মঞ্জুর মোর্শেদ : ৩০ জানুয়ারী, ২০২২ইং তারিখে এক প্রজ্ঞাপনে জারি হয় যেখানে বলা হয়, “পেশাদার চালকদের লাইসেন্সে কাল থেকে লাগবে ডোপ টেস্ট সনদ”। আর এরপর থেকে শুরু হয় চালক শ্রেণীর জনগণের রক্ত শুষে নেবার জন্য দালাল চক্রের নতুন আরেক খেলা!

উক্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পেশাদার গাড়ি চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের সময় প্রার্থীর আবেদনপত্রের সঙ্গে সরকারি হাসপাতাল থেকে করা ডোপ টেস্টের সনদ বিআরটিএতে জমা দিতে হবে।

পরিবহন চালকদের মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করতে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালকদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেই নির্দেশনাই বাস্তবায়ন হয়েছে বটে কিন্তু কাজের কাজ যা হয়েছে ‘ডোপ টেষ্ট রিপোর্ট’ একটা দালাল চক্রের জন্য কন্টাক্টারী ব্যাবসার ফসলে পরিনত এখন। এমতাবস্থায় অনেক ড্রাইভার দালালকে টাকা দিয়ে ডোপ টেষ্ট করাতে নারাজ!

বাংলাদেশের চালক সমাজের বৃহত্তম অংশটি মনে করেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের কিছু অঙ্গীকার ও বাস্তব জীবনের অস্তিত্ব আছে যা অত্যন্ত মূল্যবান এবং এমন একটি অবস্থানে দাঁড়িয়ে তাদের পক্ষে দালালকে টাকা দিয়ে ডোপ টেষ্ট রিপোর্ট নেয়া নিজেদের অস্থিত্বকে খাঁটো করা হবে বলে মনে করেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নে গিয়ে পরিস্থিতির শিকার একাধিক ড্রাইভার অভিযোগ দিয়েছেন একাধিক গণমাধ্যমে যে তারা জীবনে কোনদিন একটি সিগারেটে টান দেন নি কিন্তু ডোপ টেষ্ট রিপোর্ট পেতে দালালদের বাড়তি টাকা দিতেই হবে, না দিলেই রিপোর্ট বিপক্ষে যাবে….!”

(এক্ষেত্রে ইউটিউব ভিডিও নিউজেও এমন অনেক ভাইরাল নিউজ মিলে।)

এ ব্যাপারে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী গণমাধ্যমকে তখন বলেছিলেন, আমরা কাল (রোববার) থেকে বিষয়টি কার্যকর করব। কাল যারা পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসবে তাদের ডোপ টেস্টের সনদ লাগবে।”

কিন্তু এই ডোপ টেষ্ট ড্রাইভার শ্রেণীর লোকজন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, পদে পদে ও যারা প্রকৃত মাদকাসক্ত তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন টাকার বিনিময়ে! যেসব বিষয় দেখার কেই নেই!! থাকলেও তাদের মধ্যে কর্তাব্যক্তিরা সিন্ডিকেটের দালাল।

কেননা বাংলাদেশের যেকোন সরকারী দপ্তরের অবস্থা সরেজমিনে দেখা যায়, উক্ত দফতরের প্রধান কর্তাব্যক্তি ও ক্যাশিয়ার ব্যক্তিটি (থানায় যেমন ওসি ও মুন্সি) দুজনের দুজনার হয়ে কাজ করেন বিধায়‌ই একটি দফতর চলতে পারছে এবং আসলে কিভাবে চলে? তা বলাই বাহুল্য! বিষয়টা আশেপাশে কেউ টের‌ও পায় না এটাই বরং চিরাচরিত। অর্থাৎ দুজন শিক্ষিত মানুষের জীবন যাপন ব্যবস্থা ওই রকম একটি অনৈতিক সন্ধি বিচ্ছেদ করে চলে বলেই সচিবালয় থেকে ডাক্তারের চেম্বারে এক‌ই নিয়ম চালু আছে অর্থাৎ প্রতিদিন কোটি কোটি কাঁচা টাকা লেনদেন হয়ে চোখের সামনেই অথচ সবাই তা মেনে নিয়েছে স্বাভাবিক বলে, যার কোনো টেক্স-ভ্যাটের বালাই থাকে না। এমতাবস্থায় ডোপ টেষ্টকে কেন্দ্র করে যে ক’টি হাসপাতাল চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে সেই কয়টি হাসপাতাল কেন্দ্র করে‌ও গড়ে উঠেছে দালাল চক্র। ভুক্তভোগীদের মতে, “সেদিন ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালকদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছেন মনে হয় এইসব দালাল চক্রের সিন্ডিকেট প্রধানদের প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে। শেখ হাসিনার ঘোষণা করা ডোপ টেষ্ট বর্তমানে একটি ধান্দাবাজ দালাল চক্রের কর্মসংস্থানে পরিনতি হয়েছে। সেকারণে এদেশের পরিবহন শ্রমিকদের লাইসেন্স বানানো বা রিনিউ করতে গেলেই ঘামের পয়সা দালালদের দিয়ে আসতে হয় হাজার অনিচ্ছা সত্ত্বেও!

ডোপ টেস্টের রিপোর্ট যদি পজিটিভ (মাদক সেবনের আলামত পাওয়া গেলে) হয় বা তাতে কোনো বিরূপ মন্তব্য থাকলে পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু বা নবায়ন করা যাবে না বলে গত ১৩ জানুয়ারি ডোপ টেস্ট বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে বলার পর থেকেই পাসপোর্ট অফিসের দালালদের মতো এক শ্রেণীর দালাল চক্রের জন্ম দেয় সরকারী ও বেসরকারী কিছু লোকজন সিন্ডিকেট বানিয়ে। দালালদেরকে বাড়তি টাকা দিয়ে ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট সহ বিভিন্ন সরকারী সনদ দানকারী অফিসের মতোই দুর্নীতিবাজ ও চরিত্রহীন লোকেদের কারণেই জন্ম নেয়া দালাল চক্র জম্পেশ বর্তমানে কঠিন বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে হাসপাতালে ডোপ টেষ্টকে কেন্দ্র করে।

এই ডোপ টেস্ট সারা দেশে সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে এবং ঢাকা মহানগরীর ক্ষেত্রে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে করা যাবে বলে পরিপত্রে বলা হয়েছে। যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান এখন দালাল সিন্ডিকেটের দখলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *