নিজস্ব প্রতিবদন : ইতিহাস মতে বাংলাদেশের কোন এমপির পাশের দেশ ভারতে গিয়ে এমন খুনের ঘটনা নজির বিহীন, যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এরজন্য ভারত কোনো ভাবেই দ্বায় যুক্ত নয় বলে জনগণকে গণমাধ্যমে পরিস্কার ভাষায় জানিয়েছেন।
এবিষয়ে শুরু থেকেই ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ দেশের সাধারণ মানুষকে তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এমপি আনার ‘হত্যা স্পট’ কেন কলকাতায়, -এর কারণও জানালেন ডিবিপ্রধান কিন্তু তাঁর বলার আগেই গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য মতে, অবৈধ অর্থের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব বিশেষ করে বড়ো একটি সোনার চালানের টাকা মেরে দেবার জেরে ছোটবেলার বিশ্বস্ত বন্ধু, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চোরাচালান, হুন্ডি ও মানি লন্ডারিং ব্যাবসার পার্টনারই রাগে ক্ষোভে তাঁকে ছোবল মারলো। তাঁর লাস টুকরো টুকরো করে গায়েব করা হয়েছে শরীরের এক একটি অখন্ডাংশ, যাতে কিছুতেই চিহ্নিত করা না যায় তাই টুকরো টুকরো অংশগুলোতে হলুদ মাখানো হয়েছে। তারপর এমনভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছে যা খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পরেছে এমনকি ভারতের পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর পক্ষেও। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি অনেক চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন।
ঝিনাইদহ ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের লোমহর্ষক এই হত্যার কাহিনী এখন ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’ শুধু তাই নয, এপার ওপার বাংলার সহ ভারত বাংলাদেশের জন্য মাইল ফলক।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ভাবনার বিষয়,
পাশের দেশ ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যকে ভারতে কেন ও কিভাবে হত্যা করা হোলো?
শুধু হত্যাই নয়, তাকে মারার পরে লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে হলুদ মাখিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে ফেলা হয়েছে, এই কাজটি সরেজমিনে কারা কারা মিলে স্বহস্তে করেছেন?
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে নানা সন্দেহ : কোথায় গেল লাশ!?
এদিকে হত্যা ঘটনার এখনও কোনো বস্তুনিষ্ট আলামত না দেখাতে পারলেও, এমনকি মৃতের লাশ এখনো না মিললেও (আংশিক মিলেছে বলে জানা গেছে) কলকাতায়ই যে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে খুন হয়েছেন তার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের পুলিশ ও প্রশাসনসহ সকল মিডিয়া, রাজনীতিক এবং কর্মকর্তাদের তরফ থেকে।
তবে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অ্যান্টি টেররিস্ট ইউনিটের (এটিএফ) কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, তদন্তে নেমে তারা প্রথমে এমপি আনারের বহনকারী ক্যাবচালককে আটক করেন। সেই ক্যাবচালক তাদের জানিয়েছেন, এমপি আনারকে তার গাড়িতে তোলার পর আরও তিনজন গাড়িতে ওঠেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। পরে এই চারজন কলকাতার নিউটাউনে ওই বাড়িতে যান।
এটিএফ কর্মকর্তারা আরও জানান, তাদের মধ্যে পুরুষ দুজন বাংলাদেশে ফিরে যান। বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগকে জানানো হলে তারা দুজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেওয়া তথ্য কলকাতার পুলিশকে জানানো হয়। এরপরই এমপি আনারের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ।
এছাড়াও পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ ও অন্যান্য প্রমাণ রয়েছে। ১৩ মে ওই এমপির সঙ্গে তিনজন সেখানে ঢুকেছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তারা একেকজন পৃথক পৃথকভাবে ওই ফ্ল্যাট থেকে বের হয়েছে। ১৫ মে একজন, ১৬ মে আরেকজন এবং ১৭ মে আরেকজন বের হয়েছেন সেখান থেকে। তিনজনের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন।
তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ‘আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা নিবিড়ভাবে কাজ করছে। এছাড়া ভারতের পুলিশও আমাদের সাথে কাজ করছে। আমাদের কাছে কয়েকজন আছে তাদের সাথে কথা বলছি এবং তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে সেসব তথ্য আমরা এখন কাউকে বলব না।
এদিকে গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, মাত্র আধা ঘণ্টায় কিলিং স্কয়ারমিশন সম্পন্ন করা হয়। তাকে প্রথমে মেরে ফেলা হয় শ্বাস রোধ করে। এরপর লাশ অসংখ্য খন্ড খন্ড করে (হলুদ মাখিয়ে) ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়। যার হদিস মেলা দুষ্কর। এছাড়াও খন্ডিত মরদেহের টুকরোগুলো যে পাওয়ার সম্ভাবনা কম তা গ্রেফতারকৃত আসামিরাও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী কলকাতা ট্রিপলেক্স ফ্লাটে খুনের পর লাশ টুকরো করে হলুদ আর মসলা দিয়ে মেখে সরানো হয় ট্রলিতে করে।
এছাড়াও বলা হয়েছে, আর এ কারণেই মরদেহ উদ্ধারের সম্ভাবনাও কম। তবে এরপরও লাশের কিছু টুকরো উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টায় রয়েছে দু’দেশের গোয়েন্দা সংস্থা।
বন্ধুর কষা ছকে ফাঁসলো এমপি আনার:
১২ই মে চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে কলকাতায় যাওয়া পর তার দীর্ঘদিনের পারিবারিক বন্ধুর বাসায় গিয়ে উঠে সেখান থেকে বের হবার পর আর ফিরে না আসার পর থেকেই এম পি আনোয়ারুল আজিমের নিরুদ্দেশ হওয়ার ব্যাপারে জট বাঁধতে থাকে। সন্দেহজনক মনে করে সেই বন্ধু স্থানীয় থানা অর্থাৎ কলকাতার ব্যারাকপুর পুলিশ স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
উল্লেখ্য যে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সকলের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে। একজন সংসদ সদস্য কেন সঙ্গীহীনভাবে ভারতে গেলেন? তাঁর চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের লোকজনই বা কেউ কেনো তার সঙ্গে না গিয়ে একটি হ্যান্ডব্যাগ দিয়ে যেতে দিলেন?
তাঁর পরিবারের সাথে শেষ কথা জানিয়েছেন যে তার সাথে ভিআইপি লোকজন আছেন! তখন তাকে শংকিত মনে হয়েছে। পরিবারের লোকজন তাঁর ভারত যাওয়ার কারণ চিকিৎসা নয় অন্যকিছু যা তারা জানেন বলেই যেতে দিয়েছেন, এমন কেনো মনে হচ্ছে না?
এছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে:
সীমান্ত অতিক্রম করার সময় ভ্যানগাড়িতে বসা কে তাঁর ওই ধারণ এক মিনিটের ভিডিওটি ধারণ করেছিলো?
তা কোন মাধ্যমে কার কাছে প্রথম এসেছে? যে দিয়েছে সে কে এবং কোথায় পেলো?
আর ওই ভিডিও করার উদ্দেশ্যই বা কি ছিলো?
কার গাড়িতে বরানগর থেকে উঠে এলো এমপি আনার?
ফোনে কথা না বলে যে খুদে বার্তা দিলেন সেটা কি আদৌ তাঁরই লেখা ছিলো?
৮ দিন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মাত্র দুদিন মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করা সম্ভব হয়। পরে হঠাৎ কেন ট্রাক করা সম্ভব হয়নি? আর এমপি পরিবার কেনো সংযোগ বিচ্ছিন্ন তথা নিখোঁজ হবার পরে তাৎক্ষণিক ভাবে জিডি করলেন না?
চলমান নির্বাচনের সময় আসলেই কেনো ওভাবে হঠাৎ ভারতে গেলেন এমপি?
এবিষয়ে তাঁর পরিবারের লোকজন ও ভারতের ওই পারিবারিক বন্ধু ও তাঁর পরিবারের কে কি জানেন?
একজন সাংসদ কেনো ওভাবে একাকী ভারতে গেলেন?
তাঁর ভারতের সেই বন্ধুই বা কেনো পার্শ্ববর্তী দেশের একজন সাংসদকে ওভাবে তাঁর বাড়ি থেকে একা কোথায় যেতে দিলেন?
কেন ভারতেই হত্যা :
গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঝিনাইদহ ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনারুল আজিম আনার। এজন্য গত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে কলকাতার সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। সেই স্বর্ণ চোরাচরনের আন্ত:দেশের কোন্দলের জেরে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়। আর এজন্য পাতা হয়েছিল নারী দিয়ে ভয়ংকর ফাঁদ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই সন্দেহ। তাকে খুব করতে হানি ট্র্যাপে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় তরুণী শিলাস্তি রহমানকে। জানা যায় এই নারী, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিনের বান্ধবী।
এছাড়াও এমপির প্রায়শই ভারত আসা যাওয়ার সুবাদে তাঁকে খুন করতে নেওয়া হয় সঞ্জীভা গার্ডেনের ওই ফ্লাটে। আর সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়। এজন্য দু-তিন মাস আগে থেকেই পরিকল্পনার ছক করা হয়।
গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, এমনকি হত্যার মূল হোতা আখতারুজ্জামান শাহিনের বাংলাদেশের গুলশান ও বসুন্ধরার দুটি ফ্ল্যাটে দ্বন্দ্বের সুরাহা করতে এমপিকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক হয়।
খবরে প্রকাশ, পরিকল্পনা মোতাবেক মূল হত্যাকারী শিমুল ভুইয়া, তার সহযোগী তানভীর ভূঁইয়া এবং শাহিনের সেই গার্লফ্রেন্ড শিলাস্তি রহমান এপ্রিলের ৩ তারিখ কলকাতায় যান।
জানা যায়, কথিত সন্ত্রাসী শিমুল তথা মূল হত্যাকারী তার নিজের নাম লুকিয়ে আমানউল্লাহ আমান দিয়ে একটি নতুন পাসপোর্ট করে ভারতে যান।
দুই দেশের গোয়েন্দাদের পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে গণমাধ্যমে প্রকাশ, অবৈধ ব্যবসার মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্বের কারণেই আওয়ামী লীগের তিনতিনবার মনোনীত এবং নিজ এলাকা ঝিনাইদহ ৪ আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদকে হত্যার পরিকল্পনাকারী মাস্টারমাইন্ড যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন, যিনি এমপি আনারের বাল্যবন্ধু ও বৈধ-অবৈধ ব্যবসায়িক পার্টনার। এ ঘটনার পরপরই শাহীন গাঁ ঢাকা দিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে শাহীন জানান, আনার হত্যার সময় তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। এছাড়াও তিনি অস্বীকার করেন, ৫ কোটি টাকায় কিলিং মিশন চুক্তির খবর।
আক্তারুজ্জামান শাহীন বলেন,
এই ঘটনায় আমাকে ফাঁসানো হয়ে। এই ঘটনার সময় আমি ভারতে ছিলাম না।
আমার আইনজীবী বলেছে এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলতে। মানুষ দেশে অনেক কথাই বলে। যদি কোনো প্রমাণ থাকে তাহলে দেখাক।
ফ্লাটের ভাড়ার বিষয়ে শাহীন বলেন,
আমি যদি ফ্লাট ভাড়া নেই। আমি কি আমার ফ্লাটে এই ধরণের কাজ করব? আমার পাসপোর্ট রেকর্ড দেখলে দেখা যাবে আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। এখন বলা হচ্ছে আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। কিভাবে আমি ৫ কোটি টাকা দিয়েছি। কোথার থেকে পেলাম আমি এত টাকা। এখন এগুলো মানুষ বললে আমার কি করার আছে। ঘটনা কবে ঘটেছে সেগুলো আমি পত্রিকায় দেখেছি। সে সময় আমি বাংলাদেশে ছিলাম।
তবে তারা দুই বন্ধুর যে আন্তর্জাতিক চোরাচালান, হুন্ডি ও মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত নয়, -এমন কোনো দাবি করেন নি।
এদিকে আরোও জানা যায় ঝিনাইদহ ৪ আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনীত ও তিন বারের নির্বাচিত সাংসদ আগে থেকেই আন্তর্জাতিক চোরাচালান ও অবৈধ ব্যবসার কারনে ইন্টারপোলের কাছে একজন ওয়ান্টেড!
এমতাবস্থায় সকলের কাছে রহস্য:
এমন একজন মারাত্মক অপরাধীকে যিনি ইন্টারপোলের কাছে গত কয়েক বছর ধরে ওয়ান্টেড তাঁকেই কেনো মনোনীত করে এমপি বানানো হোলো? ঝিনাইদহে কি আওয়ামী লীগের কোনো ভালো নেতা নাই? আর এতোকাল ধরে ইন্টারপোলের কাছে ওয়ান্টেড একজন অপরাধী কি করে ভারতে আসাযাওয়া করেন? আন্তর্জাতিক ইমিগ্ৰেশন আইনের কাছে কি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই? পার্শ্ববর্তী একটি দেশের একজন ওয়ান্টেড অপরাধী ভারতে থাকার পরেও ভারতের তাঁকে ধরে ইন্টারপোলের হাতে তুলে না দেয়া কেনো আন্তর্জাতিক আইনের চোখ ও আদর্শকে ফাঁকি দেয়া বলে গণ্য করা হবে না? এ কারণেও কি আন্তর্জাতিক ইন্টারপোল ট্রাইবুনাল ভারতকে অপরাধী বলে গণ্য করবে না!?
উপসংহারে গত বুধবার ২৭ নবেম্বর ২০১৩ , দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় তোফায়েল হোসেন কামালের প্রকাশিত একটি নিউজ নীচে হুবুহু তুলে ধরা হলো:
এক সময়ের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সন্ত্রাসীদের গডফাদার ছিলেন তিনি। সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাচারের মূল নেতা হিসেবেও পরিচিতি তার। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে পরিচিতির কারণে বাংলাদেশ সরকার ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশী হিসেবে ছবি দিয়ে নাম ওঠে তার। পরে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসায় অর্থ প্রতিপত্তি আর এক নেতার আশীর্বাদে এলাকায় ফেরেন তিনি। এলাকায় আগের মতোই কর্মকা- করলেও ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরমও উত্তোলন করেছেন তিনি। তিনি হলেন ঝিনাইদহের কালিগঞ্জের আলোচিত ব্যক্তি ও আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল আজিম আনার।
জানা যায়, অস্ত্র, বিস্ফোরক পাচার, স্বর্ণ পাচার, মাদক পাচার, হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি এবং চরমপন্থীদের শেল্টার প্রদানকারী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতার ৯টি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। এতকিছুর পরও তার মনোনয়ন উত্তোলন করার খবরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাসহ স্থানীয় জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, আনোয়ারুল আজিম ওরফে আনার গত দুই বছর আগেও ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড আসামী ছিলেন। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পরও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার আশীর্বাদে সে এলাকায় ফেরে। কিন্তু তার কর্মকা- থেমে থাকেনি। এলাকায় ক্যাডারদের লালন-পালন করে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছে। এক সময় পুলিশ তাকে আটক করলেও তার ক্যাডার বাহিনী পুলিশের উপর আক্রমণ করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে সে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাও করে। বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে যৌথ বাহিনীর অপারেশনের সময় পলাতক ছিল আনার।
এদিকে বর্তমানে তার মনোনয়ন উত্তোলনের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সে যেন মনোনয়ন না পায় সে ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
যেভাবে আনারের উত্থান :
১৯৮৬ সালের দিকে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালে কালিগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী আনোয়ারুল আজিম আনার মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে। আনার ভারতের বাগদা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের বাঘাভাঙ্গা সীমান্ত পথে প্রতিদিন মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র আনার কাজ করতেন। সেই সময় স্থানীয় থানাসহ মহেশপুর, কোটচাঁদপুর ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থানা পুলিশের সাথে মাসিক চুক্তিতে একটি টোকেন তৈরি করে তারা। পরবর্তীতে ওই টোকেন দেখালেই পথের মাঝে প্রশাসনের লোকজন মাদকদ্রব্য বহন করা ট্রাক ছেড়ে দিত। প্রত্যেক মাসে থানার ক্যাশিয়ার আনারের বাড়িতে এসে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যেত বলে একটি সূত্র জানায়। এভাবে আনার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাদক সম্রাট বলে পরিচিতি লাভ করে। এই মাদক ব্যবসা করে সে কোটিপতি বনে যায়। ১৯৯১ সালের দিকে আনার ঝিনাইদহের আরেক চোরাচালানের মাফিয়া ডন পরিতোষ ঠাকুরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিদিন স্বর্ণের বড় বড় চালান ঢাকা থেকে বাঘাডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ভারতের পথে যেত। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সে আওয়ামী লীগে যোগদান করে। এরপর আনারের মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান আরো বেশি বেড়ে যায়। সেই সময় সে কালিগঞ্জ পৌরসভার এক কমিশনারকে হাত করে অস্ত্র ব্যবসায়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ভারত-মিয়ানমার পথ হয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে তার মোটা অঙ্কের বড় বড় চালান এদেশে আসতো। আনার ঐসব অবৈধ অস্ত্র চরমপন্থী ক্যাডার সামসেল ওরফে রবিন-এর কাছে বিক্রি করতো। সরকারের পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসী প্রকাশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার মাধ্যমে মূলত শুরু আনারের অস্ত্রের ব্যবসা। মন্টু কমিশনারের সাথে শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশের দীর্ঘ দিনের এক সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের কারণেই প্রকাশকে হাত করে আনার ভারত থেকে অস্ত্রের বড় বড় চালান বাংলাদেশ আনতো। ভারতে বাগদা মাদক সম্রাট জয়ন্ত কুমার, কার্তিক, গৌতম শাহ ও বনগাঁর দেবদাসের সাথে আনারের মাদক ব্যবসা ছিল। মূলত এ কারণে ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড আসামীর তালিকায় নাম আসে আনারের।