এই ফেসবুকের আজ ফেসবুকের একটি ভাইরাল পোস্ট হুবাহুর সাথে যোগাযোগ করুন:
আপনি হার্ট তারা কেউ না।
এটাকে মানুষ বলে?
৬ অক্টোবর ২০১৯, রাত ৮.১৩।
বুয়েট শকে বাংলা হল ১০১১ নম্বর কক্ষে ঘুমাচ্ছে একটা ছেলে। একই ব্যাচের তানিম সহ তিনজন এসে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে।
— বড় ভাইয়েরা তোকে ডাকছে। ২০১১ এ আয়।
— কেনো?
— মানুষই দেখতে পাবি।
— কখন করতে হবে?
— এখনই। তোর ল্যাপটপ এটা?
— হা।
— মোবাইলটাও দে।
–কেনো?
— দিতে দিতে তাই দিবি। ভাইরা ভাবনা।
মোবাইল, ল্যাপটপ এবং ছেলে ছেলে নিয়ে তারা রওনা দিলো ২০১১ নম্বর রুমের উদ্দেশ্যে। এইটা ছেলে কোন সাধারণ ছেলে না। বুয়েটের প্রথম ২০১৮ সালে এই ছেলের নাম আবরাহাদ রাবি। অসাধারণ মেধাবী এই ছেলে ঢাবি ‘ক’ পরীক্ষায় ১৩ উত্তম হয়েছিল। চান্স শেয়ারলো ঢাকা ওয়ে। বড় ভাইদের ডাক ২০১১ নম্বর রুমের দিকে বাড়ানো আববার তখন না, “অন্ত মহাকাল এই যাত্রা, অসীম মহাকাশের অন্তে”।
আবের অপরাধ ছিল তাদের প্রতীক! উচ্চ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কটাস সে। আবেরেই রুমেট মিজানের সন্দেহ, “আবার শিবির করে।” তাই বুয়েট অনুমতি আজ এই দিতে. কক্ষে ঢোকার পরই মোবাইল আর ল্যাপটপ চেক করা শুরু করে তারা। রবিন ক্ষিপ্তপট
–ভারী আয়। চশমা খোল।
আবরার চশমা খোলার পরেরবিন প্রচন্ড জোর তার গালে খেলা চাড় মারে। হাত দিয়ে গাল চেপে পড়ে আবরার। এর মধ্যে মোরশেদ কাঠের ক্রিকেট দল নিয়ে আসে। ইফতি রবিনের মতোই থাপ্র মারে আবরাকে। তাকে রাখা। পিঠে, পায়ে, পায়ের তালুতে, হাতে সর্বশক্তিতে মারাতে থাকে। প্রচন্ড শক্তিতে মারা যাওয়ার কারণে কয়েক বাড়ি পরই দুইটি হতে পারে। আবরাতক্ষণ চিৎকার দিতে লুটে আসন মেঝেতে। সেই চিৎকার আশেপাশার রুমের জানালা ভয়ে দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। এহতেসামুল, রাব্বি ও তানিম গাড়ি নতুন করে নিয়ে আসে। এই অনিক কোম্পান দেওয়া কথা। একাধারে মাটি লুটতে আবিরের শরীর দেখতে থাকে। প্রায় ৫০টি করে অনিক থেকে ৬০টি সমস্যা হয়েছে। মেঝেতে পড়ে কাতরতা থাকে আবরের শরীর। সঙ্গে মুজাহিদ ও শামীম স্কিপিং রূপ (মোটা দড়ি) দিয়ে মারতে শুরু করে। আবরার তখন বাঁচার জন্য আকুতি-কুটি করে কিন্তু মন গলেনি। মধ্যেই মনুষ্যত্ব ফিরে আসে। আমার সামনে এগিয়ে এসে অনিক ক্রিকেট থেকে কম্পিউটার আবার বিভিন্ন সর্বশক্তিমান মারাতে থাকে।
রাত দিনটা। অমানুষিক মারতে মেঝেতে লুট গোঙাতে থাকে আবরা। ইফতি ধমক দিয়ে টেনে দাঁড় করায়। তারপর আপনি শক্তিতে চাড় মারে। আবার টাকা দিয়ে পেটে থাকে।
রাত এগারোটা। ২০১১ নম্বর কক্ষে উপস্থিত হয় এস এম মাহমুদ সেতু। এসে দাম কর,
— কি অবস্থা? কিছু বাইর হয়েছে?
— না, কোন কিছু বলতে চাই না।
–মারতে থাক।
সেতুর নির্দেশে আবরাকে আবার ক্রিকেট কোম্পানি, স্কিপিং রোপ মারা শুরু হয়। ইফতি ও অনিক আবরাকে ক্রিকেট দল মারতে থাকে। হাতের কনুই দিয়ে পিঠে প্রচন্ড চালাচ্ছে। একই হয় তখন বিরাগ প্রচান্ডে শক্তি আবরাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি চড়-থাপ্পড়, লাথি মারাতে থাকেন। আবরে কুঁকড়ে শরীর থেকে তখন শুধু গোঙ্গানি বারবার জানালো।
রাত এগারোটা। কিছুক্ষণের জন্য রুম থেকে বের হওয়ার আগে অনিক ও রবিন অন্যদের বলে,
— তোরা আর কাছ থেকে যেমন তথ্য বের কর।
এই মনির ক্রিকেট স্টেপম্প দিয়ে আবরাকে পেটে শুরু করে। তাবাখর, নাজমুস সাদাতরুল, তানিম, জেমি আবরাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। ইউনিভার্সিটি থেকে আবার রুমে ব্যবহারে অনিক কর্পোরেশনের কম্পিউটারিং। আরও ৪০ থেকে ৫০টি করে। মুমূর্ষ আবরার তখন বমি ও প্রস্রাব করে। ব্যথায় চিকার করার মতো শক্তিও অবশিষ্ট নেই। বাঁচার জন্য ইশারা-ইঙ্গিতে কাকুতি-মিনতি করে। নিঃশ্বাস বন্ধ উপক্রম হয়। বিশ্বাসী সম্প্রদায় ইফতি আবরে মাথা বালিশ দেয়। পর পর আরো কয়েকবার বমি করে আব্বা। এমন আবরাকে হলের বাথ রুমে নেওয়া হয়। দেখতে মুছে জামা কাপড় বদলানো হয়।
রাত বারোটা। ইফতি ও মেহেদীর নির্দেশে আবরাকেধরি করে ২০০৫ নম্বর কক্ষে আসে। ইফতি মোশাররফ হলের মেস বয় জাহিদ হাসানকে ডেকে আসে। ২০১১ নম্বর রুমে আবেরে বমি তাকে পরিষ্কার করানো হয়।
২০০৫ নম্বর কক্ষে আনার পর ইফতি বলে,
— তোরাথেন আর থেকে তথ্য বাইর কর। বুয়েতে কে শিবির করে।
দুই-একজন আবরের মুমূর্ষুর অবস্থা খারাপ ভয়ে ভয়ে বলুন,
— ভাই, অবস্থা বেশ। প্রয়োজন নেওয়া।
এই কথা প্রচারের পর রবিন তেলেবেগুনে জ্বলে বলন।
— যাও তাই কর। এই সব নাটক। ভং ধরছে। তোরা শিবির চেনস না। শিবির চেনা কষ্ট।
রবিনের রেগেঠা ও খারাপ মানুষ ভয়ে জলদি আবরাকে আবার ইন্টারগেট শুরু করে। কিন্তু আবরের মুখ থেকে কোন শব্দ আসে না। নিশ্চিন্ত, নিস্তেজ পড়া শরীর কোন সাড়া না দেওয়া ক্ষান্তি আবার পার্টিতে পেট দেওয়া শুরু হয়।
রাত দুইটা। আবরাকে হল থেকে বের করে পুলিশ দেওয়া হবে। মেহেদী চকবাজার থানা পুলিশকে দেয় “হলে একটা শিবির ফোন দেয়, নিয়ে যান।” চকবাজার থানা পুলিশ একটা তাহল দল শেরে বাংলা হলের গেটে। কিন্তু তাদের পুলিশ গেইট থেকে পুলিশকে দেওয়া হয়।
রাত আড়াইটা। ইফতি, মুজাহিদ, তাবাখরুল ও তোহাক নিশ্চল আবরাকে তোশকে হলের দোতালার সিঁড়িতে যোগদান করা। সিঁড়ির টেরটি আলোয় আবরের খালি লাইক তখন ব্যক্তি কালো কালো দাগ। স্বাস্থ্য শরীরে কম্পিউটারের ঘরের কারণে কালশিটে পড়ে আছে। চোখ বন্ধ। তবে চেহারায় কোন যন্ত্রণার ছাপ নেই। সেখানে প্রশান্তির চিহ্ন। নিস্তুর অমানুষদের এই পৃথিবী ছেড়ে স্রেস্তার সান্নিধ্যে এগিয়ে প্রশান্তি।
রাত তিনটা। খুনীরা বুয়েটের প্রকাশ ও অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনে। আবর দেহ পরীক্ষা করতে সে মারা গেছে। তাড়িঘড়ি করে ক্রিকেট কোম্পান, তোষক, বালিশ, আবের ল্যাপটপ, চাপাতি হলের ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে বুয়েট সুবিধা সহসভাপতি মুথাসিম ফুয়াদ এর কক্ষ নিয়ে যেতে হবে। বুয়েট হাসান আপনাকে উত্তরসেলড়ি মেহেদী রা আবরে মরদেহ হলের নামকরণের পর তা ঘড়িতে আপনাকে চাপ দিতে হবে। খুনীরা নেওয়ার জন্য আবরারে লাশ গুম করা হবে। কিন্তু কিছু ভুল ফেলায় তার নতুন করতে হবে। আবের লাশের সাথে কিছু মাদক গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আবরেপাঠদের দৃঢ়প্রচার সেই অপচেষ্টাবিদ্ধ হয়।
৭ অক্টোবর ২০১৯। ভোরের আলো ফোটার বুয়েটরা উপহার পায় এক সতেজ তাজা লাশ। পাঁচ ঘণ্টা অমানুষিক মনের মরদেহ ফার্সাটার সব জায়গায় লাল আর কালো মিল। দেশের মাধ্যমে ফেসবুক দেওয়াটাস আবরার ফাহাদ রাব্বিকে কোরন্ত মহাকাশের পথ।
©লেখা : মারুফ হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।