🔘 বিষয়: সোনালী ব্যাগ দেখতে হুবহু প্লাস্টিকের ব্যাগ মনে হলেও এটা প্লাস্টিক নয়।
নিজস্ব প্রতিবেদন : ২০১৬ সালে পাটের আঁশ থেকে সূক্ষ্ম সেলুলোজ আহরণ করে তাতে রাসায়নিক মিশিয়ে সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ উদ্ভাবন করেন বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহমদ খান।
বায়োডিগ্রেডেবল এই ব্যাগ মাত্র ৬ ঘন্টা থেকে ৬ মাসের মধ্যে মাটির সাথে সম্পূর্ণ ভাবে মিশে যেতে পারে। এমনকি মূল্য বাদে সাধারণ পলিথিনের ব্যাগ থেকে সবদিক থেকেই উন্নত এই ব্যাগটি! কিন্তু বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেললেও গতি পায়নি এর উৎপাদন।
বর্তমানে নিজস্ব কারখানায় ২ বিজ্ঞানী এবং ৬ জন শ্রমিক নিয়ে দিনে মাত্র ২৫০ পিস সোনালী ব্যাগ তৈরি করতে পারছেন তারা৷ তাও আবার বিদেশে রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে। ফলে দেশের চাহিদা কোনোভাবে পূরণ করাই যাচ্ছে না৷ এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসছে সরকার।
বিনিয়োগ করবে ১০০ কোটি টাকা। যার মাধ্যমে ডেমরায় কারখানা স্থাপন করা হবে। আশা করা হচ্ছে নতুন এই প্রকল্প থেকে দিনে প্রায় ১০ লক্ষ সোনালী ব্যাগ তৈরি করা সম্ভব হবে!
পাট থেকে তৈরি করা সোনালী ব্যাগ। ব্যবহারের পর মাটিতে ফেললে কিছুদিনের মধ্যেই মাটির সঙ্গে মিশে জৈব সার হিসেবে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করবে। রাস্তাঘাটে ফেললে সেটা ড্রেনে পৌঁছুলেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না।
কারণ কিছুদিন পরই জলের সাথে মিশে মাছের খাদ্যে পরিণত হবে। এ এক জাদুকরী উদ্ভাবন, যার উদ্ভাবক জনাব মোবারক আহমদ খান –মানিকগঞ্জের কৃতি সন্তান, এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী।
তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতা থেকে জানা যায়, মাটি রক্ষা না হলে গাছ বুনে প্রকৃতি বাঁচানো যাবে না, বাঁচানো যাবে না নদীনালাও। বাজারে গিয়ে পাঁচ পদের জিনিস কিনলে পাঁচটা পলিব্যাগ ধরিয়ে দেবে। সেগুলোর মেয়াদ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত।
পরবর্তী গন্তব্য বাংলার নদীনালা, খালবিল, পুকুর কিংবা জামিন। বিষয়গুলো সচেতন মানুষমাত্রই অনুভব করেন কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এর সমাধান কী? সোনালী ব্যাগ কোথায় পাওয়া যাবে? সাধারণ পলিব্যাগের সাথে দামের পার্থক্য কতটা?
উত্তর হচ্ছে, আপনি চাইলে সোনালী ব্যাগ আপনার বাড়ির পাশের দোকানেই পাওয়া সম্ভব। কেবল আগ্রহটুকু দেখাতে হবে, প্লাস্টিকের পলিব্যাগ বর্জন করতে হবে। আপনার পক্ষ থেকে এটুকুই যথেষ্ট। ক্রেতার আগ্রহ থাকলে বিক্রেতা সে জিনিস দোকানে রাখবেই।
সোনালী ব্যাগের দাম খুব বেশি নয়। ব্যবহার এবং আকারের ভিন্নতা অনুসারে বিভিন্ন রকম সোনালী ব্যাগ তৈরি করা হয়। ছবির ব্যাগটির দাম ৮/১০ টাকা, খানিকটা পুরু। এটা শুকনো বাজারের জন্য ব্যবহার করা যাবে, এবং কয়েকবার ব্যবহার করা যাবে। ওদিকে, পাতলা ব্যাগের দাম পড়বে ৫/৬ টাকা ।
মোবারক আহমদ খান বলেন, সোনালী ব্যাগের দাম আরও কমিয়ে প্রায় শূণ্যের কোঠায় নামানো সম্ভব! কারণ, এক কেজি পাট থেকে এক কেজি সোনালী ব্যাগ তৈরি করা যায়। এক কেজি পাটের দাম ৬০/৭০ টাকার বেশি নয়।
পুরো ব্যাপারটা নির্ভর করছে ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহারের ওপর। আমরা যদি বেশী করে ব্যবহার করি, তাহলে সোনালী ব্যাগ বিনামূল্যেও পাওয়া যাবে।
কিভাবে? এর উত্তর হচ্ছে, বাজার করার সময় আপনি বিনামূল্যে যে প্লাস্টিকের পলিব্যাগগুলো পাচ্ছেন, যেগুলো দোকানদারকে ৩২০-৩৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয় সেগুলোকে বর্জন করি।
এছাড়াও যেখানে ৩২০-৩৫০ টাকা পলিথিনের ব্যাগ অতএব তা বাদ দিয়ে ৬০/৭০ টাকা কেজি দরে কেনা সোনালী ব্যাগ ব্যবহার করাই উত্তম এবং এটা দোকানদারের জন্যও বরং অধিকতর লাভই হবে। প্রায় ফ্রীতে সোনালী ব্যাগ কেবলমাত্র তখনই পাওয়া সম্ভব হবে যখন আমরা প্লাস্টিক ব্যাগের জায়গাটি সোনালী ব্যাগকে দিয়ে দেবো।
মেধাবী উদ্ভাবকের সাথে আলাপচারিতা শেষে তাঁর বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসার পথে একটা কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো, ছেলেবেলা থেকে রচনার আকারে ‘Government should take some necessary steps’ লাইনটা লিখেই তো সব দায় সারলাম! এবার নিজে কিছু করি।
তাছাড়া, ‘দেশ বদলাবো’, ‘সমাজ বদলাবো’ -এগুলো অনেক বড় কথা, কঠিন কাজ, দিনশেষে যার ফলাফল আসলে শূণ্য বলা যায়। তারচেয়ে চলেন ছোট্ট একটা কাজ করি, চলেন নিজেরা নিজেদেরকে বদলিয়ে ফেলি এবং মাতৃভূমির স্বার্থে প্লাস্টিকের পলিব্যাগ বর্জন করি, উন্নত পথ ধরে সোনালী ব্যাগ ব্যবহার করি।
পুনশ্চঃ এবং দোকানদারকেও বারবার জিজ্ঞেস করি, ‘ভাই, সোনালী ব্যাগ এনেছেন কি?’
(তথ্যসুত্রঃ সংগৃহীত)