ফেসবুক ভয়েজ : গত কয়েকদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে মোটা বেতনের চাকরী নিয়ে দেশ-বিদেশে ঘুরে ঘুরে মজা মারেন মিডিয়ার নিউজ রিপ্রেজেন্টেটিভ, যিনি এদেশের অনেকেরই আইডল, সেই স্বনামধন্য খালিদ মহিউদ্দিনের একটা বক্তব্য (বক্তব্যটা তারই আমি নিশ্চিত না, ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত)।
আমার ধারণা ফেইসবুকে ভাইরাল খালিদ মহিউদ্দিনের ওই বক্তব্যটা আপনাদেরও জানা কিন্তু তবুও সবার জ্ঞাতার্থে নীচে হুবুহু তুলে দিলাম:
“আমার বেতনে পোষায় নাই বলে ম্যাজিস্ট্রেসি (সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) ছেড়ে সাংবাদিকতায় এসেছি। আপনার বেতনে না পোষালো আপনি সে চাকরি করবেন কেনো? আমি কোনোদিন আমার যোগ্যতার কম বেতনে চাকরি করিনি। আমার যোগ্যতা অনুযায়ী শুরু থেকে বেতন পেয়ে এসেছি, এখনো পাই। বেতন সৃষ্টি করে বাজার। নিজেকে অপরিহার্য করে গড়ে তোলেন। বেতন এমনিতেই বেড়ে যাবে। টাকা পয়সা,খ্যাতি এমনিতেই হইব একদিন।
কে বলেছে সাংবাদিকতা মহান পেশা? পৃথিবীতে মহান পেশা বলে কোনো পেশা নেই। পেশা কখনো মহান হতে পারে না। মহান হয় ব্যক্তি।”
—-খালেদ মুহিউদ্দিন
🔘 প্রিয় পাঠক,
আমিও যে খালিদ মহিউদ্দিনকে পছন্দ করি না, তা কিন্তু নয়। আমিও তাঁর উপস্থাপনা, উপস্থিত বুদ্ধি, তৈরি করা স্ক্রিপ্ট বেশ এনজয় করি এবং বর্তমানের দোকানদারী মিডিয়ার জন্য এইধরনের মানুষরাই “হটকেক” হয়ে থাকেন আমিও জানি, সে যাই হোক…
ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া খালিদ মহিউদ্দিনের ইদানিং ওই বক্তব্যের সাথেও যে আমি একমত নই তাও কিন্তু নয়, তবে পুরোপুরি না হলেও আমি প্রায়ই একমত বলতে পারেন। বলতে পারেন আমার খুব ভালোই লেগেছে তার মনোভাব দেখে, বিশেষ করে তিনি অকপটে নিজের চয়েজটাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, এটা করাই উত্তম। অযথা অভিনয় করে নিজেকে হেন, তেন, ফেন, ক্যান্টনমেন্ট, জেন্টেলম্যান, সিলিং ফ্যান ইত্যাদি বোঝানো বা নাচতে এসে অযথা ঘোমটার পরোয়া করা বেকুবের কাজ। তার মতে, বাজারে নাম লিখাইলে মোটা আর চিকন না দেখে সবচেয়ে বেশি টাকা রোজগার করাই আসল কথা, আমিও তাঁর সাথে একমত। তিনি একজন নিডিম্যান, তাই তাঁর মনের শান্তির জন্য সবচেয়ে জরুরী প্রয়োজন হিউজ পরিমাণ টাকা যা কামানোর জন্য সবচেয়ে ভালো রাস্তা মিডিয়া তাই তিনি তা বেছে নিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। আর তাই তিনি মেজিস্ট্রেটের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে সঠিক কাজটিই করেছেন বলে আমিও মনে করি।
বাস্তবেও দেখা যাচ্ছে, নিজের উপর সঠিক আত্মবিশ্বাসী খালিদ মহিউদ্দিন নিউজ মিডিয়ায় এসে বেষ্ট অবস্থানটাও অর্জন করতে পেরেছেন, যেমন সিনেমার হিরো হয়ে সাকিব খান এযুগে বেষ্ট হয়েছেন। সব ঠিক আছে, তিনি অকপটে স্বীকারোক্তি করছেনও বটে তবে বক্তব্যের মধ্যে শিক্ষিত ও মেধাবী খালিদ মহিউদ্দিনও সেই ভুলটাই করলেন যা আমাদের মতো খুব সাধারণরা করে থাকি, তবে তার মতো লোকের ক্ষেত্রে একই প্রকৃতির ভুল দেখে আমি মনে একটা হালকা কষ্টও অনুভব করেছি বৈকি।
দেখা গেছে খুব সাধারনদের মতো খালিদ মহিউদ্দিনের মতো শিক্ষিত, মেধাবী মিডিয়া রিপ্রেজেন্টেটিভও তার কথার মধ্যে ‘জাতির বিবেক’ খ্যাত রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদিকদের খুব সাধারণ বানাতে একটা অপচেষ্টা করেছেন। যা করতে গিয়ে তাকে মহাজ্ঞানীর মতো উপদেশ দিতে হয়েছে কিন্তু আমি মনে করি তার ওই উপদেশ মূলক বানীটা একটু শুধরে নিলে ভালো হোতো, আর যেকোনো ভালো কিছু অবশ্যই উপকারী, একথা তো বলাই বাহুল্য, কি বলেন?
খালিদ মহিউদ্দিন তার বক্তব্যের শেষে বলেছেন, “…. কে বলেছে সাংবাদিকতা মহান পেশা? পৃথিবীতে মহান পেশা বলে কোনো পেশা নেই। পেশা কখনো মহান হতে পারে না। মহান হয় ব্যক্তি।” আমিও বলি তিনি ঠিকই বলেছেন তবে, তার ওই ঠিক কথাটা কিছুটা উদ্দ্যেশ্য প্রনোদিত বলেও আমার মনে হয়েছে কেননা তিনি মেধাবী, শিক্ষিত, আমাদের মতো আমজনতা নন, আর তাই তিনি চাইলেই তাঁর ও অনেকের বলা কথাটা শুধরে বলতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি।
ঠিক আছে, আমরা স্বীকার করে নিলাম, সাংবাদিকতা কোনো মহান পেশা নয়, কোনো পেশা মহান হয় না, ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে, জাতির বিবেক খ্যাত সাংবাদিক কিন্তু মহান বলে গণ্য নাকি তিনি তা অস্বীকার করে নতুন অভিধান রচনা করতে চান!?
বন্ধুরা আমার, আমার কথাগুলোর সাথে আপনারা কে একমত, কে দ্বিমত পোষণ করেন আমি জানি না, তবে আমার ধারণা মিডিয়ার নিউজ রিপ্রেজেন্টেটিভ খালিদ মহিউদ্দিন আমার কথাগুলোর সাথে অত সহজে দ্বীমত পোষণ করতে দ্বিধা বোধ করবেন ইনশাআল্লাহ।
আমি মনে করি, নিজেকে সুধরে নেয়া মানে হেরে যাওয়া বা ছোট হয়ে যাওয়া, এমন মনে করার মতো নেরো মাইন্ড অন্তত খালিদ মহিউদ্দিন নন। ধন্যবাদ।