আন্তর্জাতিক রাজনীতি : আধুনিক মিয়ানমারের জাতির জনক অং সান এবং খিন চী’র কন্যা নোবেল বিজয়ী সু চি’র জন্ম হয় ব্রিটিশ বার্মার রেঙ্গুনে। ১৯৬৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ১৯৬৮-তে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক অর্জন করার পর তিনি জাতিসংঘে তিন বছর কাজ করেন এবং ১৯৮৮-র গণ আন্দোলনের সময় সু চি সবার নজর কাড়েন।
এরপর ১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি সংসদের ৮১% আসন পেলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায় যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হৈ চৈ ফেলে দেয়। এদিকে নির্বাচনের আগে থেকেই সু চি-কে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছরই তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় কাটাতে হয়; ততদিনে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রখ্যাত রাজবন্দীদের একজন হয়ে উঠেছেন।
২০১০ সালে মুক্তি পাবার পরে ২০১২ সালের উপনির্বাচনে সু চি সংসদের নিম্নকক্ষের এমপি হন এবং তার দল ৪৫টি ফাঁকা আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়লাভ করে। ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল ভূমিধ্বস বিজয় অর্জন করে, অ্যাসেমব্লি অফ দ্য ইউনিয়নের (সংসদ) ৮৬% আসন অর্জন করে; যদিও প্রেসিডেনশিয়াল ইলেকটোরাল কলেজে তাদের প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি ও দ্বিতীয় উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচনের জন্য ৬৭%ই যথেষ্ট ছিল কিন্তু সু চি-র প্রয়াত স্বামী ও সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সংবিধান অনুসারে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না; তাই তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা পদটি গ্রহণ করেন যা কিনা মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানের সমান।
গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার (১৯৯১) সহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তবে মার্কিন ইহুদী বাদীদের মিশন সাকসেস করতে মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করে সেখানে একটি আমেরিকান ঘাঁটি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন সু চি। ইতিহাসের বিভৎসতম ধ্বংসযজ্ঞে তার সেই ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত হয় সারা বিশ্বে।
এছাড়াও ২০২০ সালে মিয়ানমারের সংসদীয় নির্বাচনে তিনি ও তার দলের অধিকাংশ নেতার প্রতি ভোটচুরি ও অনিয়মের অভিযোগ আনে দেশটির সামরিক বাহিনী তাতমাডো।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর বর্তমানে তিনি ও তার দলের অধিকাংশ নেতা গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন। গবেষকরা মনে করেন আসলে সু চির বিষয়টা সম্পুর্ন রূপেই আমেরিকার ইহুদীবাসী ক্ষমতাধরদের ইচ্ছাতেই যা হবার হয়েছে, ভবিষ্যতেও যা হবে তা তাদের ইচ্ছাতেই হবে। এই নোবেল বিজয়ী আমেরিকার একজন ব্যর্থ এজেন্ট।
মূলত সারা পৃথিবীর কাছে একথাটি ওপেন সিক্রেট যে এশিয়ার উপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে একটি ঘাঁটি স্থাপন করার স্বপ্ন আমেরিকা অনেক কাল থেকে দেখছে, আর নোবেল বিজয়ী সু চির কাঁধে ভর করে সফলতা দ্বার প্রান্তে এলেও শেষপর্যন্ত তা বাস্তবায়িত করতে পারেনি আমেরিকা, কেননা তার আগেই ওই দেশের সামরিক বাহিনী সু চি ও তার দলের নেতাদের গৃহবন্দী করে বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে দেয়!
এরপর আমেরিকা স্বপ্ন পূরণে টার্গেট নেয় বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপ যা তাদের আরোও পুরোনো খায়েশ।
গবেষকদের মতে আমেরিকার ইহুদীবাদীরা এই খায়েশ পূরণ করতে ৭১-এর স্বাধীনতার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পীড়াপীড়ি করতে থাকে কিন্তু কোনো ভাবেই তাঁকে রাজি করতে পারে না, এরপর ৭৪-এর দুর্ভিক্ষকে পুঁজি করে একটা শেষ চেষ্টা চালায় তারা।
৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার ভগ্ন পরিস্থিতির বাংলাদেশের উপর পুনরায় ৭৪-এর প্রাকৃতিক ওই দুর্যোগটি দেশটিকে একটা মারাত্মক দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দেয়, এমতাবস্থায় আমেরিকা তিনটি জাহাজ ভর্তি খাদ্য ও সহযোগী বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দেয় এবং জাহাজ যখন আটলান্টিকের মাঝামাঝি তখন তারা পুনরায় বঙ্গবন্ধুকে সেই সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গ নিয়ে প্যাড়া দিতে থাকে, তারা বঙ্গবন্ধুকে ওই খাদ্য ও সহযোগী ছাড়াও সর্বোচ্চ লোভনীয় প্রস্তাব দেয় কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমেরিকাকে সাফ সাফ জানিয়ে দেন, “আমি বাঙালী, বাংলা আমার মা, আমার মায়ের জন্য আমি শেখ মুজিবুর রহমান সারা পৃথিবীর কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরতে পারবো কিন্তু আমি আমার মাকে কারো কাছে বিক্রি বা বন্ধক দিতে পারবোনা।” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই কথা শুনে আমেরিকা হতাশ হয়ে পরে আর পৃথিবী অবাক হয়ে যায় একজন বাঙালীর দেশভক্তি দেখে।
তখন আমেরিকা নিজেরাই আটলান্টিকে খাদ্য ও সহায়তা ভর্তি করা জাহাজ তিনটিকে ডুবিয়ে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে জানায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে জাহাজ ভুবে গেছে কিন্তু ঘাঁটি স্থাপন করতে সেন্টমার্টিনের কোনো বিকল্প নাই বিধায় তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার মিশন নেয় যা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট সাকসেসফুল করতে সক্ষম হয়।
এরপর কিছুদিন এহাত ওহাত হবার পরে জিয়াউর রহমান একটি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের হাল ধরেন।
জিয়াউর রহমান একজন দেশপ্রেমিক ফৌজি ছিলেন, যদিও তিনি রাজনীতিতে পারদর্শী ছিলেন না কিন্তু তাঁর নিরলস পরিশ্রম ও মানসিক শক্তি তাঁকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখে। অতঃপর বিভিন্ন ঘটনা ঘটার পরে আবার আমেরিকা জিয়াউর রহমানকে সেই প্রস্তাব দেয় কিন্তু জিয়াউর রহমানও সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। দেশপ্রেমিক ফৌজি জিয়াউর রহমানকেও অনেক চেষ্টার পর রাজি করাতে না পেরে আবার এক কন্সপ্রেসি গেইম করে আমেরিকা তাঁরও মৃত্যু ঘটায়।
এভাবেই চলতে থাকে সময় কিন্তু বিশ্ব সন্ত্রাসী, পরের ধন লুটে খাওয়া আমেরিকার ইহুদীবাদী শক্তির সেই স্বপ্ন কিছুতেই বাদ দেয় না। এরপর নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির মাধ্যমে মিয়ানমারে চেষ্টা চালিয়ে সেখানেও ব্যার্থ হবার পরে শেখ হাসিনার সাথে বাড়াবাড়ি শুরু করে কিন্তু ১৭ বছরেও কোনো ভাবেই শেখ হাসিনাকে রাজি করতে না পেরে তাঁকে সরিয়ে দিয়ে অন্য পথ অবলম্বন করার মতলবে থাকে।
এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধার কোটা নিয়ে ছাত্র সমাজের সাথে শেখ হাসিনার ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হলে শেখ হাসিনা তড়িৎ গতিতে ছাত্রদের সকল প্রস্তুব মেনে নিলেও দেখা যায় শেষ রক্ষা করতে পারেন নাই। যেটা অত্যন্ত রহস্যজনক।
যাই হোক, আমেরিকা বাংলাদেশের তিন মতবাদের এক মতবাদী সেনাবাহিনীর সাথে আঁতাত করে তাদের মাধ্যমেই শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়া হতে বাধ্য করে।
এখানে একটি কথা উল্লেখ করতে হয়। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে চলে যাবার পরে জণগণের উদ্দেশ্য প্রথম যে ভাষণটি দিয়েছিলেন তাতে তিনি ভুল করে বলে ফেলেছিলেন যে যাবার আগে শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে শেষবারের মতো কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাঁকে কিছু বলার সুযোগ দেয়া হয় নাই। ওখানে তিনি সময়ের অভাব বলেছেন কিন্তু…!
এরপর বাংলাদেশে আসেন নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুস। উল্লেখ্য তিনি এদেশে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন গত ১৫ বছর থেকেই কিন্তু ডঃ ইউনুসও আমেরিকার সেন্টমার্টিনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একজন এজেন্ট বলে মনে করায় শেখ হাসিনা তাঁকে কিছুতেই এই সুযোগ দেন নি কিন্তু এবার সু চির পরে আরেক নোবেল বিজয়ী এশিয়াকে আমেরিকার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সেই ঘাঁটির প্রকল্প নিয়ে এসেছেন।
তবে এইসব কথা যেসব বিশেষজ্ঞদের মতামত তারা মনে করেন ডঃ ইউনুসও পারবেন না আমেরিকার সেই খায়েশ পুরণ করতে কারণ বাঙালীরা যতোই যাই হোক এহেন কোন বিষয়ে তারা কিছুতেই রাজি হবে না। এদেশের ইসলাম পন্থী দলগুলো একত্রিত হয়ে ডঃ ইউনুসকে প্রতিহত করবে এবং এখন যতোই ইউনুসের প্রেমে বাঙালী গদগদ হোক না কেনো, তার ওই কাজে বাংলাদেশের কেউ কিছুতেই সায় দেবেন না বরং সবাই এক হয়ে ইউনুস বিরোধী পদক্ষেপ নিবেন।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, “তখন নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনুসের পরিস্থিতি কি নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির মতোই হবে না অন্যরকম কিছু হবে তা এই মুহূর্তে বলা যায় না কারণ বাঙালী ইমোশন খুব মারাত্মক। বাঙালী কাউকে ভালোবেসে, বিশ্বাস করে যেমন জীবন দিতে পারে তেমনি ঘুরে দাঁড়ালে জীবন নিয়ে নিতেও এক মুহুর্ত ভাবে না…”