hpm dp 2 20240805150040

ফেসবুক ভয়েজ : বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী কালে এই দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে বা আপন করে রাখতে কে কি বলেছেন বা করেছেন না করেছেন সেটা নিয়ে এখানে আলোচনা করতে চাই না। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আমেরিকার সমস্যা ছিলো সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়েই। আর এটাই ছিলো তাকে হত্যা করার মূল কারণ। ইনফ্যাক্ট বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক অদ্বিতীয় চরিত্র যে পৃথিবীর কাউকে পরোয়া করে চলতেন না এবং তিনি এমনই একটা কেরেকটার ছিলেন যে তিনি বেঁচে থাকলে আজকের পৃথিবীতে অন্তত এশিয়া নিয়ে মাতুব্বরি করে এমন হেডম কারো থাকতো না, তাই তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার মেইন প্লানটা এসেছিলো আটলান্টিকের ওপার থেকে।

রাজনৈতিক রেষারেষি বা ক্ষমতার লোভে অনেকেই অনেক পাকনা পাকনা কথা বলে কিন্তু ১৯৭১-এ দেশ স্বাধীন হয়েছে, পাকিস্তান এদেশটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে গেছে, তারপর যা কিছু সামান্য ছিলো তাও ভারতীয় সৈন্যরা সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে, অর্থাৎ এটলাষ্ট বাকি ছিলো শুধু সাড়ে সাত কোটি ক্ষুধার্ত বাঙালী আর বাংলার মাটি এছাড়া কিছুই ছিলো না বলা চলে। আর এমতাবস্থাতেই এই দেশের দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের মসনদে বসেছিলেন অনন্য নেতা বঙ্গবন্ধু এবং যুদ্ধ শেষে যেভাবে তাৎক্ষণিক ভারতীয় সৈন্যরা এদেশ থেকে বিদায় হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারণে তা পৃথিবীর জন্য একটা অন্যরকমের ইতিহাস।

তখন‌ও সকল মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হাতে ছিলো অস্ত্র, অন্যদিকে দেশে থাকার মধ্যে ছিলো অভাব আর ক্ষুধা। এভাবেই দু’বছর যেতে না যেতেই ৭৪-এর দুর্ভিক্ষ।

১৯৭৪ সালের বন্যার পরে দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশের যে হাল হয়েছিলো….! এইসময়ই ট্রাম কার্ডটা খেলে দিয়েছিলো আমেরিকা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে থাকা আমেরিকা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই বঙ্গবন্ধুর সাথে পিরিতি করতে খুব চেষ্টা করা শুরু করলেও বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই জিনিস। এর উদাহরণ হচ্ছে, তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে একদিকে বাংলাদেশে সফর করতে আনেন আর অন্যদিকে রাজ্জাক ভাইদের দিয়ে ফারাক্কা আন্দোলন করান। ইন্দিরা এদেশে এসে ফারাক্কা নিয়ে অনসনের দৃশ্য দেখে অনেকটাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় পরিস্থিতিতে পরে যান, ওদিকে মাইন্ডমেকার বঙ্গবন্ধু, ইন্দিরা তখন বাধ্য হয়ে নিজের হাতে সরবত খাইয়ে সেই অনসন ভাঙ্গিয়ে কথা দিয়ে যান যে ফারাক্কা নিয়ে একটা সমাধান করবেন। ইন্দিরার হাতে শরবত খেয়ে অনশন ভেঙ্গে আন্দোলন বাদ দিয়ে সবাই মিলে খুশি মনে ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশ সফর সম্পুর্ন করে তাঁকে হাসি মুখে বিদায় করেন। বলা চলে রাজনীতির একটা শ্রেষ্ঠ উদাহরণ ছিলো বঙ্গবন্ধুর সেই মেকানিজম।

এখানে একটি কথা শুনে রাখেন, গত ৫৩ বছরের ইতিহাসে কোনো বাঙ্গালী যদি ভারত বিরোধী রাজনীতি করে থাকেন তবে তা বঙ্গবন্ধুই করেছেন, যদিও তাঁর সাথেই ভারতের সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক ছিলো। বাঁচতে হলে জানতে হবে, শুনুন যুদ্ধের পর ভারতীয় সৈন্যরা যে লুটপাট করে নিয়ে গেছে এটা একটা যুদ্ধনীতির অন্তর্ভুক্ত বিষয় যা ইসলামেও জায়েজ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আলতু-ফালতু কথা বললেই হবে না।

যাই হোক, ৭৪-এর এই বন্যার কারণে দেশে তখন চরম দুর্ভিক্ষ, বাঙ্গালী গাছের লতাপাতা খেয়েও বেঁচে ছিলো, এটা ফ্যাক্ট। আর এমন সময় আমেরিকা বাংলাদেশের জন্য তিন জাহাজ ভর্তি খাদ্য ও সাহায্য পাঠায় যা আটলান্টিক মহাসাগর হয়ে আসছিলো। এসময়‌ই আমেরিকা বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রস্তাব দেয়। আমেরিকা বঙ্গবন্ধুকে বুঝিয়ে বলে যে বাংলাদেশের জন্য যা লাগে তারা তার সব করবে। পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশ বানিয়ে দেবে বাংলাদেশকে। বিনিময়ে তাদেরকে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ৯৯ বছরের জন্য লীজ দিতে হবে, তারা এখানে একটা নৌঘাঁটি বানাবে কিন্তু নাছোড়বান্দা বঙ্গবন্ধু, তিনি কিছুতেই রাজি নন। তাঁর এক কথা, “আমি বাঙ্গালী, বাংলা আমার ভাষা, বাংলাদেশ আমার দেশ, আমার দেশ আমার মায়ের মতো, আমি আমার দেশের জন্য ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে পথে পথে ঘুরতে পারবো কিন্তু আমি আমার দেশ তথা মাকে কারো কাছে বিক্রি বা বন্ধক দিতে পারবো না…

আমেরিকা সব রকমের চেষ্টা করে। অতঃপর বঙ্গবন্ধুকে প্যানিক দিতে শেষমেশ সেই জাহাজ তিনটিও আটলান্টিকে ডুবিয়ে দেয়া হয় ফলে বাংলাদেশে আর আমেরিকার সাহায্য আসে না কিন্তু তবুও বঙ্গবন্ধু মানেন নি সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমেরিকাকে লীজ দেয়ার কথা।

এই কথাগুলো বাংলার ইতিহাস, একজন বঙ্গবন্ধুর জীবনের কথা। রাজনৈতিক প্রয়োজনে বা প্রতিহিংসায় ফলে কে কি বলেন সত্য-মিথ্যা, আনাপসানাপ এসব যার যার বিষয়। দেশের সাথে বেঈমানি করে, সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আপাতত ভালো হলেও কারো শেষ ভালো হয়নি কোনোদিনই। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও কোনোদিনই হয়নি। এটা হয়তো প্রকৃতির ইচ্ছা। মানুষ যুগে যুগে প্রকৃতির এই ইচ্ছাশক্তিকে ভেঙ্গে, মানুষের ক্ষতি করে, অন্যের রিজিক হরণ করে নিজের ভালো নিশ্চিত করতে চেয়েছে বারবার কিন্তু ফেরাউন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কেউ কখনও সাকসেস হয় নি ফাইনালি….!

যাই হোক, আসলে কে কি বলে, কে কি চায় না চায় তা বলতে চাই না, আর এতোগুলো কথা বললাম, আজ হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর মুখে সেন্টমার্টিন লীজের কথা শুনে ইতিহাস মনে পরে গেলো তাই। আর আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোনো দলীয় নয়। ছাত্র জীবনে দলীয় থেকে স্বপ্ন দেখেছি এখন আর না, এখন আমি জাতীয়। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শবাদী ন‌ই, আমি বাঙ্গালী, বাংলা আমার ভাষা, বাংলাদেশ আমার ও আমার মায়ের দেশ। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, আমার সোনার বাংলা, এখানে আমরা সবাই বাঙ্গালী। আমি চাই আমরা সবাই মিলে ভালো থাকতে, জিন্দাবাদ আর জয়বাংলার অবসান ঘটে এদেশে একটাই শ্লোগান বেঁচে থাকুক ‘সোনার বাংলা’, যেকোনো শর্তে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি এবং এটাই শেষকথা।

শেখ হাসিনার ভিডিও বক্তব্যঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *