dhaka prokah news 1 20240814083126

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারসহ চার দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার নিহত শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজসহ শহীদদের স্মরণে পদযাত্রা, মোমবাতি প্রজ্বালন ও দোয়া প্রার্থনা কর্মসূচি পালন করা হয়।

গতকাল রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নিহত শিক্ষার্থী ফারহান ফাইয়াজসহ শহীদদের স্মরণে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে ধানমণ্ডির রাপা প্লাজা পর্যন্ত পদযাত্রা, মোমবাতি প্রজ্বালন ও দোয়া প্রার্থনা কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন স্থানে একই কর্মসূচি পালন করা হয়।

গতকাল বিকেল ৩টায় শাহবাগ মোড়ে একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক সমাবেশের আয়োজন করে ‘একতার বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় পদযাত্রা কর্মসূচি উপলক্ষে শাহবাগ মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জমায়েত হওয়ার কথা ছিল। বিকেল সাড়ে ৪টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’-এর মঞ্চে হাজির হন। সংহতি জানিয়ে সেখানে তাঁরা বক্তব্য দেন। পরে তাঁদের পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘যারা আমাদের টুঁটি চেপে ধরেছে, আয়নাঘর প্রতিষ্ঠা করেছে, আমাদের শিবির ট্যাগিং দিয়েছে, হলে হলে নির্যাতন করেছে, আমাদের ভাইদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছে, আমাদের বোনদের ছাত্রলীগ, যুবলীগ যেভাবে হামলা-নির্যাতন করেছে, তারা যদি আর কখনো এই বাংলার মাটিতে যড়যন্ত্র করতে চায়, তাহলে কি আমরা প্রতিরোধ করতে রাজি আছি?’ তাঁর এমন বক্তব্যে উপস্থিত জনতা হ্যাঁ জবাব দেয়।

তিনি আরো বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা খুনি শেখ হাসিনাকে উত্খাতের পর থেকেই দেখছি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা প্রশাসনিক ক্যু ঠেকিয়েছি, আমরা জুডিশিয়ারি ক্যু ঠেকিয়েছি, আমরা মিলিটারি ক্যু ঠেকিয়েছি। আমরা খবর পেয়েছি, ১৫ আগস্ট আওয়ামী ফ্যাসিস্ট, আওয়ামী দোসররা আবার ক্যু করার জন্য রাস্তায় সংগঠিত হবে।

যারা জনগণের অধিকার লুণ্ঠন করেছে, যারা স্বাধীনতাকে লুণ্ঠন করেছে, তারা যদি আবার রাস্তায় আসার কোনো ধরনের চিন্তা করে, তাহলে ছাত্র-জনতা তাদের পা ভেঙে দেবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্প্রীতির বাংলাদেশ। কিন্তু আমরা দেখেছি যখনই শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে, তখন আওয়ামী দোসররা কিভাবে সংখ্যালঘুদের অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, জমি দখল করেছে। শাহবাগ থেকে ঘোষণা দিতে চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের প্রাথমিক পরিচয় বাংলাদেশি।’

সমন্বয়ক সারজিস আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘স্বৈরাচার ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন।

ষড়যন্ত্র করতে এসে ধরা পড়লে গায়েবানা জানাজা পড়ারও লোক খুঁজে পাবেন না। স্বৈরাচারের দোসররা অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালায়নি। লুকিয়ে আছে আমাদের আশপাশে। যে নৌকার মাঝি সাজুক না কেন, তাদের নৌকাসহ ডুবিয়ে দিতে হবে। আমরা একটি ধাপ পার করেছি মাত্র। যত দিন পর্যন্ত জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা না যায়, তত দিন পর্যন্ত ১০ মিনিটের ঘোষণায় রাজপথে নামার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যারা বাধা দেবে জনতার স্রোতে তাদের পিষে দিতে হবে। যে গর্ত থেকে ফ্যাসিস্টরা বের হওয়ার চেষ্টা করবে, সেই গর্তে তাদের ঢুকিয়ে তালা লাগিয়ে দিতে হবে।’

সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এখনো সেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ভাঙচুরসহ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল, তারা বিভিন্ন জায়গায় উপাসনালয়ে হামলা চালিয়েছে, কিন্তু ছাত্র-জনতা তা রুখে দিয়েছে। আমরা রক্ত দিয়েছি, প্রয়োজন হলে আমরা আবারও রক্ত দিতে প্রস্তুত। আমরা সবাই একতাবদ্ধ থাকলে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে পারি। আমাদের একতাবদ্ধ থেকে সব ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ে যেতে হবে।’

সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় একতার বাংলাদেশের ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ সমাবেশ শেষ হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদযাত্রা শুরু হয়৷ পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ‘খুনি হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘বিচার বিচার বিচার চাই, খুনি হাসিনার বিচার চাই’; ‘হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘উই ওয়ান্ট, জাস্টিস’; ‘সন্ত্রাসীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘ছাত্রলীগের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’; ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে রাপা প্লাজা পর্যন্ত পদযাত্রা করে।

‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক আবু সায়েম, ফাদার তপন ডি রোজারিও ও শাফী মুহাম্মদ মুস্তফা, আরবি বিভাগের শিক্ষক মাহাদী হাসান, কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বিশপ সাইমুন আর বিশ্বাস প্রমুখ। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন সমন্বয়ক তাহমিদ আলম, শপথবাক্য পাঠ করান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি প্লাবন তারিক।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন, জাগপা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ, ছাত্র অধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সিগবাতুল্লাহ প্রমুখ।

এদিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে সপ্তাহব্যাপী ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’-এর অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘সর্বাত্মক অবস্থান কর্মসূচি’ ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকায় এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় শাহবাগে জমায়েত হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *