যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি, হাকিকুল ইসলাম খোকন : গত শনিবার, ১৩ই এপ্রিল, ২০২৪ইং তারিখে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্য্যকরী কমিটির এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কের বাঙ্গালী অধ্যাষিত জ্যাকসন হাইটস -এর নবান্ন রেস্টুরেন্ট -এর পার্টি হলে।(খবর: বাপসনিউজ)
উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সহ-সভাপতি এম ফজলুর রহমান এবং যৌথভাবে সভাটি সঞ্চালন করেন দফতর সম্পাদক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান।
সভার শুরুতেই পবিত্র কোরআন, গীতা ও বাইবেল থেকে পাঠ করে শোনানো হয় এবং এরপরে বাংলাদেশর অভ্যূদয়ের সকল গনতান্ত্রিক ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদান, ৫২-ওর মহান ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৭৫-এর ১৫ই আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার বেদনা, ৩রা নভেম্বর জেল প্রকষ্ঠে নিহত জাতীয় ৪ নেতা হারাবার কথা এবং ২০০৪-এর ২১শে আগষ্টে গ্রেনেড হামলায় নিহত সকলের কথা স্মরণ করে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
উক্ত সভায় আলোচনার শুরুতে সভার সভাপতি এম ফজলুর রহমান উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সকলের সামনে জরুরী কার্য্যকরী সভার প্রেক্ষাপটটি তূলে ধরেন। তিনি বলেন, “ড. সিদ্দিকুর রহমান স্বৈরাচারী কায়দায় গত ১৩ বছর দল চালিয়েছেন। তিনি গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা করেন না। অনবরত মিথ্যাচার তার হাতিয়ার। আওয়ামী লীগ সহ সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ভেঙ্গে বিলীন করেছেন। তার স্ত্রীসহ মাত্র হাতে গোনা ৫/৭ জন লোক তার সাথে আছে। এমতাবস্থায় তিনি বর্ধিত সভার নামে শূন্যপদ পূরণের জন্যে আবার সভা করেছেন অবৈধ ভাবে ।কার্য্যকরী কমিটির মেজরিটি সদস্যের অনুমোদন ছাড়া কমিটিতে কোন পদ পূরণের কোন ক্ষমতা গঠনতন্ত্র তাকে দেয়নি।”
ড. সিদ্দিকুর রহমানের এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “অতীতেও তার এহেন পদ-বানিজ্য বৈধতা পায়নি, এবারও পাবেনা। আসূন সম্মিলিতভাবে কমিটির ৯৫% সদস্যের মতামত নিয়ে আমরা একটি রেজ্যুলেশন করে জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রেরণ করি এবং সম্মেলনের মাধ্যমে একটি নতুন কমিটির দাবী জানাই।”
পরে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বক্তৃতায় তাদের স্ব স্ব মতামত ব্যাক্ত করেন। কার্য্যকরী সদস্য আসাফ মাসূক বলেন, “কি করে সিদ্দিক সাহেব ড. মাসূদুল হাসানকে সহ সভাপতি করলেন? সেতো হাইকমান্ডের নির্দেশে শুরুতেই বহি:কৃত। পরে কিভাবে যেন উপদেষ্টা হন। আজ এখানে কাল ওখানে। আসলে তার কোন চরিত্র নাই, সবই ভূয়া।”
কমিটির অন্যতম আরেক সদস্য কায়কোবাদ খাঁন বলেন, “সিদ্দিুকুর রহমানের অপকর্মের জন্যে নেত্রীর সামনে আমরা হাজার কন্ঠে যেভাবে ‘নো মোর সিদ্দিক’ স্লোগান দিয়েছিলাম, প্রয়োজনে আবারও তা প্রতিধ্বনি হবে।”
এসময় কার্যকরী সদস্য খোরশেদ খন্দকার বলেন, “কোন মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না। আশা করি আজকের মিটিংয়েরটা হবে।”
এছাড়াও শিল্প ও বানিজ্য সম্পাদক ফরিদ আলম বলেন, “আমরা এবার সম্মেলন চাই। আপনারা শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হন আমরা আপনাদের সাথে আছি। আর কোন অনিয়ম দলের মধ্যে বরদাস্ত করা হবে না।” ত্রাণ ও সমাজকল্যান সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসন বলেন, “সিদ্দিকুর রহমান সভাপতি হয়ে ব্যবসা আর পদ বানিজ্য করতে করতে তার লাজ-লজ্জা লোপ পেয়েছে। এবার শক্ত হাতে তাকে দমন করতে হবে।”
সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান বলেন, “আমি তার সাথে দির্ঘ্যদিন কাজ করেছি। তার কোন নীতি আদর্শ নাই। সে কোনদিন ছাত্রলীগ- আওয়ামী লীগ করে নাই। আজ আপনারা দুই গ্রুপ একতাবদ্ধ হয়েছেন। এই ঐক্য ধরে রাখতে পারলে সফলতা আসবেই।”
এদিকে মানবাধিকার সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ বলেন, “দোষ আসলে ড. সিদ্দিকের না, আপনারা যারা সাবেক ছাত্রলীগের বড় বড় নেতা তারা আজ পর্যন্ত তাকে সহায়তা করে সভাপতি পদে টিকিয়ে রেখেছেন। সেপ্টেম্বর আসলে একটা চেয়ারের লোভে আপনারা তার সাথে চলে যান। ২০১৭ সাল থেকে সে মঞ্চে যেতে পারে না, সভাপতিত্বও করতে পারেনা আমাদের মত কিছু লোকের আন্দোলনের কারণে। বিভিন্ন স্টেট থেকে সম্মেলনের নামে যে চাঁদাবাজি করেছেন ড. সিদ্দিক তা জননেত্রী ফেরত দিতে বলেছেন কানাডায় কিন্তু আজও তিনি তা ফেরত দেননি। বরং সকল টাকা কোষাধ্যক্ষকে না দিয়ে তার স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগে রেখেছেন। আমরা তার সকল টাকা সংগঠনের তহবিলে ফেরত দানের দাবী করছি।”
সিদ্দিকুর রহমানের বিষয়ে আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. শাহ বখতিয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আসুন আমরা অবিলম্বে তলবী সভা ডেকে গঠনতন্ত্র মোতাবেক সিদ্দিককে বিদায় দেই এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে নেত্রী বরাবর পাঠাই নতুন কমিটি গঠনের জন্যে।”
দফতর সম্পাদক প্রকৌ. মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, “সীমাহীন অপরাধ করেছেন ড. সিদ্দিক যুক্তরাস্ট্র আওয়ামী লীগকে ভেঙেচুড়ে তছনছ করে। আজ প্রবাসে আওয়ামী লীগ একটি দূর্বল সংগঠন। যখন তখন দলের নেতাদেরকে শোকজ, বহি:স্কার ইত্যাদী করে প্রকট অনৈক্য তৈরী করে বিএনপি-জামাতের হাতকে তিনি শক্তিশালী করেছেন। ফলশ্রুতিতে তাদের হাতেই নিগৃহীত হয়েছেন ওয়াশিংটন ডিসিতে। আমরা দলের এই অনুপ্রবেশকারী সূবিধাবাদী চরিত্রের লোকের হাত থেকে মুক্তি চাই।”
এছাড়াও উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ নাথ বলেন, “অনেক হয়েছে এবার আসূন ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তিকে বিদায় করে নতুন যাত্রা শুরু করি।”
উপদেষ্টা ড. প্রদীপ রঞ্জন কর বলেন, “বিগত ১৩ বছর যাবৎ আমরা আন্দোলন করে যাচ্ছি এই চরম মিথ্যাবাদী সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। সে ১৫ই আগষ্ট নিয়েও মিথ্যাচার করেছে। সে বলেছে, ওইদিন নাকি সে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিল করে আটক হয়েছিলো। কত বড় মিথ্যাচার এটি! আমি তখন সেখানকার ছাত্রনেতা। জিয়ার আমলে সে সরকারী বৃত্তি নিয়ে ইউকে’তে যায়।” তিনি বলেন, “গত এপ্রিলে নেত্রী ভার্জিনীয়াতে আমাদেরকে বলেছেন, কমিটি করে পাঠাও আমি সই করে দেবো।”
সভায় যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী বলেন, “ড. সিদ্দিক চরম মিথ্যাবাদী। সে আমাদের কাছ থেকে ডিভাইড এন্ড রুল শিখে এখন আমাদের উপরই প্রয়োগ করছে। তার ডাকা আগামীকালকের মিটিংয়ে দেখি কারা যায় এবং পদ নেয়। কেউ গেলে সে হবে খন্দকার মুসতাকের খালাতো ভাই।”
এ সভার সভাপতি ও দলের সহ-সভাপতি এম ফজলুর রহমান তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “আমরা আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আমাদের দাবী রেজ্যূলেশন আকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রেরণ করবো যাতে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটা নতুন কমিটি হয়। যাকেই নেত্রী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করেন তা আমরা মেনে নেব এবং একসাথে কাজ করবো।” এছাড়াও তিনি বলেন, “অনেকে আজ এ সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি ঈদ পরবর্তী পারিবারিক প্রোগ্রাম ও পহেলা বৈশাখের কারনে কিন্তু সকলেই টেলিফোনের মাধ্যমে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন যারা ( ৯৯জন) ইতিপূর্বে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।”
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কার্য্যকরী কমিটির ওই জরুরী সভায় বক্তব্য রাখেন- যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা শহিদুল ইসলাম, স্টেট আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ আতিক, আওয়ামী লীগ নেতা আকতার হোসেন, শেখ হাসিনা মঞ্চের সভাপতি জালাল উদ্দিন জলিল, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রুমানা আখতার, ছাত্রলীগ নেতা শেখ মো: জুয়েল, যুবলীগ নেতা খন্দকার জাহিদুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা মো: জাহিদ মিয়া প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *