যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাকিকুল ইসলাম খোকন : গত ২১ জুলাই ২০২৪, রোজ রোববার নিউইয়র্কের জ্যাকস হাইটসের ভাইভার্সিটি প্লাজাতে ক্ষমতাসীনদের ডাকা সরকারের পক্ষে সমাবেশের বিরুদ্ধে এবং চলমান বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হত্যা ও কর্তব্যরত সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় সম্মিলত ফোরাম জেএসএফ বাংলাদেশ। খবর বাপসনিউজ।
জাতীয় সম্মিলত ফোরাম জেএসএফ বাংলাদেশ -এর পক্ষে বক্তব্য রাখেন হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন, এছাড়াও প্রবাসীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ইকবাল মজুমদার, মোশাররফ হোসেন, এইচ এম আল আমিন, খুরশীদ আলম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘একদিকে গুলি আর লাশ, অন্যদিকে সংলাপ! আমার ভাইয়ের রক্তের উপর দিয়ে কীভাবে সংলাপ হতে পারে?’ এছাড়া আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘গুলির সাথে কোনো সংলাপ হয় না। এই রক্তের সাথে বেইমানি করার থেকে আমার মৃত্যু শ্রেয়। তাই জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে’।
এদিকে কমপ্লিট শাটডাউন সহ নানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে হামলা, গুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটমান রয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান। আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়েছে। এই অবস্থায় ছাত্রদের ঘরে ফেরার কোন সুযোগ নেই। আদালত দিয়ে বানরের পিঠা ভাগাভাগির মতো রায় দেয়া হয়েছে যার কোন ভিত্তি নেই। সরকার রক্তের নেশায় উন্মত্ত হয়ে গেছে।
সমাবেশ থেকে অভিভাবকদের রাজপথে নেমে আসার আহবান জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, এভাবে পাখির মতো আমাদের সন্তানদের গুলি করে মারবে আর অভিভাবকরা চুপ করে থাকবো এটা হতে পারে না।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রছাত্রী হত্যার এবং নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল এমন একটি দেশ/রাষ্ট্র যেখানে ন্যায় বিচার থাকবে, নারী/পুরুষ, গরিব/ধনী সকলের থাকবে সমান অধিকার, মেধা এবং যোগ্যতাই হবে সবচেয়ে বড় মাপকাঠি ও আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি, কোটা ব্যবস্থা একটি সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং মেধাবীদের অনুৎসাহিত করে। যার ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরাই দেশ ত্যাগ করে আর বঞ্চিত হয় দেশ ও আমি বিশ্বাস করি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কিছু পাবার জন্য জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। খয়রাতি এসব কোটা তাদের জন্য লজ্জাজনক এবং যারা এসব সুবিধা নিচ্ছে তারা ও দেশের পতাকাকে কলংকিত করছেন।
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে গত ক’দিন ধরে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর নির্বিচার হামলা চালানো হয়েছে। সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পিস্তল, রড, লাঠি, হকিষ্টিক, ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। নির্বিচার হামলায় নারী শিক্ষার্থীরাও রেহাই পায়নি। ছাত্ররা এখন রাজপথ ছাড়লেই তাদের খুন গুম করা হবে। তারা কোন বিচার পাবে না। আদালত ও আলাপের কাহিনী কোনদিন জাতির কোনো কাজে আসে নাই সেটাই ছাত্রদের বুঝতে হবে। আন্দোলন বন্ধ করার পরপর লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রী হত্যা খুন ও গুমের শিকার হবে। বাকিরা কেউ চাকরি পাবে না। ডিজিএফআই, এনএসআই এবং এসবি রিপোর্টে আওয়ামী লীগের পোষ্যকেই গত ২০ বছর চাকরি দিয়ে এসেছে। আগামীতেও তাই করবে। আওয়ামী পরিবারের বাহিরে কারোরই চাকরি হয়নি এবং হবেও না যতদিন জনগনের সরকার গঠন না হবে। তাই গনতন্ত্র ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, বিশেষ করে ছাত্রলীগ ও পুলিশ যৌথভাবে দেশের বিভিন্নস্থানে অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলে পরে। আমাদের সন্তান সমতূল্য কোমলমতি অসংখ্য শিক্ষার্থীকে রক্তাক্ত হতে দেখেছি। এ পর্যন্ত আন্দোলনরত শতাধিক লাশের পর এই নিশরাতের অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই।
বক্তারা বলেন, সরকার যেভাবে ছাত্র হত্যার মহোৎসবে নেমেছে তা একাত্তরের পাকহানাদার বাহিনীর বর্বরতাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। একাত্তরে ভিন দেশ থেকে এসে আমাদের হত্যা ও নির্যাতন করেছিল।আর আজ এদেশের সিংহাসনে বসে মানুষ হত্যা, গুম, খুন করা হচ্ছে। এ লজ্জা রাখি কোথায়? তিনি বলেন, একের পর এক কোমতি ছাত্র হত্যার ঘটনায় আমরা শুধু উদ্বিগ্নই নই, ক্ষুব্ধ ও বেদনার্তও। “জাতির কাঁধে ছাত্রের লাশ” এরচেয়ে বেদনার খবর আর কি হতে পারে? আমাদের জানতে ইচ্ছে করে আর রক্ত আপনাদের প্রয়োজন।