নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজধানী ঢাকার বংশালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিবাসীদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল যে তাদের উচ্ছেদ করা হবে না কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির দুই দিন পর আবারও ১২ ঘণ্টার মধ্যে উচ্ছেদের সময় দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, এমনটাই কলোনির বাসিন্দাদের অভিযোগ।
এদিকে এই খবর প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোববার (০৯ জুন) ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পরেন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। এক পর্যায়ে কোনো উপায় না পেয়ে তারা কলোনির মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনায় বসেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। তাদের সকলের চাওয়া একটাই- তাদেরকে উচ্ছেদ না করে পুনর্বাসন করা হোক।
গত রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, কলোনির ঘরে ঘরে রীতিমতো কান্নার রোল। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবে তারা এই নিয়ে সকলের সংশয়।
একদিকে ক্ষুব্ধ হরিজন সম্প্রদায়ের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে নগর ভবনে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হরিজন ঐক্যপরিষদের সভাপতি কৃষ্ণলাল জানান, আমরা মেয়রকে সকল সমস্যার কথা খুলে বলেছি। উনি বলেছেন, তাকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে কলোনির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবহিত হতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন যে মেয়র তাদের বলেছেন, এই প্রেক্ষাপটে পুরো কলোনি উচ্ছেদ করা হবে না। ভবনের জন্য কিছু অংশ ভাঙা হবে। বাদবাকি কলোনিতে সবাই বসবাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেয়র। সঠিক তথ্য না দেওয়ায় মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেও জানান তিনি। একপর্যায়ে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ডেকে এনে মেয়র কথা বলেছেন বলেও জানান কৃষ্ণলাল।
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত এই কলোনিতে বসবাস করা এমন ৬৬ জনের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র। এই ঘটনায় বাদবাকি বাসিন্দাদের মধ্যে উচ্ছেদের চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জোর করে চাবি নিতে বাধ্য করা হয়েছে পল্লিতে বসবাসকারী পরিচ্ছন্নকর্মীদের।
এই কলোনির বাসিন্দারা জানান, ৩০০ থেকে ৪০০ বছর পূর্বে তাদের ভারত থেকে এই অঞ্চলে পরিচ্ছন্ন কাজের জন্য আনা হয়। বর্তমানে সাত শতাধিক পরিবার এখানে বসবাস করছেন।
বসবাসকারীদের মধ্যে কিছু মানুষ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত। বাদবাকি দুই শতাধিক পরিবারের সদস্যদের সবাই কোনো না কোনো সময়ে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের অনেকেই মারা গেছেন, কেউবা চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এমতাবস্থায় অবৈধ বলে ঘোষণা করে সিটি কর্পোরেশনে কর্মরতদের বাইরে অন্যদেরকে এভাবে উচ্ছেদ করলে তাদেরকে পথে নামতে হবে। তাছাড়া হরিজন সম্প্রদায়ের সবার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা এই কলোনি।