নিজস্ব প্রতিবেদন : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশে চলছে ব্যাপক অস্থিরতা। তারা এক অজানা আতঙ্কে ভুগছেন। একপক্ষ আরেকপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। এমনকি কয়েকটি গ্রুপে ভাগও হয়েছেন। সবকটি পুলিশ লাইনসে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার সদস্যরা বিক্ষোভ করছেন। আবার কোনো স্থানে সিনিয়র অফিসারদের ওপর চড়াও হচ্ছেন জুনিয়ররা। আইজিপির নির্দেশে কিছু থানাসহ পুলিশের ইউনিটগুলোতে পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা যোগ দিলেও কার্যক্রম শুরু হয়নি। সহিংসতার কারণে সদস্যরা ট্রমায় ভুগছেন। বেশিরভাগ পুলিশ স্টেশনই আগুনে পুড়ে যাওয়ায় কোনো সরঞ্জামাদি নেই। থানা ও রাজারবাগে ল্টু হওয়া অস্ত্রাগার উদ্ধার করা যাচ্ছে না।
আবার কোনো কোনো অফিসার গত ১৬ বছর সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়েও ভোল্ট পাল্টে ফেলেছেন। তারা নয়া আইজিপিসহ একটি গ্রুপের সঙ্গে মিশে আগের কর্মকর্তাদের বিষোদ্গার করছেন। তারা আরও সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টায় আছেন। এতদিন যারা বঞ্চিত ছিলেন তারাও পদোন্নতি পাওয়াসহ সব ধরনের সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। লোভনীয় পদ পেতে নানা স্থানে তদবির চালাচ্ছেন। সৎ ও নিষ্ঠাবান চৌকস কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিজেদের আসন পাওয়ার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগমুহূর্ত পর্যন্ত আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে দমনের জন্য সর্বোচ্চ বলপ্রয়োগ করে পুলিশ। এতে দেশ জুড়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় অন্তত ৫১৮ জন। পুলিশ সদস্য নিহতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত শতাধিক। পুলিশের নজিরবিহীন বলপ্রয়োগে ব্যাপক প্রাণহানির কারণে পুরো বাহিনীর প্রতি ক্ষোভে ফুঁসছে ছাত্র-জনতা। ফলে দেশের থানা ও পুলিশের স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোতে হয়েছে সংঘবদ্ধ হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। নৃশংস হত্যার শিকার হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। এতে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন পুরো বাহিনীর সদস্যরা। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বাহিনীতে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক মানসিকতার কারণে পুরো বাহিনী জনরোষে পড়েছে এমনটা মনে করে গতকাল পর্যন্ত টানা তিন দিন কর্মবিরতিতে আছেন সারা দেশের অধিকাংশ পুলিশ সদস্য। এসব কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টিসহ ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বৈষম্যও দূর করার দাবি উঠেছে বাহিনীতে। এতে ভেঙে পড়েছে পুরো চেইন অব কমান্ড। চলছে আন্দোলন।
পুলিশের নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।
সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনরতরা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আন্দোলনরত তিনটি দলের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে কথা হয়েছে দেশ রূপান্তরের। পুলিশের মধ্যে অস্থিরতার নানা চিত্র। কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যরা অস্ত্রাগার লুট করেছে। আবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে গত কয়েক দিন থেকেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে নানা স্লোগানে ক্ষোভও ঝেড়েছেন। নাম প্রকাশ না করে পুলিশের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পালাবদল হওয়ায় পুলিশে নানা অস্থিরতা চলছে। কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছে। একপক্ষ চাচ্ছে বঞ্চিতরা পদোন্নতি নিয়ে লোভনীয় পদে যেতে। আরেকপক্ষ চাচ্ছে সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিজেরা পদ নিতে। অন্য একপক্ষ চাচ্ছে পুরনো কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় আনতে। যেসব পুলিশ সদস্য মারা গেছেন তাদের ক্ষতিপূরণসহ জড়িতদের আইনের আনতে। জুনিয়ররা সিনিয়রদের অপমান করা পুলিশের ইতিহাসে কখনো হয়নি। গত দুদিন পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা এক ধরনের বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। সব মিলিয়ে পুলিশের কমান্ড নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পটপরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার চেহারাও পরিবর্তন হয়ে গেছে। অথচ তারা বিগত সময়ে সব ধরনের সুবিধা ভোগ করেছেন।
পুলিশকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা : সরকারের পতনের পর ঢেলে সাজানো হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপি কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ কয়েকটি শীর্ষপদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর তাতেই আতঙ্ক বাড়ছে পুলিশে। যারা বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক পরিচয়ে বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করেছেন তাদের মধ্যে আতঙ্কটা বেশি হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তা গা ঢাকা দিয়ে আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কখন কাকে ওএসডি বা বদলি করা হয় সেই আতঙ্কে আছেন তারা। বিগত সময়ে যারা সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করে পদ বাগিয়ে নিয়েছেন, তারা এখন হয় ওএসডি অথবা অন্যত্র বদলি হবেন। তবে কাউকে আপাতত চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে অনেককে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। যেসব কর্মকর্তা রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে ফায়দা লুটেছেন, থানায় ঢুকে হামলা চালানোর সময় সাহায্যের জন্য কল করা হলেও তারা ফোন ধরেননি বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। নতুন আইজিপি ইতিমধ্যে বলেছেন যারা কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
থানার কার্যক্রম শুরুই হয়নি : গত বুধবার নয়া আইজিপি ময়নুল ইসলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ ইউনিট ও থানার কার্যক্রমে যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা ইউনিট ও থানায় গেলে কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি। ঢাকার ৫২টি থানার মধ্যে অর্ধেক থানার কর্মরত পুলিশ সদস্যরা গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে চলে এসেছেন। বেশিরভাগ থানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অনেককে হত্যা করে লুট করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা, রংপুর, সিলেট রেঞ্জের বিভিন্ন থানার কার্যক্রম শুরু হয়নি। তাছাড়া মহানগর এলাকার থানাগুলোরও একই অবস্থা বিরাজ করছে। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দেশের সবকটি থানার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ : দেশের বিভিন্ন স্থানে পদোন্নতিসহ নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একাধিক পুলিশ সদস্য জানান, অনেক পুলিশ অফিসারকে জামায়াত-বিএনপি ঘরানার তকমা দিয়ে বছরের পর বছর কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। কোনো সরকারের অধীনে তারা আর চাকরি করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাদের জন্য আলাদা পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। ‘দায়িত্বহীন’ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচার করতে হবে। কারণ পুলিশ হতাহতের জন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের দায় আছে। এ ছাড়া এ কমিটির সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন এমন অন্তত ৫০ জন কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা হয় রূপান্তরের। তারা বলেন, পুরো বাহিনীকে সরকারের হুকুমের গোলাম বানিয়ে রেখেছেন কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের লেজুড়বৃত্তির কারণে আমাদের জীবন আজ হুমকির মুখে। নতুন যে পুলিশ মহাপরিদর্শক দায়িত্ব পেয়েছেন, তিনিও সরকারের আজ্ঞাবহ। তিনি আমাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ করছেন না। আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন না। আমাদের দাবি না মানলে কোনোভাবেই আমাদের কাজে ফেরাতে পারবে না।
তোপের মুখে রাজারবাগ ছেড়েছেন আইজিপি : গত বুধবার যখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান আইজিপি ময়নুল ইসলাম, তখন ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ পুলিশ সদস্যরা। সেদিন সন্ধ্যায় যখন তিনি রাজারবাগে ছিলেন তখন সাধারণ পুলিশ সদস্যের তোপের মুখে পড়েন আইজিপি। তাকে ঘিরে ধরেছিলেন কনস্টেবল থেকে নানা পদের শতাধিক পুলিশ সদস্য। ওই সময় তার গাড়ির দরজা রোধ করেন একজন সিনিয়র নারী কনস্টেবল। কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে ওই পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার, ১৮৬৫ সালের পর আপনি একমাত্র ও প্রথম দুর্ভাগা আইজিপি। আপনি আইসাই মুর্দা সালামি পাইছেন, এর জন্য খুবি দুঃখিত স্যার। কিন্তু স্যার আপনি আমাদের দুঃখ-কষ্ট না জেনে, না বুঝে, না শুনে… আপনি প্রেস ব্রিফিংয়ে যে বললেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তারা আবার কাজে যোগদান করবে! স্যার… প্লিজ স্যার… আজকে চট্টগ্রামের রেলওয়ের সাব-ইন্সপেক্টর রেজাউলকে মারছে। কনস্টেবলকে মারছে, এখন ভিডিও দেখাইতে পারি স্যার। রাস্তায় রাস্তায় পুলিশ খুঁজতেছে (মারার জন্য)। স্যার, আমি একজন পুলিশ। আমি আসার সময় আইডি কার্ডটা নিয়া আসার সাহস পাই নাই স্যার। আমি একজন সার্জেন্ট, আমি কেন আপনার সামনে দাঁড়াব স্যার?…’
গত বুধবার থেকে গতকাল পর্যন্ত রাজারবাগে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। নিহত পুলিশ সদস্যদের লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানের সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখা গেছে অনেকেকে। গত চার দিনের এসব ঘটনা প্রবাহের এমন অন্তত ১৮টি ভিডিও ক্লিপস আছে। এর মধ্যে উল্লিখিত ঘটনাগুলোর সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে দেশ রূপান্তর।
অস্ত্রাগার লুট, কর্মবিরতিতে পুলিশ সদস্যদের কাছে রয়ে গেছে অস্ত্র : গতকাল পর্যন্ত রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের অস্ত্রাগারে ৩৪০টি অস্ত্র জমা দেননি কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়া বান্দরবানের একটি থানার অস্ত্রাগার থেকে সব অস্ত্র নিজেদের কবজায় নিয়েছেন আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা। রাজধানীসহ সারা দেশে ৬২৫টি থানার মধ্যে ৪৫০টি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়েছে। এসব থানার অস্ত্রাগারগুলোয় কোনো অস্ত্র নেই। কিছু অস্ত্র রয়ে গেছে কর্মবিরতিতে থাকা পুলিশ সদস্যদের কাছে। আর বাকি অস্ত্রগুলো লুটে নিয়েছে হামলাকারীরা। আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, অনেকেই নিখোঁজ আছেন। তাদের অস্ত্রগুলোও তাদের সঙ্গেই ছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকতে চায় না পুলিশ : উপপরিদর্শকদের ৩৩ থেকে ৩৯ ব্যাচের আন্দোলনরত সদস্যরা দাবি তুলেছেন, পুলিশ কোনো সরকারের অধীনে কাজ করবে না। নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে জনগণের সেবা করবে। এজন্য পুলিশ বাহিনী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে না থেকে রাষ্ট্রপতির অধীনে থাকবে।
পদ অনুযায়ী নিহত পুলিশ সদস্যদের নানা মানের কফিন নিয়ে ক্ষোভ : চলমান আন্দোলনে শতাধিক পুলিশ সদস্য নিহতের খবর পাওয়া গেছে। অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা মরদেহ তুলে নেওয়া হচ্ছে মর্গে। সেখান থেকে আনা হচ্ছে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। তবে মরদেহ দাফনের ক্ষেত্রেও ফুটে উঠেছে বৈষম্যের চিত্র। এ ক্ষেত্রে কনস্টেবলদের মরদেহ পরিবহনের জন্য দেওয়া হচ্ছে নিম্নমানের কফিন। আবার বড় পদের কর্মকর্তাদের জন্য দেওয়া হচ্ছে ভালো মানের কফিন। এ বিষয়টি নিয়েও তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা।
ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ : পুলিশ বাহিনীতে বিসিএস থেকে আসা কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ বেশি নন-ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তা ও অধস্তন সদস্যদের। একজন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আপনি কি জানেন বিসিএস থেকে আসা একজন পুলিশ কর্মকর্তার জন্য কতজন কনস্টেবল লাগে? তার গাড়ি চালক, জুতা পরিষ্কার থেকে শুরু করে নানা কাজে একজন করে কনস্টেবল লাগে। একেকজন বিসিএস ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তাকে যে গাড়ি দেওয়া হয় সেটা তিনি পারিবারিকভাবে ব্যবহার করেন। এটা শুধুই বাহিনীর কাজে হওয়ার কথা। তার গাড়িচালককে ব্যবহার করা হয় বাড়ির চাকরের মতো।
পুলিশের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ছে নানা গুজব : চলমান অস্থির অবস্থায় নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ছে পুলিশ বাহিনীর ভেতর। এসব গুজব উসকে দিচ্ছে তাদের ক্ষোভকে। আইজিপির ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল কাজে ফেরার সময় দাউদকান্দি এলাকায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মুমূর্ষু অবস্থা করেছে জনতা। এ ধরনের বার্তা সংবলিত লেখা আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপগুলোতে দেওয়া হয়েছে। সেই বার্তার নিচে লিটন নামে এক উপপরিদর্শকের মোবাইল নম্বর দেওয়া। ওই নম্বরে ফোন দিলে লিটন তার পরিচয় সঠিক এটা উল্লেখ করে বলেন, এই খবরটি গুজব। কে বা কারা ছড়িয়েছে জানি না।
পুলিশের অভ্যন্তরীণ এসব নিয়ে কথা হয় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা ক্ষুব্ধ। তাদের কিছু দাবিদাওয়া রয়েছে এটাই মূল বিষয়। পুলিশ সদস্য হত্যার পরে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ডিসিপ্লিন ফোর্সে ক্ষুব্ধ হওয়ার অবকাশ নেই। আমাদের ক্ষুব্ধ হতে হয় না, আমাদের ডিসিপ্লিন ওয়েতে চলতে হবে। বর্তমান অবস্থা অন্যরকম, এখন তারা ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাই তাদের সমস্যাগুলো দেখতে হবে। এর আগে নিরাপত্তার স্বার্থে জনগণের স্বার্থে তাদের কাজে যোগদান করতে হবে। এগুলো বিশৃঙ্খলার লক্ষণ, এগুলো দমন করে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। যেহেতু একটি ঘটনা ঘটে গেছে, তাই তাদের প্রতি বিশ্বাস জাগাতে হবে। নেতৃত্বে গুণাবলি রেখে ফেজ করতে হবে। একটি বড় আলোচনার জায়গা তৈরি করতে হবে। সেখানে তাদের কথাগুলো শুনে সেগুলো সমাধান করতে হবে। তবে এর আগে কাজে যোগদান করতে হবে।’
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে না, তারা রাষ্ট্রপতির অধীনে থাকবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভব নয়। এটি কাজভিত্তিক হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। সে ক্ষেত্রে তাকে এই মন্ত্রণালয়ের মধ্যেই থাকতে হবে।’
আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের বাংলাদেশ পুলিশ বৈষম্যবিরোধী কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিতে চায়। নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ অন্যান্য দাবি-দাওয়া মেনে নিলে যেকোনো সময় কাজে যোগ দেবে সবাই।’