভিডিও সংযোজিতঃ