মঞ্জুর মোর্শেদ : বাংলাদেশ মানেই যেনো অস্থিতিশীল বাজার মূল্য! বাংলাদেশ মানেই যেনো অনিশ্চয়তায় জনজীবন বিপর্যস্ত!! বাংলাদেশ মানেই যেনো ভেজাল আর দুর্নীতির সমাহার!!!
রমজান শেষে ঈদের ছুটি শেষ হলেও তার আমেজ কাটেনি এখনো, আর এরই মধ্যে গতমাসের চাল, তরমুজ, গরুর মাংসের মূল্য বৃদ্ধির নির্লজ্জ তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষের অন্যতম প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ‘আলু’। দেখা যাচ্ছে, ঈদের ছুটি পেরুতে না পেরুতেই হঠাৎ করেই বাজারে আলুর দাম ৫০ কেজিতে উঠে গেছে, কোথাও কোথাও ৫৫ টাকা কেজি দরেও বাধ্য হয়েই কিনে খাচ্ছেন মানুষ।
সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আলুপট্টি ঘুরেও মিলেছে বাজারে আলুর দামের অস্থির পরিস্থিতি। আলুপট্টির ব্যবসায়ীরা জানান যে বছরের এই সময়ে তারা জীবনে কোনদিন আলুর এত দাম দেখেননি। তাদের মতে, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আলুর মৌসুম শেষ হলে অর্থাৎ মাসখানেক পরে প্রতি কেজি আলু ৮০ টাকায় কিনে খেতে হবে।
হঠাৎ করেই দামের এই ঊর্ধ্বগতির কারণ:
আলুর বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মহলে দাবি, দাম বৃদ্ধির পেছনে অসাধু মজুতদারদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের পাশাপাশি, সার-বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং বিরূপ আবহাওয়ার কারণে পর্যাপ্ত ফলন না হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশে আলুর উচ্চ দামকেও তারা দায়ী বলে করেন।
এছাড়াও তারা জানান, সরকারের তরফে উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হলেও, সার বীজ ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ পড়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি। তাছাড়া কৃষক পর্যায়ে আলু বিক্রির দাম ১৮ টাকা ৫০ পয়সা ধরা হলেও কৃষকরাই বিক্রি করেছেন ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। ফলে কোল্ড স্টোরেজ পর্যন্ত পৌঁছাতে আলুর দাম প্রতি কেজি ৩৫ টাকার মতো পরে যায়।
এদিকে অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি দামে আলু কিনে মজুতদাররা তা কিছুতেই এখনই বাজারে তা ছাড়তে চাচ্ছেন না, বরং আরও দাম বৃদ্ধির অপেক্ষায় বসে আছেন। এর ওপর প্রতিবেশী দেশ ভারতে আলুর দাম বৃদ্ধির বিষয়টি মজুদদারদের অজুহাতের ষোলোকলা পূর্ণ করেছে। ওদিকে আলুর সংকট নিরসনে সরকার আমদানির অনুমতি দিয়ে রাখলেও, ভারতের বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারের খুব একটা তারতম্য না থাকায় আলু আমদানিতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। তাই বলে ভারতীয় আলু যে একেবারেই আমদানি হচ্ছে না তাও নয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খুচরা বাজারে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ রুপিতে এবং তা আমদানির পরে সরাসরি বাজারে না এসে কোল্ডস্টোরেজগুলোতে গিয়ে মজুত হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলুর আড়ত বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের জনৈক আলু ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে বস্তা হিসেবে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৩ টাকা কেজি দরে। এই আলু ক্ষুদ্র পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে বিক্রি করছেন ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা দরে। তবে কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজারে এই আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে।
ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা খুচরা মূল্য ৮০ টাকায় উঠবে
কারওয়ান বাজারের আলুপট্টির খুচরা ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, “মোকাম থেকে আলু কিনে অন্যান্য খরচ যোগ করে আলুর প্রতি কেজিতে খরচ পরছে ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা। প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ টাকায়। আর এই আলু যখন রাজধানীর বিভিন্ন মুদি দোকান ও পাড়া মহল্লার বাজারে চলে যাবে তখন তা অন্তত ৫৫ কেজি দরে বিক্রি হবে।
তিনি আরও বলেন, “আলুর বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে অচিরেই দাম উঠবে ৬০ টাকা কেজিতে। তারপর যখন আলুর মৌসুম শেষ হয়ে যাবে তখন আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে উঠে যেতে পারে ৭০ থেকে ৮০ টাকাতে।”
তিনি আলুর দামের এই বৃদ্ধির জন্য মূলত বড় মজুতদারদের দায়ী করেন। তারা কৃষকদের থেকে আলু কিনে জমা করছেন কোল্ড স্টোরেজে। এ কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি।
পাইকাররা কোল্ড স্টোরেজ সিন্ডিকেটকে দোষারোপ করছেন
কথা বলার সময় কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা আলুর দামের হঠাৎ এই বৃদ্ধি তাদেরও অবাক করেছে বলে জানালেন।
এ বিষয়ে কথা হয় কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কোষাধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেনের সাথে, তিনি জানান, পাইকারি বাজারে আলু ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম এত বেশি কেন তার উত্তর তার জানা নেই, আর খুচরা বাজারে কেউ যদি আলু ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করে, তবে তার দায়ভার পাইকারি ব্যবসায়ীরা নেবেন না। এছাড়া আলুর মৌসুম শীতকালে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে এবার এক তৃতীয়াংশ আলু ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে এর প্রভাব সরবরাহে পড়ছে বলেও জানান দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, “আপাতত বাজারে দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বরং দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কোল্ড স্টোরেজগুলো সাধারণত বছরের এই সময়ে আলু বাজারে ছাড়ে না। তারা ছাড়বে জুন মাসে।”
পাইকারি বাজারে ৪২ টাকা দরে, যদিও বর্তমানে কৃষকদের হাতে প্রচুর থাকায় বাজারে সরবরাহ বেশি বলে জানান কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ৎ ব্যবসায়ী মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের যুগ্ম সম্পাদক ইয়াসিন ভান্ডারি ময়না।
যুগ্ম সম্পাদক, আলুর বাজারে সিন্ডিকেটের থাবা পরেছে উল্লেখ করে বলেন, “কোল্ড স্টোরেজগুলোতে এই কারসাজি হচ্ছে। সেখানে বড় মজুতদাররা আলু কিনে মজুত করে রাখছেন। আলুর বাজার যখন আরও চড়া হবে তখন তারা আলু বাজারে ছাড়বেন।”
এদিকে আলুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আনার জন্য এখন থেকেই আলু আমদানির জন্য সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়ত ব্যবসায়ী মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান চৌধুরী সুজন বলেন, “কাঁচাবাজারে সরবরাহের ওপর নির্ভর করে পণ্যের দাম। এখন বাজারে আলুর সরবরাহ বেশী তবে দামও অনেক বেশি। বছরের এই সময়ে সাধারণত আলুর দাম এত থাকে না।
এছাড়াও তিনি আরও বলেন, আলুর এই সংকটের সমাধান এখন একমাত্র কোল্ড স্টোরেজের হাতে। সেখান থেকে সাপ্লাই ঠিক থাকলে বাজার ঠিক হয়ে যাবে, কারণ মজুত তো ওখানেই হয়। আর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে চাপ দেয়া হলে উল্টো কোল্ড স্টোরেজগুলোর তরফে কারওয়ান বাজারে আলুর সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়।
কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলুর দাম বাড়ছে স্লিপ হাতবদলের কারণে
উল্লেখ্য কোল্ড স্টোরেজগুলোতে আলু বেচাকেনা হয় স্লিপ বা কার্ডের মাধ্যমে। আর এই স্লিপ বেচাকেনা তথা হাত বদলেই বাড়ে আলুর দাম। সাধারণ আলুচাষীরা বা স্থানীয় ক্ষুদ্র আলুর ব্যবসায়ীরা সাধারণত তাদের উৎপাদিত বা হাতে থাকা আলু কোল্ড স্টোরেজে রাখেন বস্তা হিসেবে। এক্ষেত্রে ৬০ কেজির একটি আলুর বস্তাকে একটি মৌসুমের জন্য কোল্ড স্টোরেজে রাখতে বস্তার ভাড়া বাবদ কৃষককে দিতে হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি কেজি আলুতে কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া ৫ থেকে ৬ টাকা পরে।
প্রতি বস্তা আলু কোল্ড স্টোরেজে রাখার সময় কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকটি বস্তার গায়ে একটি নম্বর বসিয়ে দেন। বস্তার এই নম্বরের বিপরীতে কৃষকের নামে ইস্যু করা হয় একটি কার্ড বা স্লিপ। এরপর যখন আলু কোল্ড স্টোরেজ থেকে বের করার প্রয়োজন হয়, এই স্লিপ দেখালেই নির্দিষ্ট আলুর বস্তা কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ তার মালিককে বুঝিয়ে দেন। তবে কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলু হাতবদল করারও সুযোগ রয়েছে ওই স্লিপ কেনাবেচার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে কোল্ড স্টোরেজে থাকা আলুর বস্তা কোল্ড স্টোরেজেই থাকবে, বিক্রির সময় শুধু স্লিপ বা কার্ডটি বদল হবে। যিনি কার্ডটি কিনবেন, তিনিই হবেন ওই আলুর বস্তার মালিক। আর এভাবে প্রতিবার হাতবদলের মাধ্যমে দফায় দফায় বেড়ে যাচ্ছে আলুর দাম।
কোল্ড স্টোরেজের আলু মজুতদারদের নিয়ন্ত্রণে
দেখা যায়, মৌসুমের শুরুতে কোল্ড স্টোরেজগুলোতে কৃষক ও ক্ষুদ্র স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আলু ঢুকলেও, ধীরে ধীরে সে সব স্লিপ কিনে নিতে থাকেন বড়ো বড়ো মজুদদার ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এক পর্যায়ে দেখা যায় আলুর মালিক আর কৃষক নয়, পুরো কোল্ড স্টোরেজে থাকা আলুর সিংহভাগ মালিকানা অল্প কয়েকজনের হাতে। এভাবে আলু উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোতে কোল্ড স্টোরেজগুলো ঘিরে তৈরি হয়েছে এক একটি মজুতদার সিন্ডিকেট। যাদের ইশারায় বাজারে ওঠানামা করে আলুর দাম।
এ ব্যাপারে দেশের অন্যতম আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে খ্যাত বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা হাটের এক আলু উৎপাদনকারী কৃষক ও ক্ষুদ্র আলুর ব্যবসায়ী সাংবাদিককে জানান, বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলুর মালিকানা আর কৃষকদের হাতে নেই। বেশিরভাগ স্লিপ বা কার্ডই কিনে নিয়েছেন তার ভাষায় ‘নতুন ব্যবসায়ীরা’। এই নতুন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলু উৎপাদনের কোন সম্পর্ক নেই। তারা মূলত কোল্ড স্টোরেজে রাখা আলুর ওপর টাকা খাটায়। এরপর আলুর দাম বেড়ে গেলে তারা বাজারে আলু ছাড়ে। এভাবে আলু চাষের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক না থাকলেও পুঁজি খাটিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অল্প সময়েই দ্বিগুণ তিনগুণ লাভ করছে এই মজুতদার সিন্ডিকেট। এভাবেই এবারের মৌসুমের শুরুতে কোল্ড স্টোরেজে ঢোকা ২৫ টাকা কেজির আলু বাজার সরবরাহের সবগুলো ধাপ পেরিয়ে রাজধানীর বাজারগুলোতে মাত্র অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে।
এদিকে দাম বৃদ্ধির দায় নিতে নারাজ কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, আলুর এই দাম বৃদ্ধিতে কোল্ড স্টোরেজের কোন দায় নেই। কারণ এবার কৃষকরাই আলু বিক্রি করেছে বেশি দামে। কৃষকরা আলু বিক্রি করেছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। এই আলু কৃষকের হাত থেকে যখন স্থানীয় বাজারে যাবে তখন এর সঙ্গে আরও ১০ টাকা যুক্ত হবে, আর রাজধানীর বাজারে গেলে এর সঙ্গে আরও ২০ টাকা যুক্ত হবে অন্যান্য খরচ বাবদ। সেক্ষেত্রে যদি আলু প্রতি কেজি ৩০ টাকা ধরে কিনে ব্যবসায়ীরা কোল্ড স্টোরেজে ঢোকায়, তাহলে তো অন্যান্য খরচসহ এমনিতেই আলুর দাম অনেক বেশি পরে যাবে। এছাড়া তিনি জানান, কোল্ড স্টোরেজ থেকে এখনও বাজারে আলু ছাড়ার সময় শুরু হয়নি। তিনি বলেন, “কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু ছাড়া শুরু হবে আগামী জুন মাসে।”
এদিকে কৃষি বিপণনের তরফে আলুর উৎপাদন মূল্য ও যৌক্তিক মূল্য যে হারে নির্ধারণ করা হয়েছে তার সঙ্গে বাজার বাস্তবতার কোনো সামঞ্জস্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, মার্চ মাসে কৃষক পর্যায়ে দাম যখন ১৮ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল, তখনই তো বাজারে আলু কৃষকরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছিল। এ ব্যাপারে আমাদের তরফে কৃষি বিপণনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। আমরা তখনই বলেছিলাম, আপনারা যে দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছেন তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এ কারণে সামনে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
এবারের আলুর দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। তিনি জানিয়েছিলেন আলু আমদানির কথা।
তবে আমদানি করে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না উল্লেখ করে মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, প্রতিবেশী ভারতেও এখন আলুর দাম বাড়তি। দেশে যেখানে আলুর চাহিদা ৮০ থেকে ৯০ লাখ টন সেখানে আর কত আলু আমদানি করা সম্ভব হবে?
অপরিপক্ব অবস্থায় আলু তোলাকে দায়ী করলো কৃষি বিপণন
মুন্সীগঞ্জের আলুর সরকারি দর নির্ধারণের দাবি জানান
বাজারে আলুর যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা, যদিও এই দরের সঙ্গে বাজারের মূল্যের কোনো সামঞ্জস্য নেই। বিষয়টি স্বীকার কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম বলেন, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে খুব শিগগিরই আলুর যৌক্তিক মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হবে। এবার বাজারে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে একটা ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
চাহিদার তুলনায় আলুর উৎপাদন কম হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে জানিয়ে মাসুদ করিম বলেন, আলুর দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে আগাম আলু তুলে ফেলেন। যে কারণে অনেক আলু অপরিপক্ব অবস্থায় থেকে যায়। যেগুলো ক্ষেতে থাকলে আরও পুষ্ট হতো। কিন্তু অপরিপক্ব অবস্থায় তুলে ফেলায় মোট উৎপাদনে এর প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি খারাপ আবহাওয়ার কারণে অনেক এলাকায় আলুর ক্ষেতে পোকা দেখা দেয়ায় সেখানেও আলুর উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এই সব পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে আলুর উৎপাদনে।
উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে ২০০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু!
তিনি বলেন, আলুর বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৃষি সম্প্রসারণের মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়গুলোর মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। মজুত পরিস্থিতির সবশেষ অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ফের মাঠে নামবে ভোক্তা অধিকার
আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে এর আগে আলুর মোকামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত কোল্ড স্টোরেজগুলোতে অভিযান চালায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সে সময় বেশ কিছু কোল্ড স্টোরেজকে জরিমানা করার পাশাপাশি অবৈধ মজুতকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তবে অবৈধভাবে আলু মজুত ও বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে যাদের আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছিলো, তাদের বেশিরভাগকেই কোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি।
এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা বলেন, বাজার কারসাজির দায়ে অভিযুক্ত এসব অপরাধীকে হাতেনাতে ধরা হলেও পরবর্তীতে প্রভাবশালী মহলের চাপে তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকারের কর্মীদের মধ্যে হতাশা আছে।
তবে আলুর অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে এবং বাজার অস্থিরকারীদের বিরুদ্ধে অতীতের মতই এবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ অভিযান চালানোর কথা জানিয়েছেন ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন।